আন্দামানে ঘুরতে গিয়ে এক জরোয়া শিশুর প্রাণ বাঁচালের কলকাতার চিকিৎসক
ডিসেম্বরে বড়দিনের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা রেজিস্ট্রার কুন্তল। তিনি ২৫ ডিসেম্বর অন্য পর্যটকদের সঙ্গে দক্ষিন থেকে উত্তর আন্দামানে যাচ্ছিলেন বেড়াতে। পথে বারাংটাঙে বার্জে ওঠার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিল পর্যটকদের গাড়ি। সকাল তখন ৬টা।
কুন্তল জানান, পর্যটকদের মধ্যে কোনও ডাক্তার আছেন কিনা সেখানে দাঁড়িয়ে বনকর্মীরা খোঁজ করছিলেন। তখনই নিজের পরিচয় দিয়ে কারণ জানতে চান কুন্তল। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা বন আধিকারিক জানান, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে স্থানীয় জারোয়া সম্প্রদায়ের এক শিশু। কুন্তল জানান, ওই কর্মীদের সঙ্গে বনদফতরের অফিসের কাছে গিয়ে দেখেন, এক জারোয়া মহিলা তাঁর মাসদুয়েকের সন্তানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বনকর্মীদের ইঙ্গিতে ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে কাছে এগিয়ে আসেন। ঠান্ডার মধ্যেও শিশুটির গায়ে কোনও জামাকাপড় ছিল না। শিশুটির তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কুন্তল বলেন, ‘‘আমি গাড়িতে ফিরে গিয়ে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ওড়না এবং কাপড় নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে তার মায়ের শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দিই। তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ দিই। বনকর্মীদের সাহায্যে সেই ওষুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি জারোয়া মা’কে দেখিয়েও দিলাম।’’
এরপর ২৮ ডিসেম্বর যখন ওই রাস্তা দিয়ে কুন্তলরা ফিরছেন তখন দেখেন, পথ আটকে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন জারোয়া শিশু। তাদের হাতে ছিল পাথরের টুকরো। আগের দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বনকর্মী কুন্তলকে গাড়ির কাচ নামাতে বলেন।
কুন্তলেরা দেখেন, সেই জারোয়া মহিলা শিশুটিকে কোলে নিয়ে এগিয়ে এসে কুন্তলকে একটা ছোট শঙ্খ উপহার দেন। কুন্তল বলেন, ‘‘বুঝলাম, শিশুটিকে সারিয়ে তোলার ‘কৃতজ্ঞতা’র উপহার। কিন্তু জারোয়াদের কিছু দেওয়া বা তাঁদের কাছ থেকে কিছু নেওয়া উচিত নয় বলে ইতস্তত করছিলাম। কিন্তু বনকর্মীরা জানিয়েছিলেন, ওটা না নিলে অসম্মান হবে। ইশারায় আমাকে নিতে বলেন। আমি আর অন্যথা করিনি।’’