231144

সায়েন্স ফিকশন মুভির যেসব ভবিষ্যৎবাণী এখন বাস্তব

অনলাইন সংস্করণঃ- বিশ্বব্যাপী সায়েন্স ফিকশন মুভিপ্রেমীরা হরহামেশা নতুন নতুন মুভি রিলিজের অপেক্ষায় থাকে। আর যদি কোনো বিশেষ ও অকল্পণীয় বিষয়ে মুভি নির্মাণের খবর পাওয়া যায় তাহলে সেটা রিলিজের আগে দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখার মতো হয়।

রোমান্টিক ও সামাজিক মুভিগুলোর তুলনায় সায়েন্স ফিকশন মুভির প্রতি তারা বেশি আগ্রহী থাকে। কারণ এগুলোতে তারা এমন কিছু পায় যা বর্তমানে কল্পণাও করা দুষ্কর।

কিন্তু এটা অসম্ভব নয়, টেকনোলজি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অদম্য গতির মাধ্যমে মুভিতে দেখানো সেসব অকল্পণীয় ধারণাগুলোও কিছুদিনের মধ্যেই বাস্তবে পরিণত হতে দেখবেন দর্শকরা।

এ যাবত কয়েকটি সায়েন্স ফিকশন মুভিতে দেখানো অলৌকিক ধারণাগুলো এখন আমাদের সামনে বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি ২০০১ সালে রিলিজ হওয়া ‘আই স্পেস অডিসি’ ও ‘দি টারমিনেটর’ মুভি দুটিতে দেখানো ধারণাগুলো এখন আমাদের সামনে আটপৌরে বাস্তব!

গত কয়েক দশকে মুক্তি পাওয়া সায়েন্স ফিকশন মুভির সেইসব অলৌকিক ধারণাগুলোর একটি খসড়া এখানে তুলে ধরছি, বাস্তবে যেগুলো রূপ লাভ করেছিল।

স্পেস ট্রাভেল : ১৯০২

মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে সেসময় আরো বেশকিছু উপন্যাস ও মুভি হয়েছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুভিটি ছিল ‘লি ইউভেজ ড্যান্স ল্যালন’। এ মুভির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল এর স্পেশাল ইফেক্টগুলি। যেখানে একটি রকেটকে তোপের মাধ্যমে ফায়ার করতে দেখা গেছে।

স্পেস গানের সেই ধারণাটি আজ আমরা স্পেস এক্সের রকেট লাউঞ্চ করার সময় বাস্তবে দেখতে পাই। মুভিটি নির্মাণের ১৫০ পঞ্চাশ বছর পরও ওই মুভিতে দেখানো ধারণাগুলো বাস্তবের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যাচ্ছে।

স্কাইপ : ১৯৬৪

ভিডিও কলিং বা ছবিসহ কল করার ধারণা প্রকাশ পায় ১৯৬৪ সালের ওয়ার্ল্ড সাইন্স ফেয়ারে। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। তবে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে নির্মিত মুভি ‘আই স্পেস অডিসি’তে বর্তমান ভিডিও কলের পূর্ণাঙ্গ ধারণাটির সুন্দরভাবে দেখানো হয়।

মুভিতে দেখা গেছে, ডক্টর হেওয়াড স্পেস স্টেশন থেকে জমিনের ওপর নিজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ভিডিও ফোন ব্যবহার করছেন। যেটা চালু করার জন্য ক্রেডিট কার্ডের মতো একটি কার্ড ব্যবহার করা হয়।

এভাবে ভিডিও চ্যাটের বিষয়ে এ যাবত বিভিন্ন মুভিতে যেসব ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বর্তমানে স্কাইপ এ্যাপ ছাড়াও ইমু, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন এ্যাপের সাহায্যে আমরা সহজেই সুবিধাটি ভোগ করছি।

স্মার্ট হোম : ১৯৭৭

সাধারণত মনে করা হয়, ১৯৯৯ সালে রিলিজ হওয়া ‘স্মার্ট হাউস’ মুভিতেই সর্বপ্রথম আধুনিক টেকনোলজি ও সরঞ্জামে সজ্জিত আরামদায়ক ঘরের দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস বলে, এর আগেই এসব দৃশ্য দেখে দর্শকরা আধুনিক জীবনযাপনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল।

