267454

মুরগির মল যখন অপরাধী মারার অস্ত্র!

প্রাচীনকালে অপরাধীদের নানা কৌশলে নির্যাতন করা হত। যা ছিল খুবই ভয়াবহ। একেক দেশ বা জাতি তাদের নীতি মেনে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করে। একেক অপরাধের জন্য একেক রকম শাস্তি।

যেমন খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে পার্সিয়ান সাম্রাজ্যে ভয়াবহ সব শাস্তি দিয়ে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। সেসময় অপরাধীদেরকে নৌকায় বেঁধে ভাসিয়ে দেয়া হত। আবার শরীরে মধু মাখিয়ে বেঁধে রেখে পোকামাকড়কে খাওয়ানো হত আরো কত কৌশল ছিল অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার।

মুরগির মল খুবই ক্ষতিকর

মুরগির মল খুবই ক্ষতিকর

এসবের চেয়ে হয়তো সামান্য ভিন্ন তবে ভয়ঙ্কর এক শাস্তি দেয়া হত থাইল্যান্ডের অপরাধীদের। অন্য সব নির্যাতনের থেকে এই প্রথাটা অনেকটাই ভিন্ন। অন্ধকার কারাগারে অপরাধীদের রাখা হত মুরগির মলের মধ্যে। কতটা জঘন্য একবার ভেবে দেখুন! নিশ্চয় আপনার বমি হওয়ার উপক্রম হচ্ছে!

তবে সেই কারাগারের কয়েদিদের কী দশাটাই না হত? বৈজ্ঞানিকভাবে মুরগির মল অত্যাধিক প্রাণঘাতী। এজন্যই থাইল্যান্ডের এই কারাগারে অপরাধীদের শাস্তি দিতে মুরগির মল ব্যবহার করা হত। মুরগির মল দ্বারা ওই কারাগার পরিপূর্ণ থাকে। এটি খুক খি কাই নামে পরিচিত।

কারাগারের ভেতরের অংশ

কারাগারের ভেতরের অংশ

মুরগির মল কতটা ক্ষতিকারক?

মুরগির মলের মধ্যে রয়েছে অ্যামোনিয়া। যা একটি ক্ষতিকর গ্যাস। এটি তীব্র গন্ধযুক্ত গ্যাস। এই গ্যাসের তীব্র দুর্গন্ধের ফলে মানুষের দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। মানুষের পক্ষে কয়েক মিনিটের বেশি এই দুর্গন্ধ সহ্য করা সম্ভব নয়। আর যদি কাউকে এমন দুর্গন্ধময় স্থানে থাকতে বাধ্য করা হয় তবে তার বমি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হতে পারে। এটি মানুষের জন্য মারাত্মক হতাশার কারণও হতে পারে।

থাইল্যান্ডের মুরগির মলযুক্ত কারাগার কেমন? 

অ্যামোনিয়া পানির সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া দেখায়। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড তৈরি করে। মুরগির মল খুবই দুর্গন্ধময় হয়ে থাকে। এই গন্ধ শরীরে প্রবেশ করার পরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এই দুর্গন্ধ মানব শরীরের ভেতরের সব অংশকে পুড়িয়ে ফেলতেও পারে। কোনো মানুষ বা কোনো প্রাণী যদি মুরগির মলের গন্ধের ভেতরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে, তাহলে এই দুর্গন্ধের ফলে তার মৃত্যু অবশ্যসম্ভাবী।

এটাই সেই লাল ইটের কারাগার

এটাই সেই লাল ইটের কারাগার

১৮৯৩ সালে থাইল্যান্ডের এক যুদ্ধে মুরগির মলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই সময়টি ছিল, যখন থাইল্যান্ড ফরাসিদের দখলে ছিল। থাইল্যান্ডের সেনারা চাঁথাবুরি প্রদেশের ল্যাম সিংয়ে একটি ছোট কারাগার তৈরি করে। এই কারাগারটি ছিল ১৪ ফুট লম্বা এবং ২৩ ফুট উঁচু। এটিই খুক খি কাই অর্থাৎ মুরগির মল কারাগার নামে পরিচিত।

এই কারাগারটি লাল ইট দিয়ে তৈরি করা হয়। বন্দিদের নিচতলায় রাখা হতো। সেখানের মেঝেতে ছোট ছোট ছিদ্র ছিল। যখন বৃষ্টি হতো তখন এই ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানির বদলে গড়িয়ে গড়িয়ে মুরগির মল পড়ত। নিচতলায় বন্দি থাকা কয়েদিরা অনেকটা মুরগির মলের মধ্যে চুবিয়ে থাকত। আর এভাবেই দুর্গন্ধের ফলে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করত।

আপনারা যদি কখনো থাইল্যান্ডে যেয়ে থাকেন, তাহলে এখনো এই কারাগারটি দেখতে পাবেন। যা দেখতে প্রহরীদুর্গের মতো লাগে। সত্যিই এটি কল্পনা করা খুবই দুরূহ যে, এরকম শান্তিপূর্ণ ও মনোরম সমুদ্র উপকূলে অতীতে কতই না নৃশংসতা চলেছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.