প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ শহরগুলো এখন ভুতুড়ে আখড়া
ভুতুড়ে জায়গাগুলো সামনা সামনি এড়িয়ে গেলেও, আড় চোখে একবার দেখে নেন নিশ্চয় এর নামটি। একসময় যে জায়গাগুলো সারাক্ষণ মানুষের পদচারনায় গমগম করত। আজ সেখানেই যেন শুধুই ভুতুড়ে আখড়া।
বিশ্বের নানা প্রান্তে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে এমন বহু শহর। যেখানে সাজানো গোছানো সংসার ছিল মানুষের। হয়তো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতেন তারা। তা আর বাস্তবে পরিণত হয়নি।
একসময় প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে শহরগুলোতে শুধুই শূন্যতা, জনমানবহীন। আসলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, পারমাণবিক দূষণের মতো নানা কারণে পৃথিবীর বহু শহর একেবারেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে এমন শহরের সংখ্যা কিন্তু কম নেই। সেই সব শহরের কিছু কিছু এলাকা সর্বসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ হলেও এখন কিছু কিছু এলাকা পর্যটকদের জন্যে খুলে দেয়া হয়েছে।
কেন এই শহরগুলো আজ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে, তা-ই জানাবো আপনাদের। এর আগেও এমন বহু শহর আর দ্বীপের খবর জানানো হয়েছে। আজ তারই ধারাবাহিকতায় থাকছে আরো কিছু শহরের খোঁজ। চাইলে কিন্তু নিজ চোখেই দেখে আসতে পারেন এই ভুতুড়ে শহরগুলো। চলুন তবে জেনে নেই সেসব শহরের অতীতের কাহিনী-
প্রিপেয়াত, ইউক্রেন
পরিত্যক্ত শহরের কথা বললে প্রথমেই আসে প্রিপেয়াত শহরের কথা। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টকে সমর্থন করার পরই পৃথিবীর নবম নিউক্লিয়ার শহর হিসেবে ধরা হয়। ১৯৮৬, ২৬ এপ্রিল বিকেল পর্যন্তও এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪৯ হাজারের বেশি। তবে ওই দিন বিকেলে চেরনোবিল দুর্ঘটনার পরই শহরটি পরিত্যক্ত ও জনশূন্য হয়ে পড়ে। সরিয়ে নেয়া হয় সব বাসিন্দাদের। এখন ধীরে ধীরে শহরে রেডিয়েশন কমে গেছে এবং অনেক পর্যটক শহরটি দেখতে গেলেও স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না কেউ।
গার্নেট, মনটানা
আমেরিকায় অন্যতম পরিত্যক্ত শহরের নাম গার্নেট। ১৮৬০ সাল পর্যন্ত এখানে ছিল মানুষের বাস। এক সময়ের গোল্ডমাইন সমন্বিত শহর। এখানে ব্যাপকভাবে হত ব্যবসা বাণিজ্যও। যদিও মতান্তরে অনেকে বলেন, ১৮৯৮ সাল পর্যন্তও এখানে প্রায় একহাজার মানুষ বসবাস করেছে। তখন শহরটির নাম ছিল মিচেলো। কিন্তু সোনার খনির ব্যবসা বন্ধ হতেই গার্নেটের ঔজ্জ্বল্য ফিকে হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে। একে একে শহর ছেড়ে চলে যান সবাই। ১৯১২ সালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় অর্ধেক শহর ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে এটিও একটি পর্যটন কেন্দ্র, তবে পরিত্যক্ত।
হাশিমা দ্বীপ, জাপান
জাপানের দক্ষিণভাগে অবস্থিত হাশিমা দ্বীপ। নাগাসাকি শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এই দ্বীপে এক সময় কয়লা আবিষ্কার হয়। তারও প্রায় ৮০বছর পর ১৮৮৬ সালে, সমুদ্রের নিচে খোঁজ মেলে কয়লার খনির। ১৯৫৯ সাল পর্যন্তও এই দ্বীপে বাস করতো পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু কয়লার জোগান ফুরিয়ে আসতেই ১৯৭৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে এই দ্বীপ। ২০০০ সাল পর্যন্ত হাশিমা দ্বীপ পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল। দ্বীপটি ভুতের দ্বীপ নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু এরপর জাপান সরকার এই দ্বীপের কিছু বাড়ি মেরামত করলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। ২০১৫ সাল থেকে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়।
বোডি, ক্যালিফোর্নিয়া
উনিশ শতকের গোড়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার বোডিতে খোঁজ মেলে সোনার খনির। সেই সময় লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এই শহর। ছোট্ট সুন্দর এই শহরটিতে একসময় পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ বসবাস করত। তবে বিংশ শতকের শেষের দিকে শহরটির গড়িমা কমতে শুরু করে। শহর ছাড়তে শুরু করে মানুষজন। এমনকি রেলপথও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এখন যেন ভুতের শহর বোডি। তবে অবাক করা বিষয় হলো, পরিত্যক্ত হলেও শহরের সবকিছুই একদম আগের মতো সাজিয়ে রাখা! পর্যটকরা গেলেও শহরের কোনো জিনিসে তাদের হাত দেয়া নিষেধ।
কোলমানস্কোপ, নামিবিয়া
মরুভূমির রাজ্যে যেন এক জনশূন্য ভুতুড়ে শহর নামিবিয়ার কোলমানস্কোপ। নামিব মরুভূমির কাছের একটি হিরের খনির কাছে গড়ে উঠেছিল এই কোলমানস্কোপ। ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভূতুড়ে শহরের বদনাম তৈরি হয় শহরটিকে ঘিরে। এরপরই তা নিয়ে ভয় পেতে শুরু করেন মানুষজন। ছাড়তে শুরু করেন শহর। ধীরেধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায় শহরটি। কালক্রমে গোটা শহরটিকে গিলে ফেলে মরুভূমি। যদিও এখনো মরুভূমির মাঝেই সেই শহরের কিছু বাড়ির নান্দনিক সব সাজসজ্জা দেখতে পাওয়া যায়, যা দেখলে আপনিও তাজ্জব হয়ে যাবেন।