263659

পোড়াবাড়ির চমচমের দুইশ’ বছর

পোড়াবাড়ি—টাঙ্গাইল জেলার একটি গ্রামের নাম। অথচ সারাদেশের মানুষই কম-বেশি গ্রামটিকে চেনে। কারণ মিষ্টির রাজা চমচমের বিস্তৃতি এ পোড়াবাড়ি থেকেই। টাঙ্গাইল শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির ঐতিহ্য প্রায় দুইশ’ বছরের পুরোনো। এক সময়ে ‘চমচমের রাজধানী’ হিসেবেও পরিচিত ছিল এই গ্রাম।
লোকমুখে প্রচলিত, ব্রিটিশ আমলে ধলেশ্বরী নদী দিয়ে আসাম, কলকাতার স্টিমার চলাচল করতো। আসাম থেকে যশোরথ হালই নামের এক মুনি এসেছিলেন পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম গোরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর ধলেশ্বরী নদীর পানি দিয়ে বিশেষ উপায়ে চমচম তৈরি করেন। এখনও হালইরা এখানে চমচম বানিয়ে থাকেন। এছাড়া, ঘোষ এবং পালেরাও বংশানুক্রমিকভাবে চমচম তৈরির সঙ্গে যুক্ত।

পোড়াবাড়ির চমচমের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আছে চারাবাড়ির নামও। তবে এ গল্পের প্রচলণ খুবই কম। প্রায় দুইশ’ বছর আগে চমচমের কারিগররা নাকি প্রথমে চারাবাড়ি গ্রামে আসেন। সেখানকার নদীর পাড়ে একটি ঘাট তৈরি করেন তারা। সেই ঘাটেই বানানো হতো চমচম। একসময় নদীতে চর পড়ে যায়। নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লোকে আর ভিড় করে না ঘাটে। তখন থেকে পোড়াবাড়ি গ্রামেই চমচম তৈরি হতে থাকে।

পোড়াবাড়ির চমচম

এক সময়ে ‘চমচমের রাজধানী’ হিসেবেও পরিচিত ছিল পোড়াবাড়ি

পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদের মূল রহস্য নিহিত রয়েছে ধলেশ্বরী নদীতে! দক্ষ চমচম কারিগরদেরও টাঙ্গাইলের বাইরে গিয়ে এমন সুস্বাদু ও নরম চমচম তৈরি সম্ভব নয়। কারণ ধলেশ্বরীর পানি স্বচ্ছ আর এর পাড়ে জন্মায় সবুজ ঘাস। দেশি গরুর দল ধলেশ্বরীর চরের ঘাস খেয়ে খাঁটি দুধ সরবরাহ করে। চমচম তৈরির উপকরণ বলতে তো দুধ আর চিনি। প্রবীণ কারিগরদের অনেকেই বলেন, ধলেশ্বরীর পানি ছাড়া এমন চমচম তৈরি সম্ভব নয়।

কারিগরদের এমন শ্রুতির প্রমাণও মিলেছে এক ঘটনায়। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একবার বলেছিলেন, ব্রিটিশ আমলে সন্তোষের জমিদার পরিবারের এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল কলকাতায়। সেই অনুষ্ঠানের অতিথিদের পোড়াবাড়ির চমচম খাওয়ানোর কথা ভাবলেন জমিদার। তিনি পোড়াবাড়ি থেকে কয়েকজন নামি কারিগর নিয়ে গেলেন কলকাতায়। কিন্তু কয়েকদিন চেষ্টা করেও তারা উন্নত মানের চমচম বানাতে পারেননি।

তবে এখন চমচমের তীর্থ পোড়াবাড়িতে এর জৌলুস ঠিক আগের মতো নেই। এখন টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে পাঁচ আনি বাজারে মিষ্টির দোকানগুলো সারাদিনই থাকে লোকেলোকারণ্য। ৩০-৩৫টির মতো মিষ্টির দোকান এখানে রয়েছে। সারাদেশ থেকে চমচমের অর্ডার, ঘুরতে আসাদের কিনে নিয়ে যাওয়া, ভোজন রসিক ও স্থানীয়দের চাহিদা মিলে এসব দোকানে।

সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.