ফুসফুস ভাল রাখার সহজ উপায়

যখন কেউ এ কথা জিজ্ঞাসা করেন, আপনার উত্তরটা ‘হ্যাঁ’-ই হয়! কিন্তু, আপনার ফুসফুস? মুশকিল হল, সে বেচারার উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ নাও হতে পারে! আসলে ও যে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারে না। সমীক্ষা বলছে, ধূমপান না করেও শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দূষণের কারণে বহু মানুষের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দূষণ ও ফুসফুস:
ফুসফুস এমন একটি অঙ্গ যা পরিবেশের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। শুধু বাইরের দূষণই নয়, ঘরের মধ্যেও দূষণে আক্রান্ত হয় ফুসফুস। ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির ধোঁয়া, বিভিন্ন শস্য, ফসলের রেণু যেমন ফুসফুসের ক্ষতি করে, তেমনই ঘরের মধ্যে জমে থাকা ধুলো, রান্নার স্টোভের গ্যাস থেকেও ক্ষতি হয়।

এ ছাড়াও ক্ষতি হয় বাতাসে ভেসে থাকা ধূলিকণা থেকে। ধূলিকণা বিভিন্ন আকারের হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় ছোট আকারের ধূলিকণাগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসনালিতে তা জমতে জমতে ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

রিস্ক ফ্যাক্টর:
• শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
• পরিবারে কারও ফুসফুসের সমস্যা থাকলে, অল্প শ্বাসকষ্ট থাকলে এবং ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি।সূত্র: সংবাদ প্রতিদিনি

অসুখ:
আগেই বলা হয়েছে, ফুসফুসের বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রেই দূষণের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ সিওপিডি), ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ অনেকটাই দায়ী। শ্বাস নেওয়ার সময়ে শ্বাসনালীর ওপরের দিকেই বড় ধূলিকণা আটকে যায়। কিন্তু ছোট ধূলিকণাগুলো শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে প্রদাহ তৈরি করে এবং শ্বাসনালীর প্রতিরোধ স্তরকেও নষ্ট করে দেয়। এই রোগের নামই ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ।

লক্ষণ:
• ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সিদেরই হয়। অনেক দিন ধরে চলতে থাকা শ্বাসকষ্ট হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, কাশির সঙ্গে কফ ওঠা, ভোরের দিকে বেশি কাশি, অল্পতেই হাঁফিয়ে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ।

• অ্যাজমার ক্ষেত্রে কাশি হয়, বাড়াবাড়ি হলে শ্বাস নিতে গেলে সাঁই-সাঁই শব্দ হয়।

• ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ অনেক দেরিতে দেখা যায়। শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে বলে এই ক্যানসারে মৃত্যু অনেক বেশি। অল্প অল্প কাশি যা সারতে চায় না, কফের সঙ্গে ৭-১০ দিন ধরে অল্প রক্তপাত ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ।

দূষণ থেকে বাঁচতে:
• দূষণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার জরুরি। মাস্ক উচ্চমানের হওয়াই বাঞ্ছনীয়। N95 মাস্ক এক্ষেত্রে একেবারে ঠিকঠাক।

• দুপুর, বিকেলের দিকে পরিবেশে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। তাই সকাল সকাল বাইরের কাজ সেরে ফেলা উচিত।

• যাঁরা কয়লাখনি, ট্রাফিক, পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন তাঁদের মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

• ঘরে মশা মারার তেল, ধূপ ব্যবহার না করাই ভাল।

• বাচ্চার সামনে ধুলো ঝাড়া, ধূমপান করা চলবে না।

• বাড়ি রোজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।

• শিল্পাঞ্চলে বা পথে পথে ঘুরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের নিয়ম করে ছ’মাস অন্তর ফুসফুসের আর হার্টের চেক-আপ করানো জরুরি।

বয়স্কদের জন্য:
ক্রনিক ফুসফুসের রোগ, হার্টের অসুখ, কিডনি, ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে ৫০ বছর বয়সের পর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিতে হবে। ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সুস্থ থাকলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন দুটি নেওয়া উচিত।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.