263324

করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য মসজিদ বন্ধ করা কি বৈধ?

সোর্স যুগান্ততর

[প্রাককথন: মার্চের শেষের দিকে কাতারের হামদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির ইসলামিক শরিয়া ও নীতিশাস্ত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মু’তায আল খতিবের করোনাভাইরাস-কেন্দ্রিক বর্তমান ধর্মীয় পরিস্থিতির বিষয়ে আল জাজিরার ওয়েবসাইটে একটি কলাম প্রকাশিত হয়।

তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন যে থিসিস লিখে, সেটার বিষয় ছিল ‘মতনগত (টেক্স) দিক থেকে হাদিসের সমালোচনা: মুহাদ্দিসীন ও উসুলশাস্ত্রবিদদের পদ্ধতি বিশ্লেষণ’।

এ ছাড়াও তিনি হাদিস বর্ণনার অনুমতি নিয়েছেন ড. নুরুদ্দিন ইতার ও শেখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ. থেকে।

আল জাজিরায় প্রকাশিত তার বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে তিনি আলোচনাটি ১২টি পয়েন্টে বিভক্ত করেছেন। এখানে তার ভাবানুবাদ তুলে ধরছি।

এই কলামে আরব বিশ্বের কয়েকজন স্কলারের বক্তব্যের জবাব থাকলেও আলোচনাটি বিশ্বের সব দেশের মুসলিমদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ]

করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’টি বিষয় এখন সর্বোত্র আলোচিত হচ্ছে। ১. মসজিদ একেবারে বন্ধ করে দেয়া। ২. জামাত ও জুমা স্থগিত রাখা।

এ দুই বিষয়ে ধর্মীয় মহলে বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছেছে। এ দুই বিষয়েরই চরম বিরোধিতা করেছেন ড. হাকিম আল মাতিরী। শেখ মোহাম্মদ হাসান বিন দাদ্দো তার সঙ্গে সহমত পোষণ করে একটা অডিও স্কিপ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

তারা ব্যতীত আরও অনেকে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমি কমেন্ট করেছিলাম যে, তাদের সিদ্ধান্ত এক মেরুতে আর বাস্তবতার অবস্থান আরেক মেরুতে। আমার মন্তব্য শায়খ দাদ্দোর ভক্তবৃন্দদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল।

ড. হাকিম মাতিরীর বক্তব্য আমি আগের দিনের কলামে খণ্ডন করেছিলাম। আজ শেখ দাদ্দোর অবস্থান সম্পর্কে কিছু কথা লিখব। তার আলোচনায় আমি হতভম্ব ও ব্যথিত হয়েছি।

কারণ, তার আলোচনা ও প্রমাণপদ্ধতি ইসলামে ফুকাহাদের পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং তা ওয়াজ-নসিহত করে বেড়ানো বক্তাদের পদ্ধতির সঙ্গে অধিক মিল রাখে।

১. এখানে আমাদের বুঝতে হবে যে, মসজিদ একেবারে বন্ধ করে দেয়া এবং জুমা ও জামাত স্থগিত করে দেয়া— এ দুটি বিষয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। অথচ বেশিরভাগ মানুষই এ দুয়ের মাঝে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।

শেখ মাতিরি ও দাদ্দো দুজনই— উপরোক্ত দুই বিষয়েরই বিরুদ্ধে। অবশ্য তাদের দু’জনের মাঝে খুঁটিনাটি বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।

দাদ্দোর মতে, মসজিদে জুমা ও জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে তা হতে হবে সীমিত পরিসরে। এতে করে আল্লাহর ঘর মসজিদও বন্ধ হবে না, আবার চলমান ভাইরাস সংকট থেকেও মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

২. ফিকহের বিচার-নিক্তিতে দাদ্দোর আলোচনা ও প্রমাণাদি অত্যন্ত দুর্বল। তার আলোচনাপদ্ধতি ফিকহশাস্ত্রে একেবারেই অপরিচিত।

তিনি অডিও স্কিপটিতে বলেছেন, ‘কোনোভাবেই মসজিদকে বন্ধ করা যাবে না। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ভূমি মসজিদ। এখানে রয়েছে কল্যাণ, বরকত ও রোগের আরোগ্যতা। এখানে ফেরেশতাদের বসবাস। মসজিদের দরজায় বসে তারা আগত মুসল্লিদের নাম লিখতে থাকেন একের পর এক।

