271410

গাছ, লেপ, এমনকি আইফেল টাওয়ারকেও বিয়ে করেছেন এই নারীরা

বিয়ে মানেই নারী পুরুষের চারহাত এক হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। সাধারণত বিয়ে মানেই আমরা বুঝি নারী ও পুরুষের এক হওয়াকে। একজন নারী অন্য একজন পুরুষের সঙ্গেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হোন, তা সবারই জানা। তবে আজকাল নারীতে নারীতে বা পুরুষে পুরুষে বিয়ের খবরও নতুন কিছু নয়।

তবে অনেক নারী বা পুরুষ আছেন, যারা মানুষ নয় জড়বস্তুকে বিয়ে করেছেন। তাদেরকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কেউ বিয়ে করেছেন গাছ, কেউবা লেপ- কম্বল। আবার কেউ আছেন আইফেল টাওয়ারকেই স্বামী মানেন। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ এমনই অনেক ঘটনা বিভিন্ন সময় ঘটেছে নানা দেশে। চলুন এমনই কয়েকজন নারীর কথাই যানবো আজ-

গাছ বিয়ে

কেট এলডার

কেট এলডার

ইংল্যান্ডের লিভারপুরের সেফটনের রিমরোজ ভ্যালি কান্ট্রি পার্কের গাছ কেটে দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দারা চাইছেন না, সড়কের জন্য এই পার্ক ধ্বংস হয়ে যাক। তাই তারা নানান ভাবে আন্দোলন করেছেন। আর সেই আন্দোলনকে এক কদম এগিয়ে নিয়ে গিয়ে পার্কের একটি এলডার গাছকে বিয়ে করে নিয়েছেন কেট। ঘটনাটি ২০১৯ সালের। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঘটা করে প্রথম বিবাহবার্ষিকীও পালন করেন এই নারী।

গাছ স্বামীর সঙ্গে ব্যতিক্রম বিয়েবার্ষিকী পালন করতে কান্ট্রি পার্কে ছুটে যান ৩৮ বছর বয়সী কেট। শুধু বিয়ে করাই নয়, নিজের পদবি পরিবর্তন করে কেট ‘এলডার’ করে নিয়েছেন তিনি। তবে গাছকে বিয়ে করার এই পরিকল্পনা তার মাথায় আসে মেক্সিকোর এক নারীর কথা জানতে পারার পর। সবুজ বাঁচানোর লড়াইয়ের সৈনিক সেই নারীও একটি গাছকে বিয়ে করেছিলেন।

কেট এলডার দিনে পাঁচবার তার গাছ স্বামীকে দেখতে আসেন

কেট এলডার দিনে পাঁচবার তার গাছ স্বামীকে দেখতে আসেন

কেট জানিয়েছেন, যদিও তার বছর পনেরোর বড় ছেলে মায়ের এই বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা বিব্রত বোধ করে। তবে কেট নিজের সিদ্ধান্তের জন্য গর্বিত বলে জানিয়েছেন। ছেলেও একদিন এই বিয়ের মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে বলে তার আশা।

কেট দিনে পাঁচবার তার স্বামীকে দেখতে ওই পার্কে যান। তার আশা, এই ‘বিয়ে’ সবুজ বাঁচানোর আন্দোলনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন গোটা বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সময় হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেট। তিনি বলেন, এই পৃথিবী খুব সুন্দর একে নষ্ট হতে দেয়া উচিত নয়। সম্প্রতি তার পরিবার পরিজন নিয়ে বিয়েবার্ষিকী পালনের কিছু ছবি মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

লেপ বিয়ে

লেপকে বিয়ে করেন এই নারী

লেপকে বিয়ে করেন এই নারী

যুক্তরাজ্যের ডেভনের বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়সি এই নারীর নাম প্যাস্কেল সেলিক। তিনি জানান, তিনি তার লেপকে বিয়ে করবেন। কারণ, লেপের সঙ্গেই তার সব থেকে জোরালো ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু তাই বলে নিজের লেপকে বিয়ে? শুনতে আজব লাগলেও ঘটনা একেবারেই সত্যি।

পেশায় শিল্পী প্যাস্কেল নিজেকে ‘রূঢ়, রুক্ষ, চমকদার, প্রদর্শনকামী’ বলে বর্ণনা করতে ভালোবাসেন। সম্প্রতি এক খোলা আমন্ত্রণপত্রে তিনি জানিয়েছেন, যে বা যারা তার সঙ্গে তার লেপের বিবাহকে সেলিব্রেট করতে চান, তার সুস্বাগত।

আরো পড়ুন: ৫০০ বছরের প্রথা, শুয়ে থাকা নারীর উপর ওঝা হাঁটলেই সন্তান লাভ

প্যাস্কেলের মতে, লেপের সঙ্গেই তার সব থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এতটা ঘনিষ্ঠতা তার সঙ্গে অন্য কারোর কখনোই ঘটেনি। লেপকে জড়িয়ে ধরেই তিনি সব থেকে বেশি সুখ পেয়েছেন জীবনে। সেই কারণেই লেপকে বিয়ে করতে চান তিনি।কেমন হবে সেই বিয়ে, তার একটা বর্ণনাও দিয়েছেন প্যাস্কেল। বিয়ের আসরে তিনি একটা নাইটগাউন পরবেন। কিন্তু তার স্বামী ‘লেপ’ কি পরবেন, তা তিনি জানাননি। সেটা চমক হিসেবেই থাক, এমনটাই বলেছেন প্যাস্কেল।

