271628

বিয়ের পর নারীরা নয়, এ দেশের পুরুষরা চলে যায় শ্বশুড়বাড়ি!

একমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকেরা এই দেশটিতে ফ্রি ভিসা পান। অর্থাৎ আপনি যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে এই দেশে যেতে আপনাকে কোনো ঝামেলাই পোহাতে হবে না। সেখানে ঘুরতে গিয়ে কোনো কারণে যদি হাসপাতালে যেতে হয়, তাহলে আপনি দেখবেন সেখানকার ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে সব কর্মচারী মেয়ে।

তখন আপনি হয়তো ভাববেন, আপনি কোনো মহিলা হাসপাতালে ঢুকে পড়েছেন। কিন্তু না, সেখানে নারী-পুরুষ সব রকমের রোগী দেখতে পাবেন আপনি। আসলে এদের বেশিরভাগ হাসপাতাল নারীরা চালান। শুধু কি হাসপাতাল? হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে দেখবেন, দোকানপাটও চালাচ্ছেন নারীরা।

থিম্ফু, ভুটান

থিম্ফু, ভুটান

হোটেলের মালিক, যানবাহনের ড্রাইভার, রান্নার কুকসহ যাবতীয় কাজে নারীরাই সর্বেসর্বা। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, পরিবারের, বাড়ির, গবাদি পশু এবং জমির মতো সব সম্পত্তির মালিকানা পায় পরিবারের বড় মেয়েরা।

এতে করে ভাবতে পারেন, তবে কি এখানে পুরুষ কম আছে নাকি? তাও নয়। এদেশে ৫৩ শতাংশই পুরুষ। আসলে দেশটিতে সবাই কাজ করেন। নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই সেখানে। তবে তারা নারীদেরকে বেশি সম্মান দেয়। এই কাজটি শুধু পুরুষদের বা এই কাজটি শুধু নারীরাই করবে, তা কোথাও ভাগ করা নেই।

কি অবাক হচ্ছেন? নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোন দেশের কথা বলছি? এরকম দেশ কি কোথাও আছে? এই দেশটির নাম ভুটান। চলুন তবে ভুটান সম্পর্কে আরও কিছু অবাক করা ঘটনা জেনে নেয়া যাক-

নারী-পুরুষে নেই ভেদাভেদ

নারী-পুরুষে নেই ভেদাভেদ

ভুটানে ঘুরতে গিয়ে আপনি কখনোই দেখতে পাবেন না, কেউ রাস্তায় শুয়ে দিন কাটাচ্ছে। যেমনটা আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়। বাড়িঘর, থাকার জায়গা না থাকায় রাস্তায় মানুষকে দিন কাটাতে হয়। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ হারিয়ে যায় তবে তাদের খানিকক্ষণের জন্য দেখতে পাবেন।

আবার কারো বাড়িঘর ভেঙে গেলে বা কোনো কারণে বাড়িঘর ছাড়া হলে তাদেরকে শুধুমাত্র রাজার শরণাপন্ন হতে হয়। তার কাছে গেলে তিনি জমি ও বাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। যাতে করে তারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।

ভুটান

ভুটান

তাছাড়া ভুটানের হাসপাতালে গেলে দেখতে পাবেন, এদেশের প্রতিটি নাগরিকেরই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকার আছে। পুরনো ঐতিহ্যবাহী ও শাস্ত্রীয় ওষুধ উভয়ই প্রচলিত এবং একজন ব্যক্তির চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

এর থেকেও বেশি অবাক করার বিষয় হচ্ছে, যেমনটা আমি আগে বলেছিলাম। এখানকার ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে সব কর্মচারীরাই মেয়ে। এদেশটিকে একটি মেয়েপ্রধান দেশ বলা চলে। মেয়েরা এখানে তাদের ন্যায্য সম্মান পায়।

