267478

ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে তুরস্ক-গ্রিসের মধ্যে ফের তীব্র উত্তেজনা

তুরস্কের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ নিয়ে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে ফের তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক ওই মসজিদের ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে এ দুই দেশের মধ্যকার বিতর্ক অবশ্য এবারই প্রথম নয়। বহু দিন ধরে এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসলেও নতুন করে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মনে করা হচ্ছে এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গ্রিস এবার তুরস্কের সঙ্গে চূড়ান্ত বোঝাপড়া কিংবা এক হাত দেখে নেয়ার চেষ্টা করবে।

খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের মধ্যে একমাত্র গ্রিসই তুরস্কের সঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনায় সম্মুখে অবস্থান করছে। বহু বিষয়ে গ্রিসের সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। তবে এবার ধারণা করা হচ্ছে গ্রিস সরকার ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়ে মসজিদ বিতর্ককে টেনে এনে এবং এ ইস্যুতে অভিযোগ উত্থাপন করে তুরস্কের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ ও বিদ্বেষ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে।

আয়া সোফিয়া মসজিদ নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ হচ্ছে, এটিকে মসজিদ বলা হবে নাকি জাদুঘর বলা হবে তা নিয়ে। কারণ এক সময় এই স্থাপনাটি খ্রিস্টানদের উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত।

চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ইউরোপের ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা এক অভিযান চালিয়ে কনস্টান্টিনোপল দখল করে তারা আয়া সোফিয়াকে অর্থডক্স গীর্জা থেকে ক্যাথলিক ক্যাথিড্রালে পরিণত করেছিল। এ নিয়ে খ্রিস্টানদের মধ্যে সংঘর্ষ ও দখল পাল্টা দখলের ঘটনার পর ১৪৫৩ সালে ওসমানিয় শাসনামলে এটিকে মসজিদে পরিণত করা হয়। এরপর তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এই মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করেন এবং আয়া সোফিয়াকে একটি জাদুঘরে পরিণত করেন।

ধারণা করা হচ্ছে বর্তমানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ওই স্থাপনা তথা জাদুঘরকে ফের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের ব্যাপারে গ্রিসের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও দাবির প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট সাফ বলে দিয়েছেন, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।

তিনি ইস্তাম্বুলের লুনাত এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, আয়া সোফিয়া মসজিদের ব্যাপারে তুরস্কের বিরুদ্ধে গ্রিসের কর্মকর্তাদের অভিযোগ তুরস্কের জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে পাশ্চাত্যের সঙ্গে সংকট চলার মুহূর্তে তুরস্ক সরকার আয়া সোফিয়া মসজিদের ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে মূলত অভ্যন্তরীণ কিছু সংকট সমাধান ও জনমত ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

কারণ অতীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়কে কেন্দ্র করে তুরস্ক সরকার ইউরোপের কাছ থেকে ছাড় আদায় বা দর কষাকষির চেষ্টা করে থাকে। অন্যদিকে গ্রিসও তুরস্কের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সমগ্র ইউরোপকে টেনে আনার চেষ্টা করেছে।

আয়া সোফিয়া মসজিদে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠানের ঘটনায় এথেন্সের সমালোচনার পর নতুন করে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যকার বাদানুবাদ ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন তুঙ্গে উঠেছে। এথেন্স এই স্থাপনাটিকে গীর্জা হিসেবে দাবি না করলেও তারা বলেছে, এটি একটি প্রাচীন জাদুঘর এবং এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষা বিষয়ক ইউনিসেফের নীতিমালার লঙ্ঘন। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রিসের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা অভিযোগ করেছে, এথেন্সে অনেক মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে।

সূত্র: পার্সটুডে

পাঠকের মতামত

Comments are closed.