271588

ট্রেনে ছিল না টয়লেট, এক বাঙালি বয়ে এনেছে সুফল

ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রেন চালু হয় ১৮৫৩ সালে। তবে আপনি জানেন কি তখন কোনো ট্রেনেই টয়লেট ছিল না। ১৮৫৩ সালের পর প্রায় ৫৬ বছর পর অর্থাৎ ১৯০৯ সালে অখিল চন্দ্র সেন নামে এক বাঙালির কারণে ট্রেনে টয়লেট বসানো হয়।

তার একটি চিঠির জের ধরে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৯ সালে ভারতবর্ষের ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা করেছিল। সেই ব্যক্তির নাম আমরা অনেকেই জানি না। তার নাম অখিলচন্দ্র সেন। তিনি একজন বাঙালি।

অখিল চন্দ্র ট্রেনে যাত্রাকালে পেটে বিশেষ কাজ এর চাপ নিয়ে উসখুশ করছিলেন। তবে কোথাও কোনো ব্যবস্থা ছিলোনা এই ট্রেনে। প্রচণ্ড চাপে ধুতি নষ্ট হওয়ার যোগাড়। কোনোমতে চেপে ধরে পরবর্তী স্টেশনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অখিল চন্দ্র।

ট্রেন

ট্রেন

পরে ট্রেন যাত্রা বিরতি দিয়ে থামে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের আহমদপুর রেলস্টেশনে। পড়িমরি করে ট্রেন থেকে নেমে হাতে লোটা নিয়ে অখিল চন্দ্র ছুটলেন স্টেশনের টয়লেটে।

এদিকে গার্ড ট্রেন ছাড়ার হুইসিল বাজিয়ে দিলেন। অখিল টের পেলেন ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। অথচ তার ‘কাজটা’ তখনো শেষ হয়নি। তিনি ট্রেন ধরতে ‘হাফ ডান’ অবস্থায় শৌচাগার থেকে বেরিয়ে দৌড় দিলেন।

এক হাতে নিজের জিনিসপত্র ধরে, আরেক হাতে ধুতি নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্ল্যাটফর্মের ওপর পড়ে গেলেন। প্ল্যাটফর্ম-ভর্তি লোকের সামনে ধুতি খুলে গিয়ে বিতিকিচ্ছি অবস্থা! ওদিকে ট্রেনটাও ছেড়ে চলে গেল।

গন্তব্যের মাঝপথে ট্রেন হারিয়ে রেগে যান অখিল চন্দ্র সেন। ক্ষেপে গিয়ে সাহেবগঞ্জ ডিভিশনাল রেলওয়ে অফিসে ভুলভাল ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিটির সারকথা হলো, অতিরিক্ত কাঁঠাল খাওয়ার কারণে তার পেট ফেঁপেছিল।

আধুনিক টয়লেট

আধুনিক টয়লেট

অখিলচন্দ্র সেন কোষ্ঠ সাফ করে হালকা হতে গিয়েছিলেন। টয়লেটে যাওয়ার আগে গার্ডদের বলেছিলেন। তবে গার্ডরা তার কথা মনে রাখেনি এবং ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এই কারণে বহু নারী-পুরুষের সামনে তাকে হেনস্তা হতে হয়েছে।

এজন্য তিনি গার্ডদের জরিমানা করার দাবি জানান, নচেত সংবাদপত্রে খবর দিয়ে এই ঘটনা ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেন। অখিলচন্দ্র সেনের এই চিঠিটি রেলের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

কারণ ব্রিটিশ সরকার ওই চিঠির ভিত্তিতেই গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় যার জেরে ভারতে ট্রেনের মধ্যে বাথরুমের প্রচলন হয়। অখিলের সেই চিঠি এখনো দিল্লির রেল মিউজিয়ামে রাখা আছে।

অখিলের চিঠিতে ট্রেনে টয়লেট লেগেছিল ঠিকই কিন্তু সেই টয়লেটের বর্জ্য ধরে রাখার ট্যাংক ছিল না। চলন্ত ট্রেনে যাত্রীরা প্রাকৃতিক কাজ সারার সময় সব মলমূত্র ট্রেনলাইনেই পড়ছিল। এরপর ১০০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে কিন্তু সেই অবস্থা থেকে আধুনিক ভারতও পুরোপুরি বের হতে পারেনি।

বাংলাদেশেও এখন রআধুনিক ট্রেন রয়েছে

বাংলাদেশেও এখন রআধুনিক ট্রেন রয়েছে

স্বাধীন বাংলাদেশ তো পারেইনি। অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (এখনকার বাংলাদেশে) রেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। তার মানে ১৩৮ বছর ধরে মনুষ্য বর্জ্য রেল লাইনে প্রতিনিয়ত পড়ছেই।

সভ্য দুনিয়ায় ট্রেনে নানান ধরনের ট্যাংক স্থাপন করে বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো অনেক ট্রেনে ভ্যাকুয়াম টয়লেট ব্যবস্থাপনা আছে।

অনেক সময় ট্রেন এবং প্লেনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক শৌচাগারের ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়। রেল লাইনে যাতে মল-মূত্র না পড়ে সে জন্য ভারত এরইমধ্যে লক্ষাধিক ট্রেনে বায়ো টয়লেট সংযোজন করেছে।

খবরে দেখেছি, আমাদের দেশেও ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে অত্যাধুনিক বায়ো টয়লেট যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে মল-মূত্র আর রেললাইনে পড়বে না।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.