225598

৪ মাসে সংস্কৃতি অঙ্গনের ৯ গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি

অনলাইন সংস্করণঃ- একের পর এক দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের গুণী ব্যক্তিত্বরা না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন। গত ৪ মাসে হারিয়েছি ৯ জন গুনি ব্যক্তিত্বকে । যাদের স্থান কখনো পুরণ হবার নয়।

৭ মে মারা গেছেন একুশে পদক পাওয়া বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী । বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সুবীর নন্দী। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

২৪ এপ্রিল মারা গেছেন ‘হাসির রাজা’ খ্যাত অভিনেতা আনিস। টিকাটুলীর নিজ বাসায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার হবে ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার বল্লবপুর গ্রামে। সেখানে বাদ আসর তাকে সমাহিত করা হয়।

২৪ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন অভিনয়শিল্পী সালেহ আহমেদ। কয়েক বছর ধরেই সালেহ আহমেদ বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছিলেন। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন তিনি। ৮৩ বছর বয়সী এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থা দিনের পর দিন অবনতি ঘটছিল।

৬ এপ্রিল মারা যান চলচ্চিত্রের অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর আসল নাম আবদুস সামাদ। তবে দর্শকদের কাছে ‘টেলি সামাদ’ নামেই তিনি বেশি পরিচিতি পান।

১৭ মার্চ মারা যান ভাওয়াইয়া শিল্পী, সাংবাদিক সফিউল আলম রাজা। সাংবাদিকতা দিয়ে যার যাত্রা শুরু পেশাগত জীবনের। তাও আবার অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টার হিসেবে। সমাজের অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করা ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য।

কলমের মাধ্যমে সমাজকে অপরাধমুক্ত করার লড়াই চালাতে গিয়ে একসময় শফিউল আলম রাজা পান সেরা রিপোর্টারের পুরস্কার। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একসময় তিনি জড়িয়ে পড়েন সুরের মায়ায়। সুর আর ছন্দের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছেন। আমৃত্যু ছিলেন এ সাধনার সঙ্গে। তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী হিসেবে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শফিউল আলম রাজার অসংখ্য ভক্ত।

১৩ মার্চ মারা যান দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। বারিধারায় নিজ বাসায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় শাহনাজ রহমতউল্লাহ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতউল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমতউল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমতউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকেন।

১৩ মার্চ মারা যান চিত্র পরিচালক শাহেদ চৌধুরী। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি । তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সিনেমা “আড়াল”।

১১ মার্চ মারা যান বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচালক আশি ও নব্বই দশকের সাড়াজাগানো সাইফুল আযম কাসেম। আশি ও নব্বই দশকে তিনি একাধিক হিট ও সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘অন্তরালে’, ‘সোহাগ’, ‘ঘর সংসার’, ‘বৌরাণী’, ‘সানাই’, ‘ধন দৌলত’, ‘দুনিয়াদারী’, ‘হালচাল’, ‘ভরসা’, ‘স্বামীর আদেশ’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’ ইত্যাদি।

২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান নাট্যব্যক্তিত্ব আবৃত্তিশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা নিখিল সেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। নিখিল সেন বাংলাদেশের একজন প্রতিথযশা নাট্যকার, অভিনয় ও আবৃত্তিশিল্পী, সাংবাদিক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। আবৃত্তিতে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০১৭ সালে গোলাম মুস্তাফা আবৃত্তি পদক লাভ করেন। নাটকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। এর আগেও ১৯৯৬ সালে শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সম্মাননা ও ২০০৫ সালে শহীদ মুনীর চৌধুরী পুরস্কার পান।

 

সূত্র আমাদেরসময়.কমঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.