১৯৭৭ সালে রিলিজ হওয়া হরর ফিল্ম ‘ডায়মন্ড শেড’ মূলত প্রথম মুভি যেখানে প্রায় একই রকম জীবনযাপন দেখানো হয়েছিল। এ মুভিতে দেখানো হয়, ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রীর হাত নাড়ানো ছাড়াই একের পর এক কাজ সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। কারণ কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘরোয়া কাজের সরঞ্জামগুলো পরিচালিত করা হচ্ছিল।

এটা সাইন্স ফিকশন হরর ফিল্ম হলেও এ ফিল্মের মাধ্যমেই প্রথম দেখানো হয়, কিভাবে একটি ঘরে লাইট, জানালা, দরোজা, এলার্ম, অটোমেটিক লক ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র ব্যবহার করা যায়।

মিলিটারি ড্রোন : ১৯৮৪

১৯৮৪ সালে রিলিজ হয় ব্লকবাস্টার মুভি ‘দি টারমিনেটর’। বিভিন্ন কারণেই এ মুভিটির স্মৃতি এখনো পর্যন্ত মানুষের মনে তাজা হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় কারণটি ছিল, এ মুভির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ বিষয়ক এমন অদ্ভুত ও নতুন ধারণা শিখিয়েছে যা ওই সময়কার সাধারণ মানুষ কল্পণাও করতে পারত না।

মুভিটিতে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার, আর্ম গোডাউন, কুল বোট ছাড়াও সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রযুক্তিটি ছিল হান্টার কালার একটি ড্রোন। ড্রোনের ব্যবহার সাধারণ মানুষের সামনে সর্বপ্রথম এ মুভির মাধ্যমেই দেখানো হয়।

আমেরিকান আর্মিরা ১৯৮০ সালেই রেডিও টেকনোলজির সাহায্যে আকাশে ড্রোন ওড়ানোর ক্ষমতা আবিস্কার করলেও মূলত ২০০১ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়।

এয়ার বিডস : ১৯৬৬

১৯৬৬ সালে রিলিজ হওয়া ‘ফার্ন হাইট ৪৫১’ মুভিটিতে সর্বপ্রথম ‘সি শেল’ আইডিয়া এপ্লাই করা হয়। সামুদ্রিক শামুকের মতো দেখতে সেই ডিভাইসটি ছিল এয়ার বিডস। যেটিকে সমুদ্র থেকে শব্দ পাঠানো ও ইলেকট্রনিক সিগনাল ধরার জন্য ব্যবহার করা হয়।

ডিভাইসটি এয়ার বিডস নামে আমাদের কাছে পরিচিত হলেও ২০০১ সালে এ্যাপলের আইপট মার্কেটে আসার পর বিষয়টি আমাদের কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এভাবেই একের পর এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে মুভি, নোবেল, থিয়েটার ইত্যাদির মাধ্যমে এর পরিচয়, ব্যবহারবিধি, উপকারিতা তুলে ধরা হচ্ছে। এসব মুভি ও নোবেল একদিকে যেমন নতুন নতুন চিন্তা, আইডিয়া ও প্রযুক্তির জন্ম দিচ্ছে, অপরদিকে সেসব প্রযুক্তি বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করছে।

বর্তমান অত্যাধুনিক পৃথিবী গড়ে ওঠার পেছনে এসব সিনেমা, গল্প-উপন্যাস, নাটক ইত্যাদির ভূমিকা অপরিসীম। এসবের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত উন্নত জীবনযাবন শিখছি। আমাদের ভেতর জেগে উঠছে উন্নত জীবনবোধ।

তবে এসব মুভি মানুষের জীবনবোধ ও জীবনমান উন্নত করলেও মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে দূষিত করার জন্যও আরেক শ্রেণির নোবেল-মুভি রচিত ও নির্মিত হচ্ছে। যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের মাঝে অশ্লীলতা, হতাশা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, পাষণ্ডতা, বর্বরতা , সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

উন্নত রুচির ভালো মুভি দেখতে কোনো অসুবিধা তো নেই কিন্তু অরুচিকর ও মানুষের মেধা নষ্টকারী ধ্বংসাত্মক নোবেল ও মুভি থেকে বেঁচে থাকা আমাদের প্রত্যেকেরেই আদর্শিক দায়িত্ব।

 

সূত্র ডন নিউজঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.