বর্তমান বৈশ্বিক মহামারিতে মানসিক স্বাস্থ্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনাভাইরাসকে (কোভিড ১৯) মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। এই সংকটকালীন সময়ে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।
অহেতুক কোনো সংবাদ পড়বেন না, শুনবেন না। এতে করে আপনার মধ্যে ভীতি সঞ্চার হবে। সুতরাং বিশ্বস্ত জায়গা থেকে খবর দেখুন অথবা পড়ুন অথবা শুনুন। অযথা কোনো খবর পড়ে প্যানিক হওয়া যাবে না। পরিবারের সবাইকে এই তথ্যটি প্রদান করুন। আপনার মধ্যে যদি ভীতি ভাব বেশি থাকে তাহলে সংবাদ দেখা বাদ দিন। অন্যান্য রুটিন কাজসমূহ বাসায় বসে করুন। পরিবারের সবার সঙ্গে ভালো সময় কাটান। হাসির নাটক, সিনেমা দেখুন। নিয়মিত নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করুন। মোবাইলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের খোঁজ-খবর রাখুন। শিশুদের জন্য এই সময়টি খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়। তাদের পড়াশোনা যেন নিয়মিত হয় সে দিকে খেয়াল রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমন গুরুত্বপূর্ণ তাদের অন্যান্য সৃজনশীল কাজে উৎসাহ প্রদান করা যেন, তাদের মানসিকভাবে বিষন্নতা ভাব না আসতে পারে। অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সময় কাটান, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলুন। তাদের সামগ্রিক খোঁজ-খবর নিন। এতদিন হয়তো কাজের চাপে অনেক কিছু জানা হয়ে উঠেনি সেগুলো জেনে নিন। তাতে করে আপনার ও আপনার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে অনেক বেশি সখ্যতা গড়ে উঠবে যেটা এই মুহূর্তে অনেক বেশি প্রয়োজন।
বাসায় কীভাবে ভালোভাবে সময় কাটানো যাবে অথবা কী করলে ভালো সময় কাটানো যাবে সেগুলো নিয়ে সন্তানের সঙ্গে বসুন। সবাই মিলে পরিকল্পনা করুন। এতে আপনার নিজের এবং আপনার ছেলে-মেয়ে সবার বিষণ্নতাভাব অনেক খানি কেটে যাবে।
প্রতিদিন যেকোনো একটি সময় বেছে নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে ব্যায়াম করুন। কী ব্যায়াম করবেন, কতক্ষণ করবেন তা ইন্টারনেট ঘেটে দেখে নিন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার মধ্যে বিষণ্নতা ভাবটি চলে যাবে। স্বামী-স্ত্রী ভালো কিছু মুহূর্ত কাটান। স্বাভাবিক সময়ে হয়তো কাজের চাপে খুনসুটি করা ভুলে গিয়েছিলেন, এখন তো কিছু সময় পাওয়া গেল সেই খুনসুটি শুরু করুন। দেখবেন মন ভালো হয়ে গিয়েছে।
প্রতিদিন রাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পরের দিন এর রুটিন তৈরি করে নিন কি করে কাটবে আগামী দিন। দেখবেন সত্যিই পরের দিন অনেক উপভোগ্য হবে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে মাদক, নেশা, মদ, সিগারেট কখনো আপনাকে মানসিক শান্তি এনে দিবে না। সুতরাং এগুলোর ধারে কাছেও কখনো যাবেন না। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হোন কেউ বিষণ্নতায় অথবা স্ট্রেস অথবা দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিনা। সবাইকে নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা করতেই হবে। বাসার বাইরে কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না, সেটা যারা পরিবারের বয়োজৈষ্ঠ্যরা আছেন তাদেরকে কঠোরভাবে পালন করতে হবে আর তাতেই সুনিশ্চিত হবে আপনার ও আপনার পরিবারের উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য ও করোনামুক্ত জীবন।
লেখক : ডা. এস এম সহিদুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।