231410

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ওয়াগস’ এখন লন্ডনে

অনলাইন সংস্করণঃ- ‘ওয়াগস’- ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের সুবাদে ক্রীড়াঙ্গনের ‘ফার্স্ট লেডি’দের এটাই এখন পোশাকি পরিচয়। ‘ওয়াইফ এন্ড গার্লফ্রেন্ডস’ কে সংক্ষেপ করে এই নামকরণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধরণটার বিদেশ সফরের সুযোগ নেই, শুধু স্ত্রীদের নিয়েই ‘ওয়াগস।’ আর সেই তাদের বড় একটা অংশ এখন লন্ডনে।

সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে রোমান আহমেদ, শিশির নামেই যিনি সাধারণের মাঝে পরিচিত, দলের সঙ্গে আছেন সেই আয়ারল্যান্ড সফর থেকেই। ২ জুন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের দিন উড়ে আসবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সহধর্মিনী সুমনা হক সুমি। তবে গত পরশু এসেছেন ক্রিকেট দলের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া দু’বোন মিষ্টি ও মন্ডি, যারা ভায়রা-ভাইয়ের পরিচয়ে গেঁথেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমকে। আর কারোর স্ত্রী আসেননি। এমনকি ‘বিগ ফাইভে’র অন্যতম তামিম ইকবালের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকাও নেই বিশ্বকাপের শহরে।

তামিম অবশ্য কোন সফরেই স্ত্রী-পরিবারকে সঙ্গে রাখেন না। এ সময় পরিবারের উপস্থিতি তার মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে- তাই টেলিফোন কিংবা স্কাইপিতেই স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে প্রাত্যহিক যোগাযোগ রাখেন বাঁহাতি এ ওপেনার। মুশফিক এবং মাহমুদের ব্যাপার পুরো উল্টো। স্ত্রী-সন্তান এলেই বরং খেলায় বেশি করে মনোযোগী দেখা যায় তাদের দু’জনকে। সফরকালে স্ত্রী-সন্তানের উপস্থিতি সাকিবের মাঠের ক্রিকেটে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

শিশির আর এই দম্পতির একমাত্র সন্তান আলাইনা অব্রিকে তো প্রায় প্রতি সফরেই টিম হোটেলে দেখা যায়। তাই ভালো-মন্দের ব্যবধান রেখা টানা যাচ্ছে না। ওদিকে তামিমের মত মাশরাফিও সফরকালে স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে রাখার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী নন। তবে শেষ বিশ্বকাপ বলেই শুধু স্ত্রী আর দুই সন্তান নয়, বাবা এবং ভাইকেও উড়িয়ে আনছেন ইংল্যান্ডে। তবে এই সেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসা মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ নাকি বিশ্বকাপ চলাকালে ‘ব্যাচেলর’ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের স্ত্রীরা আসছেন না ইংল্যান্ডে।

টুর্নামেন্ট চলাকালে খেলোয়াড়দের স্ত্রী কিংবা বান্ধবীদের উপস্থিতি নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। অ্যাশেজ চলাকালে স্ত্রী কিংবা বান্ধবীদের সফরসঙ্গী করার ওপর নানা সময়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড। কখনো কখনো সঙ্গীদের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। আর এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত দেখা যায় দেশ দু’টির মিডিয়ায়। গ্যালারিতে ‘ওয়াগ’দের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারী করে টিভি এবং স্টিল ক্যামেরা। কোন খ্যাতিমানের ওয়্যাগ কতটা আকর্ষণীয়, সেটির রেটিং হয়।

