269626

৪৩ বছর ধরে মহাকাশে ঘুরছে দুই বোন!

১৯৭৭ সালের ২০ আগস্ট ভয়েজার-২ মহাকাশযানকে মহাকাশে পাঠায় নাসা। সেটির যাত্রা এখনো চলছে। ওই বছরের পাঁচ সেপ্টেম্বর ভয়েজার-১ একইভাবে মহাকাশে যাত্রা করে। এখনো এই দুটো মহাকাশযান ঘুরে বেড়াচ্ছে। মূলত এদেরকেই দুই বোন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এই দুই মহাকাশযানের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বৃহস্পতি এবং শনিগ্রহণ সম্পর্কে যতটা সম্ভব্য তথ্য সংগ্রহ করা। তাদের যাত্রার শুরুর সময় অবধি গ্রহ দুটো সম্পর্কে তেমন একটা জানা যায়নি। মহাকাশযান দু’টোতে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার উপযোগী প্লুটোনিয়াম ব্যাটারি রয়েছে।

আর এ কারণেই এখনো ওই মহাকাশযান দু’টো সচল রয়েছে। পৃথিবীতে একেকটি ভয়েজারের ওজন ছিল ৮২৫ কেজি করে। নাসা এখন অবধি মহাকাশকেন্দ্রিক যে সব সাফল্য অর্জন করেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ভয়েজার অভিযান।

মহাকাশযান

মহাকাশযান

সে দু’টি এখনো মহাকাশ থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাঠাচ্ছে। পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া যন্ত্র দু’টির সঙ্গে ২০৩০ সাল অবধি রেডিও যোগাযোগ অব্যাহত রাখার আশা করছে নাসা।

২০১২ সালের ২৫ আগস্ট ভয়েজার-১ আমাদের সৌরজগতের একটি সীমানা ‘হিলিওপস’ অতিক্রম করে আকাশগঙ্গা ছায়াপথে পৌঁছে গেছে। এটি হচ্ছে মানুষের তৈরি একমাত্র যন্ত্র যা পৃথিবী থেকে বর্তমানে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করছে৷

ভয়েজার ১-এর মতো ভয়েজার ২-ও সৌরজগতের একটি সীমানার বাইরে চলে গেছে। ২০১৮ সালের পাঁচ নভেম্বর এই যানটি ‘ইন্টার্স্টেলার স্পেসে’ প্রবেশ করে। এই যানে পাঠানো তথ্য অতীতের বিভিন্ন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।

মাহাকাশ যান

মাহাকাশ যান

সৌরজগতের বিভিন্ন সীমানা রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ‘টার্মিনেশন শক’। সেখানে সৌর বাতাস নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ‘হিলিওস্পেয়ার’ এর পরে ‘হিলিওপস’ এর অবস্থান।

আর এটি হচ্ছে ‘স্পেস বাবল’ এর কিনারা যেখানে সৌর শিখা ‘ইন্টারস্টেলার’ রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে। এখন অবধি ধারণা ছিল যে বাতাস ক্রমশ কমতে থাকে।

তবে দুই মহাকাশযানের তুলনামূলক পরিমাপ আমাদের জানাচ্ছে যে আমাদের সৌরজগতের অভ্যন্তরে একটি স্পষ্ট সীমান্ত রয়েছে। ‘ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম’-এর তাপমাত্রাও আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি।

আজো তারা ঘুরছে মহাকাশে

আজো তারা ঘুরছে মহাকাশে

বৃহস্পতিগ্রহ পার হওয়ার পর ভয়েজার-১ সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছায়। ভয়েজার-২ শনি গ্রহের এই রঙ্গিন ছবিটি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। ১৯৮১ সালে মহাকাশযানটি আমাদের সৌরশক্তির ষষ্ঠ গ্রহের কাছে পৌঁছায়। শনি গ্রহের ২১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে এই ছবিটি তোলা হয়েছে।

মহাকাশযান দু’টিকে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডিনা শহরের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের এই ছবিটি ১৯৮০ সালে তোলা। বর্তমানে অবশ্য নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র অনেক আধুনিক করা হয়েছে।

মহাকাশযান দু’টি যদি তাদের অন্তহীন যাত্রাপথে কোনো প্রাণের সন্ধান পায়, তাহলে সেটিকে পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দিতে সক্ষম হবে। যান দু’টিতে রয়েছে এরকম কিছু উজ্জ্বল সোনালি ডিস্ক, যাতে পৃথিবীর ছবি এবং মানুষ, জীবজন্তু এ প্রকৃতির শব্দ রেকর্ড করা রয়েছে। এমনকি এগুলো বাজানোর ব্যবস্থাও রয়েছে ভয়েজার দু’টিতে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.