173950

যৌতুকের টাকা ফেরত, বিপ্লব ঘটালেন ঝাড়খণ্ডের মুসলিমরা

নূসরাত জাহান: ঝাড়খণ্ডের পালামু এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। এ বিপ্লব যৌতুকের বিরুদ্ধে। ঝাড়খণ্ডের কয়েক শ’ মুসলিম এরই মধ্যে তাদের ছেলের বিয়েতে নেওয়া যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়ে এ বিপ্লব ঘটিয়েছে। গত এক বছরে প্রায় ৮০০ পরিবার বিয়েতে যৌতুক দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি তারা যৌতুকের সেই টাকা ফেরত দিয়েছে। এর পরিমাণ ছয় কোটি রুপিরও বেশি।
ভারতে আইন অনুযায়ী যৌতুক নেওয়া বেআইনি। তারপরও যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ নির্যাতনের প্রায়ই শোনা যায়। সেই দেশেই এমন বিপ্লব ঘটাচ্ছেন মুসলিমরা। পিছিয়ে থাকা রাজ্য হিসেবে পরিচিত রয়েছে ঝাড়খণ্ডের। তারাই এই বিপ্লব ঘটাচ্ছেন।
রাজ্যের মুসলমান পরিবারগুলোকে ওই এলাকার অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যৌতুকের টাকা ফেরানোর কাজ শুরু করেছে। তবে এই কাজের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা হাজি মুমতাজ আনসারি। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে আমার কাছে এসে দুঃখ করে বলতেন যৌতুকের টাকা যোগাড় করতে না পারায় মেয়ের দিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েছেন। ধারদেনা তো আছেই, শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করে পণের টাকা যোগাড় করছেন। সেই সব ঘটনা শুনে আমার মনে হযয়েছে এসব আর হতে দেওয়া যায় না। বন্ধ করতে হবে এই পণ নেওয়ার বেআইনি প্রথা। এরপর থেকেই এর কুফল সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে শুরু করি।’
গত বছর এপ্রিল থেকে যৌতুক বিরোধী কার্যক্রম শুরু কির। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে মেয়ের পরিবারের টাকা ফিরিয়ে দেয় ৮০০ পরিবার।
মুমতাজ আনসারি বলেন, ‘মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও যৌতুক বিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসছে। তারাও টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন।’
ওই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামেরই এক ছেলের সঙ্গে। যৌতুক ফেরত দেওয়ার এ কাজ শুরু হওয়ার পর ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ৫০ হাজার রুপি।
এ প্রসঙ্গে জাকির বলেন, ‘বড় দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের বিয়ের সময়ে নগদ অর্থ না দিলেও মোটরসাইকেল কিনে দিতে হয়েছিল। সঙ্গে আসবাবপত্র, বাসত-কোসন তো ছিলই। সেগুলো তো আর ফেরত পাওয়া যায়নি। তবে ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়েছে।’
ঝাড়খন্ডে পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ সমস্যা নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রেকথ্রু। সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহিনী ভট্টাচার্য বলেন, ‘যিনিই এই কাজ শুরু করে থাকুন না কেন, খুব ভালো কাজ করেছেন। যদি কাজটি ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বহু মেয়ে যৌতুকের অত্যাচারের থেকে মুক্তি পাবে।’ সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.