267078

এক লাখ টাকায় পুত্র শিশুকে কিনে নৃশংসভাবে দেয়া হয় বলি!

বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে বাস করে নানা ধর্ম বর্নের মানুষ। তাদের আচার, রীতিনীতি এবং সংস্কৃতি একজনের থেকে অন্যজনের আলাদা। অনেক জাতি এখনো বিভিন্ন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।

তেমনই এক রীতি চুরাল মুড়িয়াল। এটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরানো রীতি। যা আজো ভারতের কেরালার মানুষ মেনে চলেন। প্রতি বছর মার্চে পালন করা হয় এই উৎসব। এর তারিখ নির্ধারণ হয় মালায়লাম পঞ্জিকা অনুসারে।

তবে অমানবিক আর নৃশংস বটে এই উৎসবের ধরণ। দেবীকে খুশি করতে ১০ বছরের নিচে ছেলে শিশুদের বলি দেয়া হয়। আলাপ্পুজার চেতিকুলাঙ্গারা দেবী মন্দিরে বার্ষিক কুম্বা ভরণী উৎসব চলাকালীন আয়োজন করা হয় এটি। এটি এই পূজার একটি অংশ।

শিশুদের কিনে এনে বলি দেয়া হয়

শিশুদের কিনে এনে বলি দেয়া হয়

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ দেশ গুলোর একটি। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে রয়েছে নানা ধর্মের মানুষ। তাদের রয়েছে হাজারো রীতিনীতি। তবে অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার লালন করে আসছে অনেক গোষ্ঠী। যার অনেকগুলোই বেশ কঠিন আর নৃশংসই বলা যায়।

তেমনই এক ভয়ঙ্কর রীতি এটি। যার দৃশ্য অন্যদের সহ্য করা কঠিনই বটে! এই উৎসব দক্ষিণের কুম্বা মেলা নামেও পরিচিত। জানলে অবাক হবেন বৈকি, এই পূজা করেন সমাজের ধনী শ্রেণির লোকেরা। তাই বলে নিজেদের ঘরের ছেলে সন্তানকে বলি দেন না তারা।

বলির জন্য অতি দরিদ্র পরিবার থেকে অর্থের বিনিময়ে কিনে আনা হয় ছেলে সন্তানদের। নাম মাত্র অর্থের বিনিময়েই তারা পেয়ে যান দেবীকে সন্তুষ্ট করার নামে এক অমানবিক সংস্কৃতি পালনে। মাত্র ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় পাওয়া যায় শিশুদের।

শিশুদেরকে সাজানো হয়

শিশুদেরকে সাজানো হয়

উৎসবের দিন এই সব শিশুদের কলা পাতার পোশাকে সাজানো হয়। মাথায় পরানো হয় রাজার মতো মুকুট। শরীরে রং বেরঙ্গের মালা সুতা। তবে তা তৈরি করা হয় কাগজ দিয়ে। এরপর তাদের একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় মন্দির চত্বরে। সেখানেই স্বর্ণের সুচে সুতা পরানো হয়।

এবার এই সুচ বলির জন্য আনা শিশুটির গায়ে ফুটানো হয়। রক্তাক্ত হতে থাকে শিশুটি। সেই অবস্থায় নেচে গেয়ে দেবীকে সন্তুষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে ভক্তরা। ভক্তদের ধারণা শিশুদের রক্তেই সন্তুষ্ট হন দেবী। শপথ করে সারাজীবন মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকার।

একেক পরিবার দুটি ছেলে শিশু বলি দেয়। আর স্থানীয় সব পরিবারের জন্য ভোজের আয়োজন করে তারা। যে পরিবার এই পূজার আয়োজন করল বা বলি দিল। তাদের ধারণা দেবী তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছে।

সুচ ফুটানো হয় নির্মমভাবে

সুচ ফুটানো হয় নির্মমভাবে

প্রথম ২০১৬ সালে একটি দাতব্য সংস্থা এই রীতি বন্ধে মামলা করে। কেরালার স্টেট কমিশন ফর চাইল্ড রাইটস প্রটেকশন প্রথম এই উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালে এই কুসংস্কার বন্ধে কেরালা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে তা মানতে নারাজ এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর।

এমনকি ভারতের উচ্চ আদালতও এই কুসংস্কার বন্ধের নির্দেশ দেয়। তবে সে সব কিছুর তোয়াক্কা না করেই নিজেদের মতো কাজ করে ছেলেছেন এখানকার মানুষ। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এখনো কেরালায় পালন করা হচ্ছে এই রীতি।

বলির অনুষ্ঠানে জমজমাট উৎসব পালন করা হয়

বলির অনুষ্ঠানে জমজমাট উৎসব পালন করা হয়

আদালতে এই রীতির ভক্ত সংগঠনের এওকজন নারী একটি আবেদন পেশ করেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, এই রীতিতে শিশুদের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে আদালত তার আবেদন মেনে নেননি।

বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও চলছে এমন অবুঝ শিশুদের ওপর নির্যাতন। যা অমানবিক এবং নৃশংসতার প্রতীক বলছেন অনেকে। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত আর সর্ব বৃহত এই দেশে এখনো চলছে ধর্মের নামে কুসংস্কার চর্চা। যা বিশ্ববাসীকে অবাক করে।

সূত্র: ইন্ডিয়ানটাইমস

পাঠকের মতামত

Comments are closed.