আর নামাজ সব সংকট ও সমস্যার সমাধানকারী। কিন্তু ক্ষতির আশঙ্কায় জামাতে জনসংখ্যা সীমিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে জামাতে উপস্থিত হতে পারবে সে অবশ্যই উপস্থিত হবে। আর যে নিজের উপর অথবা অন্যের উপর ক্ষতির আশঙ্কায় জামাতে উপস্থিত হতে পারবে না সে যেন অন্তত খুতবাসহ জুমার নামাজ হতে বঞ্চিত না হয়।

যে সব দেশে মুসল্লিদেরকে মসজিদে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তারা নিশ্চিত এর কোনো না কোনো বিকল্প খুঁজে নিবে। অথচ মসজিদ থেকে হাসপাতলে অথবা বাজারে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। সেগুলো তো বন্ধ করা হচ্ছে না।

সতর্কতা অবলম্বন ভালো বিষয়, তবে তা এমন ক্ষেত্রে হওয়া উচিত যাতে সওয়াব রয়েছে। আর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক যে, রোগ নিজে নিজে কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং কোনো উপকারও করতে পারে না।’

৩. উপরে শায়খ দাদ্দোর আলোচনার একাংশ তুলে ধরলাম। এখানেই বোঝা যায়, প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় থেকে তিনি কত দূরে। এখানে আমাদের আলোচনায় মসজিদের বরকত, নামাজের আবশ্যকীয়তা ও উপকার নিয়ে মোটেও কোনো বিরোধ নেই।

এখানে আমরা একটি বিচ্ছিন্ন ও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কথা বলছি। আমরা এমন একটা ভয়ঙ্কর বিকশিত ভাইরাসের কথা বলছি, যা জ্যামিতিক হারে মানুষকে আক্রান্ত করছে, একই স্থানে অনেক মানুষের একত্র অবস্থানের কারণে।

আর কাতার ও মুসল্লিদের মাঝে ফাঁকা বৃদ্ধি করলেও সেই রোগ সংক্রমণের মোটেও কোনো শক্ত মোকাবেলা হবে না।

এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব (social distance) বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে ইতালি ও স্পেনে করোনাভাইরাস যে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তার মুখোমুখি হতে বাধ্য হব আমরা।

তাই অন্যান্য দেশে যেভাবে লকডাউন ও কোয়ারেন্টিনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে আমাদেরকেও সেদিকে এগোনো দরকার।

৪. শায়খের কথার একাংশ অন্য অংশের বিরোধী। তিনি যেহেতু পুরোপুরি জামাত বন্ধের বিরুদ্ধে তাই তিনি একবার বলছেন, জামাতকে সীমিত করা হবে, আবার অন্যদিকে বলছেন, যারা উপস্থিত হতে পারবে তাদের উপস্থিত হওয়া উচিত।

এখন আমাদের কথা হল, কতজন মানুষকে আপনি আপনার মসজিদের জামাতে ঠাঁই দিবেন? কিছুসংখ্যক ওজরগ্রস্থ লোক বাদে সক্ষম সবাই তো চলে আসবে জামাতে।

আরেকটি প্রশ্ন, তারা কি বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থিত হবে নাকি নির্দিষ্ট জামাতের ওয়াক্তে? যদি তারা জামাতের ওয়াক্তেই হাজির হয়, তাহলে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়ার কোনো মানে নেই, কেবল লোকভুলানো উদ্দেশ্যপূর্ণ কথা ছাড়া।

তিনি আরও বলেছেন, ‘মসজিদে আসতে না দেয়া হলে লোকেরা এর বিকল্প তালাশ করবে। মসজিদের ক্ষেত্রে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা বাজারে ও হাসপাতলে অধিক।’

এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বলে রাখা উচিত। ১. জুমা ও জামাতে নামাজ পড়ার আবশ্যকীয়তা কেবল মসজিদের সঙ্গেই নির্দিষ্ট নয়। ফিকহে ইসলামীতে এর বিকল্প বিদ্যমান রয়েছে।

মসজিদে জামাতের ক্ষেত্রে বিকল্প হল, তা ঘরের সদস্যদের মাঝেও সংগঠিত হতে পারে। আর জুমার ক্ষেত্রে বিকল্প হল জোহরের সালাত আদায়।

