267067

৫০ বছর পুরনো গাণিতিক সমস্যা এক সপ্তাহে সমাধান করলেন এক ছাত্রী

এক সপ্তাহের কম সময়ে ৫০ বছর পুরনো একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্নাতক পর্যায়ের একজন ছাত্রী।

বিবিসি’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, লিসা পিচিরিলো নামের এই শিক্ষার্থী টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করার সময় ‘কনওয়ে নট’ বা কনওয়ের গিঁট সমস্যার সমাধান করেন। এই বছরের শুরুর দিকে গণিত জার্নাল অ্যানালস অব ম্যাথমেটিকসে মিজ পিচিরিলো’র সমস্যাটি প্রকাশিত হয় এবং সমস্যাটি সমাধানের পরই তাকে ম্যাসাচুসেটস ইন্স্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

বৈজ্ঞানিক খবরের ওয়েবসাইট কোয়ান্টা ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পিচিরিলো জানান সমস্যাটি সমাধান করে সেটি সম্পর্কে খুবই স্বাভাবিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গণিতবিদ ক্যামেরন গর্ডনের সাথে আলোচনা করছিলেন তিনি।

কনওয়ে নট সমস্যা ১৯৭০ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ জন হর্টন কনওয়ে উত্থাপন করেন, তবে মিজ পিচিরিলো ২০১৮ সালে প্রথমবার এই সমস্যার কথা জানতে পারেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক গর্ডন বলেন, আমার মনে হয় পিচিরিলো কত পুরনো, স্বীকৃত এবং বিখ্যাত একটি সমস্যার সমাধান করেছে, সেসম্পর্কে তিনি জানেন না।

স্পেনের ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিকাল সায়েন্সেসের সদস্য ও গবেষক হ্যাভিয়ের আরামায়োনা বলেন, কনওয়ে নট সমস্যা দীর্ঘসময় ধরে সমাধান করা হয়নি এবং বহু প্রথিতযশা গণিতবিদ এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

সেভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিকস ইনস্টিটিউটের মারিথানিয়া সিলভেরো বলেন, এই ধরণের সমস্যায় সাধারণভাবে একটি দড়ির কথা চিন্তা করা হয়। এই দড়িটিকে আমরা কতভাবে বিকৃত করতে পারি, সেই বিষয়টি গবেষণা করে নট থিওরি।

গাণিতিক ‘নট’ গণিতের টপোলজি নামক বিশেষ একটি ধারার অংশ। সহজ কথায়, কোনো বস্তুকে না ভেঙ্গে সেটির আকার বিকৃত করলে, মোচড়ালে এবং প্রসার ঘটালে ঐ বস্তুটি কোন পরিস্থিতিতে কী ধরণের ব্যবহার করে – সেটি নিয়ে গবেষণা করা হয় টপোলজিতে। নট থিওরি টপোলজির একটি শাখা। বাস্তব জীবনের উদাহরণগুলোর চেয়ে ‘নট’ এর সমস্যার পার্থক্য হলো, এর শেষভাগ একসাথে যুক্ত থাকে।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে টপোলজির প্রয়োগ রয়েছে এবং অর্থনৈতিক মডেলের গতিপ্রকৃতি থেকে শুরু করে ডিএনএ অণুর আকৃতি পর্যন্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয় থাকে টপোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে।

কনওয়ে নট সমতস্যার ১১টি ক্রসিং বা বাঁক রয়েছে। এই সমস্যাটির মত আরেকেটি সমস্যা, যেটি মূল সমস্যার চেয়ে কিছুটা সহজ, তৈরি করে মিজ পিচিরিলো কনওয়ে নট সমস্যার সমাধান করেন। সহজতর সমস্যাটির সমাধান করে ঐ পদ্ধতি মূল সমস্যায় প্রয়োগ করে সমাধান করেন তিনি।

কোয়ান্টা ম্যাগাজিনকে মিজ পিচিরিলো বলেন, আমি দিনের বেলায় ঐ সমস্যার পেছনে সময় দেইনি, কারণ এটিকে আমি আসল গাণিতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনাই করিনি। আমি এটিকে হোমওয়ার্কের মত মনে করেছি। তাই যখন বাসায় ছিলাম, তখনই এটা নিয়ে কাজ করেছি।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গ্রামীণ রাজ্য মাইনে জন্মগ্রহণ করেন লিসা পিচিরিলো এবং তিনি বস্টন কলেজে পড়ালেখা করেন। ২০১৩ সালে স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রী থাকার সময় তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পান তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, মিজ পিচিরিলো কনওয়ে নট সমস্যার সমাধান করার ফলে আরো বেশি নারী গণিত সংশ্লিষ্ট পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ হবেন। এই ধরণের পেশায় সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা অনেক কম থাকে।

উল্লেখ্য, এই নট সমস্যার উদ্ভাবক জন হর্টন কনওয়ে এ বছরের এপ্রিল মাসে ৮২ বছর বয়সে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লিভারপুলে জন্ম নেয়া এই শিক্ষক অত্যন্ত প্রভাবশালী, ক্যারিশমাটিক এবং দক্ষ গণিতবিদ ছিলেন যিনি ক্যামব্রিজ ও প্রিন্সটনের মত খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.