269752

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী গোয়েন্দা, চষেছিলেন পুরো বিশ্ব

বিশ্বজুড়ে নারীর অনেক ঐতিহাসিক জয়জয়কারের কাহিনী রয়েছে। অতীতে নারীর চলার পথ খুব মসৃণ ছিল না। তারা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করে ইতিহাস বদলেছে। গড়েছেন নানা দৃষ্টান্ত। তেমনই দুঃসাহসিক দুই নারীর সম্পর্কে আমরা আজ জানব।

দুঃসাহসী অভিযাত্রীদের প্রসঙ্গ উঠলেই চলে আসে ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কো ডা গামা, লরেন্স অব অ্যারাবিয়ার নাম। পুরুষ অভিযাত্রীদের তুলনায় নারীদের নাম খুব কমই উচ্চারিত। হয়তো মনে করা হয়, নারী শুধুই চার দেয়ালে বন্দী থাকার মানুষ।

অথচ ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক নারী অভিযাত্রী আছেন যাদের দুঃসাহসী অভিযাত্রার কথা শুনলে তাজ্জব বনে যেতে হয়। জেনে নেয়া যাক দুঃসাহসী দুজন নারীর কথা-

গারট্রুড বেল

গারট্রুড বেল

গারট্রুড বেল

মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ইউরোপজুড়ে চষে বেড়িয়েছিলেন গারট্রুড বেল। ১৮৬৮ সালে তার জন্ম। ওই সময়ে একজন নারীর পক্ষে বিভিন্ন দেশে পরিভ্রমণ খুবই কঠিন একটি কাজ ছিল। তবে বেল ছিলেন সবকিছুতেই এক অনুকরণীয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন বেল। ছিলেন একজন লেখক ও পুরাতাত্ত্বিক। বলা হয়ে থাকে, পুরাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যান বেল।

এরপরই শুরু হয় না দেখাকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখার নেশা। গারট্রুড বেল ফারসি ও আরবি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিসরের কায়রোয় থাকা আরব ব্যুরোতে কাজ করতেন।

গারট্রুড বেল

গারট্রুড বেল

১৯২১ সালে কায়রোয় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে রাষ্ট্র হিসেবে ইরাকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ওই কাজে বেলের অবদান এখনো স্মরণ করা হয়। নারী হিসেবে প্রথম হিসেবে পুরাতত্ত্ব, স্থাপত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে মৌলিক অবদান রেখেছিলেন গারট্রুড বেল।

প্রথম নারী হিসেবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক পরিষেবায় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হন তিনি। সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, এশিয়া মাইনর ও বিস্তীর্ণ আরব অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বেল।

এর ফলে ওই অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত হয়েছিল। ইরাকের জাতীয় জাদুঘর গড়ে উঠেছিল তার প্রচেষ্টায়। বিভিন্ন অঞ্চলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সেসব দেশেই সংরক্ষণের বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন গারট্রুড বেল।

নেলি ব্লাই

নেলি ব্লাই

নেলি ব্লাই

মার্কিন এই নারী পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। ১৮৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিক হিসেবে খুব সফল ছিলেন নেলি। তিনি নারী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ।

ব্ল্যাকওয়েলস আইল্যান্ড নামের একটি দ্বীপে থাকা মানসিক রোগবিষয়ক চিকিৎসাকেন্দ্রে নারীদের ওপর করা অত্যাচারের বৃত্তান্ত তিনি সংবাদপত্রে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে সেই সময় ব্যাপক হইচই হয়েছিল।

তবে যে দুঃসাহসী কাজের জন্য নেলি ব্লাই বিখ্যাত, তার জন্য কিছুটা দায় লেখক জুল ভার্নেরও আছে। জুল ভার্নের লেখা কল্পবিজ্ঞানবিষয়ক বই অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নেলি।

এরপর তিনি পরিকল্পনা করেন জুল ভার্নের বইয়ের চেয়েও কম সময়ে বিশ্ব পরিভ্রমণ করার। পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে এ কাজের জন্য অনুমতি চান তিনি। কথিত আছে, প্রথমে কর্তৃপক্ষ এ কাজের জন্য একজন পুরুষ সাংবাদিককে পাঠাতে চেয়েছিল।

নেলি ব্লাই

নেলি ব্লাই

তবে নেলি নাকি তখন হুমকি দিয়েছিলেন যে তেমনটা হলে অন্য পত্রিকায় চলে যাবেন তিনি। আর তাতেই বরফ গলে। ১৮৮৯ সালের শেষের দিকে বিশ্বভ্রমণ শুরু করেছিলেন নেলি ব্লাই।

তার পরিভ্রমণের পথ ছিল ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর থেকে জাপান এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পূর্ব উপকূল। আর এই পুরোটাই তিনি সম্ভব করেছিলেন মাত্র ৭২ দিনে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ৭২ দিন ৬ ঘণ্টা ১১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে পৃথিবী ঘুরে এসেছিলেন নেলি।

ওই হিসাবে জুল ভার্নের কল্পনাকেও হার মানিয়েছিলেন তিনি। পরে নেলি পত্রিকায় নিজের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ বিষয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছিলেন। স্মৃতিকথা হিসেবে ওই ধারাবাহিকের নাম ছিল ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন সেভেন্টি টু ডেজ’।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, মেন্টাল ফ্লস, দ্য গার্ডিয়ান

পাঠকের মতামত

Comments are closed.