২. আর তিনি যে বাজারের সঙ্গে মসজিদের তুলনা করেছেন, সে অনুযায়ী মসজিদ বন্ধ করা কিন্তু আবশ্যক হয়ে পড়ে। কারণ, বেশকিছু দেশে মসজিদ যেমন বন্ধ রাখা হয়েছে তেমনিভাবে বাজার মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

উপরোক্ত এই কথাটি আমরা তখনই বলব যখন আমরা ভাবব যে, বাজার ও মসজিদের পরিস্থিতি অভিন্ন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতানুযায়ী আমরা বুঝতে পারছি যে, উভয় স্থানের ভয়াবহতা অভিন্নরকম নয়। বরং মসজিদে আশঙ্কা ও ভয়াবহতা বেশি।

কারণ, এক মিটারের চেয়ে কম দূরত্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। তো একই স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা, অনেক মানুষের একসঙ্গে সেজদা করা এবং আবদ্ধ স্থানে কাছাকাছি দাঁড়ানো— কতটা বিপদজনক হতে পারে।

এটা দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য স্থানে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যদিও আছে, তবুও মসজিদে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সে সব স্থানের চেয়ে বেশি।

৫. শেখ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, উসিলা ও মাধ্যম প্রকৃতপক্ষে কোনো উপকার করতে পারে না, যদিও নিয়ম অনুযায়ী তা গ্রহণ করতে হয়। তার এই অবস্থানটি সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

আর কোনো সন্দেহ নেই যে, এমনতর কথাবার্তা তার কট্টর আশআরী মাজহাবের অনুসরণ হতে আগত। এখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।

আশআরীরা মনে করে, ‘আসবাব বা উপায় ও উপকরণ— কোনো উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না। ক্ষতি ও উপকারের কোনো মৌলিক অস্তিত্ব নেই, বরং মানুষের আদত অভ্যাসের জন্ম দিয়েছে।’

কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এখন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর হুকুমে ও তার প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে, উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা উপকারী বিষয়। এটা মানুষের জন্য একটা বেসিক জ্ঞান।

৬. মুসলিম বিশ্বের বড় বড় ফাউন্ডেশন ও ফতোয়া সংস্থা বর্তমানে জুমা ও জামাত স্থগিত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেমন আল ইত্তেহাদুল আলামিয়্যু লি-উলামায়িল মুসলিমিন (International Union of Muslim Scholars), হাইয়াতু কিবারিল উলামাই ফিল আজহার (আল আজহারের শীর্ষস্থানীয় ওলামা সংঘ), হাইয়াতু কিবারিল উলামাই ফিস সৌদিয়া (Council of Senior Scholars Saudi Arabia), মাজলিসুল ইফতা ফিল ইমারাত (ইফতা কাউন্সিল, আরব আমিরাত), দারুল ইফতা ফিল উর্দুন (General Iftaa’ Department, Jordan), রিয়াশাতুশ শুঊনিদ দীনিয়া ফি তুর্কিয়া (Directorate of Religious Affairs, Turkey)।

এ ছাড়াও আছে মরক্কোর আল হাইআতুল ইলমিয়্যা, কুয়েত ও কাতারের ওয়াকফ মন্ত্রণালয়, আম্মান ও সিরিয়া।

৭. শায়খ ইবনে উসাইমিন রহ. সহীহ বুখারীর টীকায় লিখেছেন, ‘মসজিদ, কাবা ও ইবাদতের অন্যান্য স্থান, যদি প্রয়োজনের কারণে বন্ধ করা হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রে এটা বলা যাবে না যে, আল্লাহর ঘরে আল্লাহর জিকির ও স্মরণ করা হতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

কেন না কখনও কখনও প্রয়োজনে অথবা কোনো বিশেষ স্বার্থে এমনটি করার অবকাশ রয়েছে।’

৮. আর এটিই প্রথম নয় যখন মসজিদে জুমা জামাতকে বন্ধ রাখা হচ্ছে। বরং ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনার নজির আমরা দেখতে পাই।

ঐতিহাসিকগণ এ সব ঘটনা কিতাবের পাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। ৬৫৬ হিজরীতে বাগদাদে জুমা, জামাত ও মসজিদ বেশ কয়েক মাসের জন্য বন্ধ ছিল।

