241108

প্রেসিডেন্ট পার্কে যেমন কেটেছে এরশাদের শেষ জীবন

অনলাইন সংস্করণঃ- রাজধানীর বারিধারার দূতাবাস এলাকার ১০ নম্বর প্লট। এই প্লটেই ২০০০ সাল থেকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ক। বাড়িটির ছয়তলার সাত হাজার ৪২ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে কেটেছে তার জীবনের শেষ ১৭ বছর।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ব্যাক্তিগত গাড়িচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘জীবনের শেষ দিনগুলোতে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন এরশাদ। শেষ দিনগুলোতে স্যার মৃত্যু ভয়ে ভীত থাকতেন। তিনি যখন বাইরে বের হতেন, প্রতিবার বলতেন, মান্নান ঘরে ফিরতে পারবো তো?’

১৯৯৯ সালে কনকর্ড ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তিতে গড়ে ওঠে প্রেসিডেন্ট পার্ক, যে নামটি কনকর্ড ডেভেলপারেরই দেওয়া। ১০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এরশাদের ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে তিনটি ফ্ল্যাট। তার বাসার নিচের গ্যারেজে রয়েছে সাতটি নিজস্ব গাড়ি। যার মধ্যে মারসিটিজ বেঞ্জ, প্রাডো, রেঞ্জ রোভার ও পাজেরো গাড়িও রয়েছে। এছাড়াও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালকের সংখ্যা ছিল তিনজন।

এরশাদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘গত ২৫ জুন স্যারকে নিয়ে বাসা থেকে সিএমইচে পাঁচবার যাতায়াত করেছি। চিকিৎসকরা দুইদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে বললেও শুনতেন না তিনি।’

২০০২ সালে লন্ডন থেকে ফেরা বিদিশাকে সঙ্গে করে প্রেসিডেন্ট পার্কে বসবাস শুরু করেন এরশাদ। জীবনের শেষ সময়ে বিলাসবহুল এ ফ্ল্যাটে ছেলে এরিককে নিয়ে ছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট পার্কের নিরাপত্তা প্রহরী একরাম হোসেন বলেন, আব্দুস সাত্তার, নিপা ও ওহাব স্যারকে সব সময় দেখাশোনা করতেন। এই বাসায় কোনোদিন রওশন এরশাদ আসেননি বলেও তিনি জানান।

শারীরিকভাবে ফিট থাকতে পছন্দ করতেন সাবেক এ সেনাপ্রধান। ষষ্ঠতলার ওপরেই রয়েছে তার ব্যক্তিগত ব্যায়ামাগার। শেষের দিনগুলোতে হুইল চেয়ারে বসেই ব্যায়াম করতেন তিনি।

এরশাদের বাবুর্চি মতিউর রহমান বলেন, ‘সকালে শরীরচর্চা শেষে ফলের জুস ও পাউরুটি খেতে ভালোবাসতেন তিনি। দুপুরে পাবদা মাছের ঝোল তার খুব পছন্দের ছিল। সিলেটের হাওর থেকে এই মাছ নিয়ে আসা হতো। খাবার শেষে দুধের পায়েস ছিল তার প্রিয় খাবার। শেষের তিনমাস ব্যায়াম না করলেও তিনি বডি ম্যাসাজ করাতেন।

প্রেসিডেন্ট প্যালেসে গত পাঁচমাস ধরে বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীরা ছাড়াও গড়ে আটজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পাহারা দিতেন। পুলিশ সদস্য জহির রায়হান বলেন, ‘বাইরে থেকে এরশাদ স্যার যখন আসতেন, তখন তার হুইল চেয়ার উঁচু করে আমি লিফট পর্যন্ত পৌছে দিতাম। শেষবার গত ২৬ জুন যখন তিনি অসুস্থ হলেন, আমি তাকে সঙ্গে করে সিএমএইচে গিয়েছিলাম। তিনি ফিরবেন না কোনোদিন তা আমি ভাবিনি।’

সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও এইচ এম এরশাদের ঘনিষ্ট এইচ এম গোলাম রেজা জানান, সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী মোশারফ বারিধারার ১০ নম্বর কূটনৈতিক প্লটটি কিনেছিলেন। এরপর তিনি বে ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের চেয়াম্যান মোহাম্মদ ইফতারের কাছে বিক্রি করে দেন। তার কাছ থেকে তাহমিনা ও সুলতানা আরেফিন এই প্লটটি কেনেন। তার কাছ থেকে এইচ এম মোর্শেদ কিনে বড় ভাই এরশাদের নামে দানপত্র করে দিলে প্লটটি সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মালিকানাধীন হয়। বর্তমানে তার ফ্ল্যাটটি ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে।

 

সূত্র আমাদেরসময়.কমঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.