প্যাস্কেল

প্যাস্কেল

বিয়ের দিন নির্ধারিত হয়েছে। ডেভনেই বসবে বিয়ের আসর। তার পরেই থাকছে একটা ‘ফ্রি ওয়েডিং পার্টি’। অতিথিদের ড্রেস কোড কী হবে, তাও জানিয়েছেন প্যাস্কেল। তার ইচ্ছা, অতিথিরা সবাই নাইটগাউন, পাজামা ইত্যাদি রাতপোশাক পরেই হাজির হোন বিয়ের আসরে। বিয়ের আসরকে জমাটি করে তুলতে প্যাস্কেল খ্যাতনামা ওয়েডিং প্ল্যানার অ্যানা ফিৎজেরাল্ডকে বরাত দিয়েছেন।

ওদিকে প্যাস্কেলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার রিলেশনশিপ স্টেটাসে জনি বেয়ার্ট-আলব্রেখট নামক জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ঘোষণা করা রয়েছে। লেপকে বিয়ে করার পরে জনির কী হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানাননি প্যাস্কেল।

আইফেল টাওয়ার বিয়ে

 

আইফেল টাওয়ার বিয়ে করেন এই নারী

আইফেল টাওয়ার বিয়ে করেন এই নারী

এরিকা আয়া নামের ইটালিয়ান এই নারী নিজেকে আইফেল টাওয়ারের স্ত্রী মনে করে। ১৯৭২ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী এরিকা আয়া নিজেকে আইফেল টাওয়ারের স্ত্রী মনে করে। ২০০৭ সালে অফিসিয়ালি তিনি আইফেল টাওয়ার কে বিয়ে করেন। তারপর থেকে তার নাম হয়ে যায় এরিকা আইফেল। বর্তমানে আমেরিকা এবং ইটালি দুই দেশেরই নাগরিক এরিকা আইফেল। সময় পেলেই আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে সময় কাটান তিনি।

টেট্রিস ভিডিয়ো-গেমকে বিয়ে

 টেট্রিস ভিডিয়ো-গেমকে বিয়ে

টেট্রিস ভিডিয়ো-গেমকে বিয়ে

নুরুল মহজবিন হাসান। নিজের টেট্রিস ভিডিয়ো-গেমকে বিয়ে করার জন্য চর্চায় এসেছিলেন এই ছাত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন যে বিভিন্ন গ্যাজেটের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করেন তিনি। বেশ কিছুদিন তিনি নিজের ক্যালকুলেটরের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও মনোরেল, আইপড ইত্যাদির প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করেন তিনি। তার ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকে টেট্রিস-আকারের বস্তু।

জলদস্যুর প্রেতাত্মা বিয়ে

জলদস্যুর প্রেতাত্মা বিয়ে করেন এই নারী

জলদস্যুর প্রেতাত্মা বিয়ে করেন এই নারী

আমান্দা স্প্যারো লার্জ। জাগতিক পুরুষদের আর ভালো লাগছিল না এই আইরিশ নারীর। অবশেষে ১৮ শতকের এক হাইতিয়ান জলদস্যুর প্রেতাত্মার মধ্যে নিজের ভালোবাসা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছিলেন ৪৬ বছরের আমান্দা। সেই প্রেতাত্মার নাম জ্যাক বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখলেন সব কিছু যেন ঠিকঠাক চলছে না। অগত্যা সেই প্রেতাত্মার সঙ্গে বিচ্ছেদও হয়ে যায় তার।

ঝাড়বাতিকে বিয়ে

ঝাড়বাতিকে বিয়ে

ঝাড়বাতিকে বিয়ে

আমান্দা লিবার্টি। ঝাড়বাতিকে বিয়ে করেছিলেন লিডস-এর এই যুবতী। জার্মানি থেকে কেনা ঝাড়বাতিটিকে দেখেই সেটির প্রেমে পড়ে যান বলে জানিয়েছেন আমান্দা। এর আগে ১৪ বছর বয়সে তিনি একটি ড্রামস সেটের প্রেমেও পড়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন আমান্দা।

নাগরদোলা বিয়ে

নাগরদোলা বিয়ে

নাগরদোলা বিয়ে

অ্যামি উলফ আনন্দ করতে ভয়ানক ভালবাসেন এই নারী। তাই সারাক্ষণ হইচই আর মজার মধ্যে থাকতে নিউইয়র্কের এই বাসিন্দা বিয়ে করেন পেনসিলভেনিয়ার একটি স্থায়ী মেলার মাঠের একটি ইলেক্ট্রিক নাগরদোলাকে।

মেডিকেলের ভাষায় এ ধরনের জড় বস্তুর প্রতি প্রেম বা এটার্চমেন্ট কে অবজেক্টাম সেক্সুয়ালিটি বলা হয়। এটি একধরনের মানসিক রোগ। এরা সাধারণ মানুষের মতো আচারণ করে। তবে মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণবোধ করেন না তারা। এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন নারীরা। তবে বিশ্বের অনেক দেশে বিয়ের নিয়ে আজব আজব রীতি রয়েছে। একটি মেয়ের বিয়ের আগে তাকে কোনো প্রাণী বা গাছের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এতে নাকি স্বামী দীর্ঘায়ু পায়। এসবই কুসংস্কার। বিজ্ঞানের পাতায় এসবের কোনো ঠাঁই নেই।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.