174081

মাম্পস হলে বাচ্চাকে নরম খাবার দিন

গাজী খায়রুল আলম: মাম্পস রোগটা ভাইরাসঘটিত রোগ। এই ভাইরাস আক্রমণ করে মুখমন্ডলের ভেতরে থাকা লালাস্রাবী গ্রন্থি(Salivary Glands) আর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতেন্ত্রকে। সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় কানের দু‘পাশে থাকা প্যারোটিডে সংক্রমণ ঘটে একদিকের গাল ফুলিয়ে ফেলে। ক‘দিন বাদেই অন্রদিকের প্যারোটিড আক্রান্ত হয়ে ফুলে যায় অন্যদিকের গাল। সবার এরকম দু‘দিকের গ্ল্যান্ড আক্রান্ত হয়না, কারও কারও হয়। আশেপাশে থাকা অন্য দুই লালাস্রাবী গ্রন্থি সাবলিঙ্গুয়াল আর সাবম্যান্ডিব্যুলার গ্ল্যান্ডও আক্রন্ত হতে পারে মাম্পসে, তবে তুলনায় এগুলোতে সংক্রমণ ঘটে কম।

বাতাসের মধ্যে শরীরে ঢোকে মাম্পসের ভাইরাস। গাল ফোলার পাঁচ-ছয় দিন আগে থেকে ফোলার শুরু হবার পর বারো-তেরোদিন-একটানা ১৭-১৮ দিন মাম্পসে আক্রন্ত বাচ্চা রোগ ছড়ায় অন্য বাচ্চার শরীরে। বেশি আক্রান্ত হয় পাঁচ থেকে পনেরো বছরের ছেলেমেয়েরা। তবে এর আগেপরেও মাম্পস হতে পারে। একবার রোগটা হলে শরীরে রোগটার বিরোদ্ধে যে প্রতিরোধ-ক্ষমতা(Immunity) গড়ে ওঠে তা প্রায় আজীবন স্থায়ী। দ্বিতীয়বার মাম্পসে আক্রান্ত হবার ঘটনা তাই বিরল।

জ্বর, সারা শরীরে যন্ত্রণা, গালের একপাশে বা দ‘পাশে ফোলা ভাব, হাঁ করতে কষ্ট-মাম্পসের উপসর্গ বা লক্ষণ এগুলোই। মাম্পসে সবচাইতে বেশি কষ্ট হয় মুখ নিয়ে। মুখ খুলতে, জোরে কথা বলতে, হাঁ করতে বা খাবার চিবোতে গেলে চোয়ালের হাড়ের গোড়ায় তীব্র ব্যথা হতে থাকে।মাম্পসে জ্বর বা ফোলা বাদ দিলে বাচ্চারদের মূল সমস্যা হল শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতে পারেনা। ভাইরাস আক্রমণে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই এই সময় প্রয়োজন নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো।

মাম্পসে বাচ্চাকে যা খাওয়াবেন

১। ফোলাভাব কম থাকলে বাচ্চাকে খানকটা শক্ত খাবার দিন। ফোলা বেশি থাকলে জোর দিন অর্ধতরল ও তরল খাবারের ওপর।

২। গলা ভাত, ডাল, বেশি সেদ্ধ খিচুড়ি, বেশি সেদ্ধ সবজি ভাল ভাবে চটকে দিন। সঙ্গে থাক ডাল, ও নানা সবজি দিয়ে তৈরি ভেজিটেবল স্যুপ।, মাছের ঝোল বা মাংসের স্ট্যু।

৩। অর্ধেক সিদ্ধ ডিম বা ডিমের পোচ নরম হওয়ায় মাম্পসের রোগীর পক্ষে আদর্শ। খুব কম চিবিয়ে খেয়ে নেওয়া যায় বলে এরকম খাবার বাচ্চা সহজেই খেয়ে নেবে, পুষ্টিও পাবে।

৪। বাচ্চা খেতে না চাইলেও দিনে অন্তত চারবার খাবার খাওয়ান। বিকেলের দিকে বাচ্চাকে যে কোননও টাটকা বেশি পাকা মরসুমি ফল আম, আতা, পেঁপে, কলা পাকা, পেয়ারা চটকে বা পিষে খাওয়ান।

৫। খাওয়াতে পারেন দুধ দিয়ে বানানো নরম সুজির হালুয়া, দুধ আর দই।

৬। খাওয়াতে পারেন দুধের সঙ্গে খই, কলা আমসত্ত্ব মিশিয়ে। বিকেলে নরম ফল, সকালে হাফ বয়েলড ডিম বা ডিমের পোচ।

৭। খাওয়াতে পারেন গরম দুধের সঙ্গে কর্নফ্লেক্স মিশিয়ে কলা চটকে। অথবা হালুয়া খানিকটা গরম দুধে গুলে নরম করে।

তাছাড়া বাচ্চার মুখের ভেতরকার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন।মাম্পসের আলাদা কোনও টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। M.M.R. ভ্যাকসিন মাম্পস, হাম ও রুবেলা তিনটি রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলো। এই টিকা দিলে আর আলাদা করে বাচ্চাকে হামের টিকা দেওয়া লাগেনা। যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাচ্চাকে এক বছর বয়সে এরকম ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.