269692

৩০ বছর ধরে গৃহবন্দী আর শিকলে বাঁধা জীবন

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় গত ৩০ বছর ধরে মাটির বাড়ির একটি অন্ধকার ঘরে বন্দী আর শিকলে বাঁধা জীবন কাটছে নৃপেন চন্দ্র পালের।
উপজেলার কালীগ্রাম ইউপির ভান্ডারা গ্রামে নৃপেনকে ৩০ বছর ধরে বন্দী করে রেখেছেন তার পরিবার। গত ৫ বছর ধরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। নৃপেনের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো সে ভালো হয়ে যাবে বলে পরিবারের দাবি।

ছোট থেকেই নৃপেন মেধাবী ছিলেন। গ্রামের স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেন। ১২ বছর বয়সে হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে করে তার পরিবার। ওই বয়সে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ সময় নৃপেন মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘর-বাড়ি ভেঙে দেওয়াসহ নানা ধরনের অত্যাচার শুরু করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জমি-জমা যেটুকু ছিল তা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করান পরিবারের লোকজন। একপর্যায় উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয় তৎকালীন চিকিৎসকরা।

গরিব পিতা-মাতা ও পরিবারের পক্ষে তার আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তখন কিশোর নৃপেনকে বাড়ির ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। বিয়ে দিলেই ভালো হয়ে যাবে, এমন পরামর্শে নিপেনকে আবার বিয়ে দেয়া হয় একই এলাকার শিখা রানী পালের সঙ্গে। কোনো কাজ হয়নি। উল্টো নৃপেনের ঘরে এখন ৭ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে।

নিতাই চন্দ্র পাল পৃথকভাবে দিনমজুর করে সংসার চালায়। আর নৃপেন ও তার স্ত্রী শিখা রানীকে বিধবা মা আরতি বালার ছোট একটা বাড়িতে গ্রামের লোকজনের সহায়তায় কোনভাবে দিন কাটছে। এমতাবস্থায় অর্থের অভাবে নৃপেনের চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে যায়।

নৃপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে নিপেনকে ঘরে বন্দী করে রেখেছি। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও এখন অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নৃপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে অত্যাচার বেড়ে গেলে বাধ্য হয়েই তাকে গত ৫ বছর ধরে লোহার শিকলে বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি।

নৃপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, অর্থের অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত চিকিৎসা করানো যেতো।এক মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। স্বামী নিপেন চন্দ্রকে সম্পন্ন সুস্থ করে তুলতে সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

কালীগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, নৃপেনের বিষয়টি শুনেছি কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো।

ইউএনও আল মামুন বলেন, দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নৃপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.