271874

গোবেচারা চেহারার শিয়াল হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠার রহস্য

প্রায়ই টেলিভিশন সংবাদে কিংবা পত্রিকার পাতায় শিয়ালের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর খবর পাই। আবার গোবেচারা এবং কুকুরের মতো দেখতে এই প্রাণীকে পোষ্যের তালিকায় রাখেন অনেকে। শিয়ালের প্রভুভক্তির নজিরও আছে অনেক। তবে এই শান্ত শিষ্ট বন্য প্রাণীর হঠাৎ করেই কেন মানুষের উপর চড়াও হয়। এটা রহস্যই বটে।

নিশাচর বন্য এই প্রাণীটি একদমই হিংস্র নয়। লোকালয় থেকে সবসময় খানিকটা দূরেই থাকে এরা। শুধুমাত্র খাবারের অভাব দেখা দিলেই সন্ধ্যা বা রাতের বেলা লোকালয়ে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। বনে খাবার না পেলে লোকালয়ে হানা দিয়ে হাঁস-মুরগি ধরে নেয়।

আত্মরক্ষা ছাড়া শেয়াল কোনো মানুষের ওপর হামলা চালায় না, অবশ্য জলাতঙ্ক রোগ হলে এদের আচরণ কিছুটা বেপরোয়া থাকে। আর এই সময়েই মানুষের হাতে এই প্রাণীটির মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ শেয়ালই পাতিশেয়াল ও ছোট আকারের খেঁকশেয়াল প্রজাতির, যা দেখতে অনেকটা দেশি কুকুরের মতো, গায়ের লোম বাদামি এবং লেজ কালো।

ক্যানিডি পরিবারের স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বিচারে গাছপালা ঝোপঝাড় কাটার পাশাপাশি গর্ত ভরাট করে ফেলায় অন্য সব প্রাণীর মতো শেয়ালের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে।

আদুরে এই প্রাণীর প্রভুভক্তিরও নজির রয়েছে

আদুরে এই প্রাণীর প্রভুভক্তিরও নজির রয়েছে

শেয়ালের বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ যদি থাকতো, তাহলে সে লোকালয়ে আসতো না। কারণ মানুষ তার খাবার নয়। শেয়াল বরং ইঁদুর, পোকামাকড়, মৃত প্রাণী, পচা-গলা এক কথায় সব ধরণের খাবার খেয়ে পরিবেশকে ভালো রাখে। আর এই প্রাণীটি রোগ ছড়ায় না। তাই পরিবেশে ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় শিয়াল অনেক প্রয়োজন। এছাড়া, ইঁদুর-পোকামাকড় কমে যাওয়ায় শিয়ালের লোকালয়ে হানা দেয়ার অন্যতম কারণ বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

বর্তমানে আমাদের পরিবেশে ইঁদুর, পোকামাকড় কমে গেছে। খাবারের অভাবেই তারা লোকালয়ে আসে। মানুষ এদের দেখে ভয় পায়, তাড়া করে। মানুষের ভয় দেখে তারাও আতঙ্কিত হয়ে যায় যা এই হিংস্রতাকে উস্কে দিতে পারে। কিন্তু শিয়াল স্বভাবে হিংস্র নয়। এক্ষেত্রে এই প্রাণীগুলোর উপযুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি গ্রামবাসীকে সচেতন করে তোলার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.