লন্ডভন্ড সাতক্ষীরা
ভেঙে গেছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তা। ডুবে গেছে মাছের ঘের ও ফসলি জমি, বেঁড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে সাতক্ষীরা শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চল, আশাশুনি ও সাতক্ষীরা সদরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রাস্তা। ডুবে গেছে মাছের ঘের ও ফসলি জমি। আশাশুনির ৬টি পয়েন্ট ও শ্যামনগরের একটি পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের অগ্রভাগ সাতক্ষীরার সুন্দরবনে আঘাত হানা শুরু করে। এরপর রাত ১১টার পর শহর অতিক্রম করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকেলের দিকে শ্যামনগরের ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় পাউবো বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী, গাগড়ামারী, জেলিয়াখালী, নেবুবুনিয়া, গাবুরা বাজার, খোলপেটুয়া ও ৯নং সোরা এলাকায় অধিকাংশ পাউবো বাঁধ খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীতে ধসে গেছে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো গাবুরা ইউনিয়ন। আমাদের বাড়ির ইটের দেওয়াল ধসে গেছে, ভেঙে পড়েছে বাড়ির অধিকাংশ গাছ।
কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রউফ বলেন, “ইউনিয়নের ঝাপালি নামক স্থানে পাউবো বাঁধে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।”
অন্যদিকে, শ্যামনগরের গাজী আল ইমরান নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বুড়িগোয়ালীনির ইউনিয়নের দাতানিখালি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান।
বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, “ইউনিয়নের দূর্গাবাটী ও দাতিনাখালীতে বিভিন্ন স্থানে পাউবো বাঁধ চুনা নদীতে ধ্বসে পড়েছে। নদীতে বড় ঢেউ আসছে সেটা প্রবেশ করে কিছু ঘেরে। ঝড় শুরু হয়ে গেছে যে কোনো সময় প্রবল জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সমগ্র ইউনিয়ন তলিয়ে মৎস্য ঘেরসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।”
শ্যামনগরের প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানির তোড়ে প্রতাপনগরের কুড়ি কাউনিয়া, সুভদ্রা কাটি, চাকলা, হাজরাখালি এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, ইউনিয়নের কামালকাটি, পূর্বপাতাখালী, চাউলখোলা ও চন্ডিপুরে পাউবো বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাউবো বাঁধের ব্লক নদীতে ধ্বসে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় নদীতে ঢেউয়ের তোড়ে পাউবো বাঁধ বিলীন হয়ে ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অপরদিকে, আশাশুনি সদরের জেলেখালি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষে সেটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সাতক্ষীরার খুব নিকট দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অতিক্রম করেছে। এটি রাত ৯টা ৮ মিনিট সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। এরপর রাত ১১টার পর ঝড়টি শহর অতিক্রম করে।”
একজনের মৃত্যু
এদিকে, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ঝড়ের মধ্যে মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে সদর থানার কামালনগর এলাকার করিমুন্নেসা নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: DhakaTribune