228136

ফারাক্কা চুক্তির ২২ বছর পরও পানির অসম বণ্টন, বন্যার আভাস

অনলাইন সংস্করণঃ- জানুয়ারী মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত চলা শুকনো মৌসুমে পাকশীর হার্ডিঞ্জব্রীজ পয়েন্টসহ পদ্মানদীতে প্রতিবছর তীব্র পানি সংকট থাকলেও এবছর পানি বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।

বুধবার (১৬ মে) ছিল ফারাক্কা দিবস। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির এবারে পূর্ণ হলো দীর্ঘ ২২ বছর। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো দেখা যাচ্ছে পানির অসম বণ্টন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরের এই সময়টাতে পদ্মায় পানি সঙ্কট থাকলেও এবছরের চিত্রটা ভিন্ন। এভাবে অসময়ে পানি বৃদ্ধি ঈশ্বরদীসহ উত্তরের জনপদে আগাম বন্যার পূর্বাভাসেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা গত বুধবার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫৮ মিটার পরিমাপ করা হয়েছে, যা বছরের এই সময়ে এর আগে কখনো দেখা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বছরের এই সময়ে পদ্মায় পানির প্রবাহ থাকার কথা সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১৫ হাজার কিউসেক। অথচ এখন পদ্মায় পানির প্রবাহ রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কিউসেক।

বুধবার (১৫ মে) পর্যন্ত পদ্মার পাকশিতে ৭৯ হাজার কিউসেক পানি পরিমাপ করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ পানি প্রবাহের রেকর্ড।

গত এক মাসের হিসাব অনুযায়ী, ইতোপূর্বে বছরের যে সময়টাতে চাহিদা অনুযায়ী চুক্তির সমপরিমাণ অর্থাৎ ৩৫ হাজার কিউসেক পানিই পাওয়া যেতো না। সেখানে এবছর শুষ্ক মৌসুমেই পানি ৫০ থেকে ৮০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত ওঠানামা করছে।

পাউবোর পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী ও উত্তরাঞ্চল পানি বিভাগের পরিমাপক কে এম জহুরুল হক জানান, এ বছরই প্রথম খড়া মৌসুমে পদ্মায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি পানি পাওয়া যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলকে মরুকরণ থেকে রক্ষায় ১৯৯৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়ের সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি করেন।

চুক্তি অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশকে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা থাকলেও দু’একবার বাদে বেশিরভাগ সময়েই খুবই অল্প পরিমাণে পানি পেয়েছে বাংলাদেশ।

দেশের বৃহত্তর ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকো) সেচ প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করার কথা থাকলেও পানির অভাবে গত এক বছর মাত্র ১ লাখ ১৬ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হয়।

পরবর্তীতে এ সকল অবস্থা পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কামিশনের (জেআরসি) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তাদের দাবি সঠিক অনুপাতেই পানি পাচ্ছে বাংলাদেশ।

তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় পদ্মাসহ প্রায় সকল শাখা নদী এখন মৃত প্রায়। ফলে বছরের পর বছর ধরে পানি স্বল্পতা ও নদী অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থান শুষ্ক থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে পদ্মার দুই পাড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। তাই অতি সত্তর গঙ্গা চুক্তি অনুসারে পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে নদী গবেষক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এবছর ব্যতিক্রম হলেও বেশিরভাগ সময়ই চুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়াতে শুকনো মৌসুমে ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতুর উজান ও ভাটিতে পদ্মার পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় এক সময়ের প্রমত্তা নদী পদ্মা এখন পরিণত হয়েছে ছোট নদীতে।

এছাড়াও মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে এই অঞ্চলের সুতা নদী, কমলা নদী ও ইছামতীসহ আরও প্রায় ছোট-বড় ১৭টি নদীর।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এ রকম সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে এই অঞ্চলের মানুষসহ জীববৈচিত্র ও পরিবেশকে বাঁচাতে হলে এখনি আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে ফারাক্কা চুক্তির সুষম বণ্টন।

 

সূত্র বিডিমর্নিংঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.