মাঠে বসে খেলা দেখা ছাড়া তো আর কোনো ব্যস্ততা নেই। তাই ইওয়েন মরগ্যানদের জীবনসঙ্গীরা কোথায় কী শপিং করলেন যে খবর নেওয়ার জন্য রিপোর্টার লেলিয়ে দেয় এ প্রান্তের ট্যাবলয়েডগুলো। সে বিবেচনায় বাংলাদেশি ‘ওয়াগ’দের পথচলা অনেক নির্ঝঞ্ঝাট। পাপারাজ্জির অতর্কিত হামলার আশঙ্কা নেই, পরদিনের পত্রিকায় খবর হওয়ারও দুঃশ্চিন্তা নেই। অবশ্য সাকিব-পত্নী শিশিরের নিজস্ব ফ্যান ফলোয়িংও আছে। তাছাড়া প্রায়ই ছবিতে, ফুটেজে দেখা যায় তাকে। মাশরাফির স্ত্রী সুমিকেও কমবেশি চেনেন বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শকরা। ট্যুর চলাকালে স্বামীর আশেপাশে থাকেন না আয়েশা, তবে তাকেও অনেকে চেনেন। তুলনামূলকভাবে মাহমুদ এবং মুশফিকের স্ত্রীদের পরিচিতি কম, পর্দার আড়ালেই বেশি থাকেন যে।

‘ওয়াগ’ দুনিয়ায় অবশ্য সবচেয়ে বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া অ্যাডামস বেকহ্যাম। ডেভিড বেকহ্যাম যেমন আকর্ষণীয়; তেমনি স্পাইস গার্লসের সদস্য ভিক্টোরিয়ারও রয়েছে সেলিব্রিটি মর্যাদা। তাই তাকে ভালবেসে ব্রিটিশ মিডিয়া নাম দিয়েছিল ‘কুইন অব ওয়াগস’। তবে বৃটেনেরই সানডে টাইমসের দাবি, ওয়াগ গোত্রের শিরোমনি ইংলিশ ফুটবলার অ্যাশলে কোলের সাবেক স্ত্রী শেরিল টুইডি। অবশ্য ইংলিশ মিডিয়া যতই ওয়াগদের নিয়ে আহলাদ করম্নক না কেন, দলের সঙ্গে এদের অবাধ ঘোরাঘুরি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছেও প্রায়ই।

একদল আছেন টুর্নামেন্ট চলাকালে ওয়াগদের টিম হোটেলে থাকার ঘোরবিরোধী। তবে পড়ে থাকারা দলে ভারি বলেই বিতর্কের পরও স্ত্রী-বান্ধবীরা তারকাদের সঙ্গে থাকার অনুমতি পান। বাংলাদেশে অবশ্য এ নিয়ে কোন হৈ চৈ নেই। মাশরাফি-সাকিবরা চাইলেই সফরে আনতে পারেন তাদের পরিবারকে। কেউ আনেন না স্বেচ্ছায়, কেউ অপেড়্গায় দিন গোণেন কবে স্ত্রী-পুত্রের মুখ দেখবেন।

অধিনায়কের পরিবার বিশ্বকাপে আসার খবরে সামান্য অবিরাম আড্ডার দিনও ফুরিয়েছে। অবসরে আড্ডার জন্য এই একটা দরজা সবসময়ই খোলা। কিন্তু সেটিও বন্ধ এখন। সাকিবের একই অবস্থা। মুশফিক কোনোকালে রুমে রুমে গিয়ে আড্ডাবাজি করেন না, পরিবার এসে পড়ায় মাঠ আর টিম মিটিংয়ের বাইরে তার দেখা পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মাশরাফির রুমে আড্ডার নিয়মিত সদস্য মাহমুদকেও এখন নিজের কাজেই বেশি সময় কাটাতে হবে। অতঃপর মাঠের বাইরে বাকিদের আড্ডার ভরসা তামিম ইকবাল। তবে তিনি নিজের রুমে আড্ডা বসান না। দলবেঁধে রেস্টুরেন্টে কিংবা হোটেলের লবিতে সময় কাটানোই তার পছন্দ। তাতে ধরেই নেওয়া যায় যে, বিশ্বকাপের বাকি সময়টায় লবিতে অবস্থান নিলেই ক্রিকেটারদের দেখা মিলবে!

 

সূত্র কালেরকণ্ঠঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.