তারা এখন কী করছেন
মনোমুগ্ধকর অভিনয় কিংবা মডেলিংয়ের গুণে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রতিটি বাসার ড্রইংরুমে। তাদের নিয়ে আড্ডা জমত পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানে। টেলিভিশন খুললেই তাদের দেখা যেত নিয়মিত। বলা হচ্ছে সেই সব অভিনয়শিল্পী-মডেলের কথা, যারা ছিলেন টিভি নাটক-অনুষ্ঠান-বিজ্ঞাপনের সোনালি যুগের চালক। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কাজ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বাইরে। অনেকে আবার কাজ করছেন পর্দার আড়ালে কিংবা অন্য ভুবনে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের মনে রেখেছে। আমাদের আজকের আয়োজন তাদের মধ্য থেকে চার তারকাকে নিয়ে। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ
শামস সুমন
মঞ্চ থেকে অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন অভিনেতা শামস সুমন। এর পর তিনি কাজ করেছেন অসংখ্য টিভি নাটকে। একসময় টিভি নাটকের নিয়মিত মুখ ছিলেন। ছোট পর্দার গণ্ডি পেরিয়ে বড় পর্দায় কাজ করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই অভিনেতা। ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’, ‘জয়যাত্রা’সহ বেশ কিছু ছবিতে নিখুঁত অভিনয়দক্ষতা দিয়ে খুব সহজেই শামস সুমন দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। যে কোনো চরিত্রের মাঝেই নিজেকে ধারণ করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার।
সম্প্রতিকালে তাকে টেলিভিশন কিংবা সিনেমা- কোনো মাধ্যমেই আর দেখা যায় না। নব্বইয়ের দশকের টিভি দর্শকরা আজও তাকে খুঁজে ফেরেন। বর্তমানে একটি ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন শামস সুমন। এ ছাড়া রেডিও ভূমিতে স্টেশন চিফ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি টিভি নাটকের শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী
একটা সময় দেশের নাট্যাঙ্গনে ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীর ঢের জনপ্রিয়তা ছিল। অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটকে তিনি কাজ করেছেন। টিভি নাটকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি অভিনয় করেন চলচ্চিত্রেও। সেখানেও শ্রাবন্তী ছিলেন সফল। ‘রং নাম্বার’ ও ‘ব্যাচেলর’ ছবি দুটিতে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি। অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও হঠাৎ করেই মিডিয়া থেকে হারিয়ে যান শ্রাবন্তী।
মূলত ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরই শোবিজ দুনিয়া থেকে পুরোপুরি বিদায় নেন এই অভিনেত্রী। সর্বশেষ ২০১০ সালে শ্রাবন্তী অভিনয় করেন নূরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’ নাটকে। ২০১৮ সালে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সেই সংসারে তার দুটি মেয়ে। বর্তমানে তাদের নিয়ে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাস করেন শ্রাবন্তী।
পল্লব চক্রবর্তী
একসময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা পল্লব চক্রবর্তী। বিটিভি যুগের সময় হয়েছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপনের মডেল। পরবর্তী সময়ে অভিনয় করেছেন অসংখ্য প্যাকেজ নাটকে। অভিনয়ে পল্লবের অভিষেক ঘটে ১৯৯৫ সালে। আরেফিন বাদলের ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নাটকে অতিথি শিল্পী ছিলেন তিনি ও তানিয়া আহমেদ। এ ছাড়া চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন পল্লব। শাহীন সুমন পরিচালিত ‘বিয়েবাড়ি’ নামের সেই চলচ্চিত্রে আরও ছিলেন শাকিব খান ও রোমানা।
অভিনয় ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করলেও একেবারেই হঠাৎ করেই মিডিয়ার আড়ালে চলে যান পল্লব। ২০১৪ সালে তিনি ‘হঠাৎ দেখা’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে ফেরেন, তবে অভিনয়ে আর নিয়মিত হননি। এখন সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় নিজের ফ্যাক্টরিতেই ব্যস্ত থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া অনাথ দুস্থ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি এনজিও পরিচালনা করছেন পল্লব।
রুমানা রশিদ ঈশিতা
একটা সময় ছিল, যখন ছোট পর্দায় বেশ দাপুটে অভিনেত্রী ছিলেন রুমানা রশিদ ঈশিতা। নতুন কুঁড়ি দিয়ে পথচলা শুরু করে ছোটবেলা থেকেই টেলিভিশন জগৎ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। একসময় প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করা ঈশিতা নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু কাজ পরিচালনাও করেছেন। এ ছাড়া তার সাতটি গানের অ্যালবাম ও দুটি বইও প্রকাশ হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে প্রায় প্রতিটি ঘরেই বেশ পরিচিত ছিলেন ঈশিতা।
২০০৩ সালে বিয়ে করার পর তিনি সংসার ও চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। টিভিতে নিয়মিত আর দেখা মেলে না ঈশিতার। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মিডিয়া থেকে একেবারেই দূরে ছিলেন। সম্প্রতি ঈশিতা-ভক্তদের জন্য নিয়ে এসেছেন লাকী আখন্দের কালজয়ী গান ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’। এ গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন ছেলে যাভীর দৌলা।