268302

পাঠ্যবই থেকে টিপু সুলতানের ইতিহাস মুছে ফেলল কর্ণাট!

ভারতজুড়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সরকার। কিছুদিন আগে নেতাদের আবদারে পাঠবই থেকে নাগরিকত্ব-ধর্মনিরপেক্ষতা-গণতান্ত্রিক অধিকার বিষয়গুলোর অধ্যায় বাতিল হয়। এবার মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান, হায়দার আলি ও সেখানকার স্থাপনা বিষয়ক অধ্যায় মুছে ফেলেছে কর্ণাট শিক্ষা দফতর। এ নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, কিছুদিন আগেই CBSE’র সিলেবাস থেকে নাগরিকত্ব-ধর্মনিরপেক্ষতা-গণতান্ত্রিক অধিকারের মতো বিষয়গুলো বাতিল করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। সেই বিতর্কের রেশ কাটাতে না কাটতেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিল কর্ণাট।

করোনাভাইরাসের দোহাই দেখিয়ে পাঠ্যক্রম কমানোর লক্ষ্যে সপ্তম শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞানের বই থেকে টিপু সুলতানের অধ্যায় মুছে ফেলা হয়েছে। আগে থেকেই টিপু সুলতানকে নিয়ে জেডিএস-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে বিজেপির ব্যাপক বিরোধ তৈরি হয়েছিল। করোনাকালে আবারো বিজেপি নেতাদের আবদারে ঘটে যাওয়া বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বিরোধকে উসকে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বদলে যাওয়া সিলেবাসে সপ্তম শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান ও হায়দার আলি, মহীশূরের ঐতিহাসিক স্থানের বর্ণনা এবং প্রশাসনিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত অধ্যায় বাতিল বা মুছে ফেলা হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যক্রম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্ণাটকের শিক্ষা দফতর। এটি সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল। তবে বিতর্কের জেরে শিক্ষা দফতর সাফাই গাইছে। দফতর বলছে, ষষ্ঠ ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে টিপু সুলতানের অধ্যায় বাদ দেয়া হয়নি।

দুই মাস আগে বিজেপি নেতাদের বার বার আবদার করে যে, পাঠ্যবই থেকে টিপু সুলতানকে গৌরবান্বিত করার বিষয় বাদ দিতে হবে। সেই আবদার খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে সরকার।

তবে কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অষ্টাদশ শতকে মহীশূরের রাজার অধ্যায় পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া যাবে না। তখন প্রতিবেদনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিজিপি নেতারা টিপু সুলতানকে সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা হিসেবে অপবাদ দেয়া শুরু করে।

প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ডি শিবাকুমার জানান, ইতিহাস বদলের চেষ্টা করছে বিজেপি। রাজনৈতিক লক্ষ্য থেকেই এমন নোংরামিতে মেতে যোগ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে ইতিহাস বদলানো যায় না।

কে এই টিপু সুলতান?

ফতেহ আলী সাহাব টিপু ওরফে টিপু সুলতান ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তার পাশাপাশি অনেক গুণ গুণান্বিত ছিলেন তিনি। ব্রিটিশদের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন টিপু সুলতান। শৌর্যবীর্যের কারণে তাকে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে অভিহিত করা হয়। এমনকি তাকে ভারতের স্বাধীনতাকামীতার জন্য ভারতের বীরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার হাত ধরেই বিশ্বের প্রথম রকেট আর্টিলারি ও বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি হয়।

প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ টিপু সুলতান নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা, ক্যালেন্ডার প্রস্তুত, নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। যা মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশের সূচনা করেছিল।

দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক টিপু সুলতানের বাবা ছিলেন হায়দার আলী। তিনি মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন৷ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার মিত্র ছিল এবং ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দুর্গ থেকে রাজ্য শাসন করতেন টিপু৷ এখন শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলায় অবস্থিত।

বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো ষড়যন্ত্রের শিকার হন টিপু সুলতান। সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার স্বাধীনতা ডুবেছিল। তেমনি অন্যতম সেনাপতি মীর সাদিকের বিশ্বাসঘাতকতায় ১৭৯৯ সালের ৪ মে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন টিপু সুলতান।  পরে  তার পরিবারের সদস্যদের ভেলোরের দুর্গে বন্দী করে ব্রিটিশ শাসকরা।

সূত্র- সংবাদ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.