নেই ট্রাফিক লাইট

নেই ট্রাফিক লাইট

ভুটানে কোনো ট্রাফিক লাইট নেই। তবে এটি মানুষের জন্য কোনো সমস্যা নয়। এখানে নেই কোনো যানজট। এখানে ঘটেও না কোনো দুর্ঘটনা। গাড়িতে হর্ন বাজায় না। রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ি থেমে যায়।

সব রাস্তার সাইডগুলো হাতে অংকন করা। সত্যি বলতে, এখানকার রাস্তাগুলো বেশ চমৎকার। এই দেশের মানুষের লেখাপড়ার জন্য কোনো খরচই নেই। অর্থাৎ ছোট থেকে বড় সবার লেখাপড়ার খরচ সরকার বহন করেন।

নারী ড্রাইভার

নারী ড্রাইভার

ভুটানে নেই কোনো দূষণ। কারণ এখানকার ৭২ শতাংশ জায়গায়ই বনাঞ্চল। দেশে তামাক চাষ এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করার একটি আইন প্রণয়ন আছে। দেশটিতে তামাক কেনা অসম্ভব। তাই এখানে কোনো ধূমপানকারী নেই। তবে আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ভুটানের রাস্তার আনাচে কানাচে গাঁজার গাছ জন্মায়।

যেহেতু তারা ধূমপায়ী নয়, তাই তারা সে গাছগুলোকে তারা গরু এবং শূকরকে খাওয়ায়। এখানকার রাস্তাঘাট একদমই পরিষ্কার। এখন যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কতটুকু পরিষ্কার? তাহলে বলতে হয়, এতটাই পরিষ্কার যে রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে পারবেন আপনি। তাও এবার খালি গায়ে।

পুরুষরা বিয়ের পর চলে যায় শ্বশুরবাড়ি

পুরুষরা বিয়ের পর চলে যায় শ্বশুরবাড়ি

এদেশে বিদেশিদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। রাজা বিশ্বের বাকি দেশগুলো থেকে তাদের অনন্যতা ও বিচ্ছিন্নতা রক্ষা করতে সবকিছু করেন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় ভিক্ষুরা মন্ত্র পাঠ করেন। এটা বলা হয় যে, এই প্রক্রিয়া নববধূদের শক্ত মানসিক সংযম নির্মাণ করতে পারেন। এদেশের নিয়মানুযায়ী বিয়ের পর পুরুষ নারীদের বাসায় আসেন। যখন তিনি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেন, তখন তারা অন্য বাড়িতে নিজেদের মতো থাকতে পারেন।

এদেশের খাবারে নেই কোনো ফরমালিন। কারণ এই দেশের ইকোলজি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে কোনো রাসায়নিক পণ্য আমদানি করা ও ব্যবহার করা আইনগত নিষিদ্ধ। তারা যেসব কিছু খায় বা ব্যবহার করে তা সবকিছুই দেশের ভেতরেই চাষ করা হয় এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।

ভুটান

ভুটান

তবে বাঙালিরা এখানে ঘুরতে গেলে কিন্তু বেশ আরামেই কিছুদিন পার করতে পারবেন। কারণ তাদের প্রধান এবং মৌলিক খাবারই হচ্ছে ভাত। ঠিক বাঙালিদের মতো। তাছাড়া এখানকার মানুষ চা খেতে খুব পছন্দ করেন। তারা লবণ, মরিচ এবং মাখন দিয়ে কালো ও সবুজ চা বানায়।

এমনকি আপনি একটি কথা জেনে অবাক হবেন, এই দেশের মানুষ প্রচুর গাছ লাগাতে পছন্দ করে। রাজা রানির প্রথম সন্তানের জন্ম জনগণ পালন করেন এক লাখ আট হাজার গাছ লাগিয়ে। গাছ তাদের কাছে দীর্ঘ জীবন সৌন্দর্য এবং সহমর্মিতার প্রতীক। ২০১৫ সালে মাত্র এক ঘণ্টায় ৫০ হাজার গাছের চারা লাগিয়ে ভুটান গিনেস বুকে স্থান করে নেয়।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.