267485

এক সময়ের ঢাকার শেষ সীমানা, এখনকার শাহবাগ

শাহবাগ—বিপ্লবের আরেক নাম। রাষ্ট্র ও রাজনীতির উত্থান-পতন, নানা আঁকাবাঁকা পথে ওঠানামার সঙ্গে এই স্থানটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই জায়গাটা বাংলাদেশের রাজধানীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যমণির ভূমিকা পালন করছে। অথচ একসময় ঢাকার শেষ সীমানা ছিল শাহবাগ। ১৭ শতকে ঢাকা হয় মোগল বাংলা প্রদেশের রাজধানী আর সেই সঙ্গে হয় শাহবাগের গোড়াপত্তন। হঠাৎ করেই অন্যরকম গুরুত্ব পাওয়া এই এলাকা জুড়ে গড়ে উঠতে থাকে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা।

বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে যে শাহবাগ মোড়, সেটার পূর্ব-পশ্চিমে এলিফ্যান্ট রোড এবং মাওলানা ভাসানী অ্যাভিনিউ। এছাড়া উত্তর-দক্ষিণে ময়মনসিংহ রোড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের সংযোগস্থল।

শাহবাগের পত্তন

সপ্তম শতাব্দির দিকে পত্তন হয়েছিল ঢাকা শহরের। কিন্তু ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের সময়কালের কিছু স্মৃতিস্তম্ভ থেকে শাহবাগ স্থাপনার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেসময় মুঘল সম্রাট ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন জায়গাটার নাম ছিল ‘বাগ-ই-বাদশাহি’, ফার্সি ভাষার যার অর্থ ‘সম্রাটের বাগান’। সেই সময়ে এই অঞ্চলে বড় বড় কিছু বাগান তৈরি করা হয়েছিল।

মুঘল আমলেই শাহবাগে তৈরি হয়েছিল ঢাকা গেট, যা বর্তমানে শাহবাগে বাংলা একাডেমীর কাছে অবস্থিত। স্তম্ভটি বাংলার মুঘল সুবাদার মীর জুমলা তৈরি করেছিলেন, যিনি ১৬৬০ সাল থেকে ১৬৬৩ সাল পর্যন্ত  সুবাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে মরিয়ম সালেহা মসজিদ, ১৭ শতকে মুসা খানের মসজিদ এবং ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে খাজা শাহবাজের মসজিদ-মাজার নির্মাণ করা হয়।

যেভাবে শাহবাগ নামকরণ

সুবাহ বাংলার রাজধানী যখন মুর্শিদাবাদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেক বছর অযত্নে পড়ে ছিল শাহবাগের বাগানগুলো। ব্রিটিশ আমলে শাহবাগের জমিদারি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে কিনে নেন ঢাকার নবাব বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলিমুল্লাহ। নবাব আবদুল গনির উদ্যোগে এখানে একটা বাগানবাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৮৭৩ সালে। মুঘলদের ‘বাগ-ই-বাদশাহি’-র অনুসরণে এই বাগানবাড়ির নাম তিনি দেন ‘শাহবাগ’। পরে পুরো এলাকাটাই এই নামে পরিচিত হয়।

ব্রিটিশ আমলেই শাহবাগ অঞ্চলে একের পর একে বড়ো বড়ো ইমারত তৈরি করা শুরু হয়েছিল। নবাব পরিবারের বিখ্যাত ইশরাত মঞ্জিল, জলসাঘর, নিশাত মঞ্জিল, সুজাতপুর প্যালেস এখনও পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। দেশভাগের পর ঢাকা হলো পূর্ববঙ্গের রাজধানী, তখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন এখানে তৈরি হয়েছিল। শাহবাগ মোড়ের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল প্রথমে। পরে অবশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণের ঘটনাটি ঘটে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.