৮২৭ হিজরীতে মক্কায় একটা মহামারী দেখা দেয়, তখন দিনে প্রায় চল্লিশজন লোকের মতো মারা যেত। ইবনে হাজার আসকালানী সে সময় সম্পর্কে বলেছেন, মক্কার একজন মাত্র ইমামের সঙ্গে দু’জন মুসল্লি নামাজ পড়ত।

বাকি ইমামগণের সঙ্গে কেউ নামাজ পড়ত না। আর তারা ও সব জনগণ একাকী নামাজ আদায় করে নিত।

জাবরাতি তার ইতিহাসগ্রন্থে লিখেছেন, ‘১২১৫ হিজরীতে মিশরে ও শামে অনেক সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুর দরুন মসজিদগুলোতে আজান ও ইমামতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’

৯. জোরালোভাবে এখানে বলে রাখা উচিত, এখানে আমরা একটা ফরজ বিধানকে উঠিয়ে দিতে চাচ্ছি না। বরং এর একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প গ্রহণ করতে চাচ্ছি। আর জামাত ও জুমার সালাতের ক্ষেত্রে তো খুব সামান্য কারণেও শরীয়তে বিকল্প গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

যেমন সফর, অসুস্থতা, ভয় ইত্যাদি। কোনো মানুষই ফরজ বিধানকে উঠিয়ে দিতে পারে না। বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিকল্প গ্রহণ করতে পারে।

১০. একজন মুফতির জন্য এটা সুস্পষ্ট যে, বাস্তবতার আলোকে ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই, অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ করোনাভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি।

এটা এখন শুধু ব্যক্তিবিশেষের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং তার আক্রান্ত হওয়া আরও অনেক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কারণ হতে বাধ্য।

সুতরাং ক্ষতি শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অনেক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই সময় একজন মুফতির ব্যক্তিগত মতামত বিরাট একটা দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে, যদি সে পরিস্থিতি বিবেচনা না করে, মন-মর্জি মোতাবেক ফায়সালা দেয়।

একজন মুফতির দায়িত্ব শুধু ফতোয়া দেয়া নয়। বরং ইসলামী ট্র্যাডিশনে আমরা দেখতে পাই, ফকিহগণ সর্বদা শরীয়তের সিদ্ধান্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে বিবেচনায় রাখতেন।

১১. যদি আমরা কুরআন সুন্নাহ ও ফিকহে ইসলামী অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, পক্ষে-বিপক্ষে উভয়ই কুরআন ও হাদিস থেকে দলিল তুলে আনছে। কিন্তু সামঞ্জস্য করার দায়িত্ব ফিকহে ইসলামীর।

আর ফিকহে ইসলামী আমাদেরকে বলে, উপকার সাধনের আগে ক্ষতির দমন করা উচিত। জামাত ও জুমার মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সওয়াব আছে— সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই উপকারের চেয়েও তার মধ্যে যে অপূরণীয় ক্ষতি লুকিয়ে রয়েছে, সেটা রোধ করা ইসলামে আরও বেশি জরুরি।

১২. আমি আবার জোরালোভাবে বলছি, এমন কোনো মুমিন পাওয়া যাবে না, যে স্বেচ্ছায় অথবা ঘৃণায় মসজিদ বন্ধ করার কথা বলছে।

অন্যদিকে যারা ইসলামের বৈশিষ্ট্য তথা জামাত ও জুমা চালু রাখতে চাচ্ছেন, তাদের আবেগও আমরা অনুভব করতে পারি। কিন্তু পরিস্থিতি ও দুর্যোগের কারণে তো হুকুম পরিবর্তন হয়ে যায়।

আর মানুষের প্রাণ বাঁচানো হচ্ছে জুমা ও জামাত বাকি রাখার চেয়ে বড় ফরজ। এটা কোনো ব্যক্তিগত মাসাআলা নয়। এটা সামগ্রিক জনতার স্বার্থের মাসআলা।

এটা আজিমত (দৃঢ়তা) ও রুখসাতের (সহজতা) মাসআলা নয়। বরং বর্তমানে আজিমতই হচ্ছে, জুমা ও জামায়াতকে স্থগিত বা সীমিত রাখা। আমরা সবার জন্য আল্লাহর কাছে সুস্থতা, শান্তি ও ক্ষমা কামনা করছি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.