266526

ক্লিনিকে ঠাঁই হল প্রতিবন্ধী তরুণীর: জন্ম দিলেন ফুটফুটে ছেলে

পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া এলাকার এক ভবঘুরে মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী মা হয়েছেন। জন্ম দিয়েছেন একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। একটি বেসরকারি হাসপাতাল তার সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শনিবার তিনি মা হন।
২০ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণী দীর্ঘদিন ধরে সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া উপজেলার সংযোগস্থল কাশীনাথপুর, বিরাহিমপুর, চব্বিশমাইল, দুলাইসহ বিভিন্ন বাজারে ঘোরাফেরা করতেন। তার নাম- ঠিকানা সম্পর্কে স্থানীয় কেউ কিছু জানে না।

স্থানীয় হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় মাঝেমধ্যে খাবার জুটত তার।

গত ৬ জুন ওই অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে দেখে কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন স্থানীয় উদ্যোমী যুবক স্বপন খন্দকার। তিনি ওই তরুণীকে মানবিক সাহায্য করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। তার আহবানে সাড়া দেন কাশীনাথপুরের কয়েকজন মানব দরদী তরুণ।

মানসিক প্রতিবন্ধী ওই তরুণী যাতে নিরাপদে মা হতে পারেন, সে ব্যাপারে এগিয়ে আসেন তরুণ ব্যবসায়ী ও কলেজ শিক্ষক শফিকুল আলম খান টিটুল।

এছাড়া বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আল আমিন, ডিমপির সাব ইন্সপেক্টর শেখ সজিব, পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক এম ডি সুজন, প্যাথলজিস্ট আলো এবং বিডি এভারগ্রিনের শেখ শাহিন ও কৌশিক আহমেদ অনিকও এগিয়ে আসেন। তারা ওই তরুণীর মা হওয়া থেকে শুরু করে তার খাদ্য, ওষুধসহ সার্বিক সহায়তা দেয়ার সব ব্যবস্থা করেন।

শনিবার পাবনা- ঢাকা মহাসড়কের সুজানগর উপজেলার দুলাই-চিনাখড়ার মধ্যবর্তী গুচ্ছগ্রামের কাছ থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে কাশীনাথপুরে নিয়ে আসা হয়।

কলেজ শিক্ষক শফিকুল আলম খান টিটুল বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের শনিবার বিকেলে ওই তরুণী একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাস দাতা স্বপন খন্দকার জানান, সবার সহযোগিতায় শনিবার মেয়েটির চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এখন নিজের কাছে অনেক ভাল লাগছে যে, অন্ত:ত একটি ভাল কাজ করতে পেরেছি।

শফিকুল আলম খান টিটুল বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে মানবিক কারণেই তার পাশে দাঁড়িয়েছি। সেইসব নরপশুদের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে, যারা মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে মহা বিপদে ফেলে দিয়েছিল।

শফিকুল আলম খান টিটুল আরো বলেন, মেয়েটির কী হবে? আমরা কতদিন তাকে রাখতে পারব? এসব নিয়ে ভাবনার অন্ত ছিল না। তখন আরেকটি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন কাশীনাথপুরের অদুরে সিন্থি পাঠশালার পরিচালক প্রকৌশলী সবুজ খাঁন।

প্রকৌশলী সবুজ খাঁন বলেছেন, মেয়েটি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেই তাকে সিন্থি বাড়িতে রেখে আসা হবে। দু’মুঠো খাবারের জন্য হয়ত তার আর পথে পথে ঘুরতে হবে না, হারাতে হবে না সম্ভ্রম।

শিক্ষাবিদ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সমাজে যুব সমাজের এমন দৃষ্টান্ত আমাদের আশান্বিত করে। দায়িত্বশীলরা মেয়েটির খোঁজ না রাখলেও সমাজের কিছু উদ্যোমী যুবক সে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তাদের এমন মহতী কাজ অনুজদের অনপ্রাণিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.