223539

হিটলার কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন?

অনলাইন সংস্করণঃ- পৃথিবীতে ঘৃণ্য মানুষদের তালিকা করলে সেখানে এডলফ হিটলারের নাম অবশ্যই থাকবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্য তিনি ইতিহাসে এখনো জাজ্বল্যমান রয়ে গিয়েছেন। হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নানা ধোঁয়াশা রয়েছে,কেউ বলে তিনি আত্মহত্যা করেছেন যুদ্ধের শেষের দিকে আবার কেউ বলে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন গোপনে।

বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেকেই হিটলারকে দেখার দাবী করলেও সেগুলো অধিকাংশই ছিল ভুয়া। তবে সিআই এর ফাঁস হওয়া একটি গোপন নথিপত্র সামান্য কৌতূহলের উদ্রেক করে মানুষের মনে। সেই গোপন নথি থেকে জানা গিয়েছে এজেন্সিকে বলা হয়েছিল কলম্বিয়াতে প্রাক্তন এসএস সদস্যদের যে কমিউনিটি আছে,সেখানে হিটলারের মত চেহারার একজন মানুষ বাস করেন।

কলম্বিয়ায় হিটলার

ফিলিপ সাইত্রন নামের একজন প্রাক্তন এসএস অফিসার এই দাবীটি করেন। তার মতে, কলম্বিয়াতে ১৯৫০ সাল থেকে এডলফ স্কাটলেমেয়ার ছদ্মনামে টুনজা নামক প্রাক্তন নাৎসি কমিউনিটিতে হিটলার বাস করে আসছেন। সেই লোকটিকে ফুয়েরার বলে ডাকা হয় এবং তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি সেনাবাহিনীর ট্রেডমার্ক স্যালুট ও দেওয়া হয়। তার কথার প্রমাণস্বরূপ সাইত্রন একটি ছবি দেখান যেখানে তিনি একটি লোকের পাশে বসে আছেন এবং সেই লোকটির চেহারা হিটলারের সাথে প্রচণ্ডভাবে মিলে যায়।

পরবর্তীতে সাইত্রন আরো বলেন যে, হিটলার ১৯৫৫ সালে জার্মানি ত্যাগ করে আর্জেন্টিনা চলে গিয়েছেন।

প্রতিদিন এমন অসংখ্য ভুয়া গুজব শুনতে পাওয়া সিআই এজেন্টরা সাইত্রনের দাবিকে গুরুতরভাবে না নিয়ে এই দাবির কথা তাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারকে বলেন এবং সাথে ছবিটিও পাঠিয়ে দেন।

তবে সাইত্রনের দাবি নিয়ে ভালোভাবে তদন্ত করার আগেই তথাকথিত ফুয়েরার নামের লোকটি আর্জেন্টিনা পালিয়ে যাওয়ায় সিআইএ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দেয়।

আবার আলোচনায়

কলম্বিয়ান সাংবাদিক জোস কারডেনাস নব্বই সালে প্রকাশ হওয়া সিআইএর ফুয়েরার সংক্রান্ত সেই ফাইলটির ছবি সাম্প্রতিককালে টুইট করলে এই বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে।

সিআই এর এই ফাইলটিতে বলা হয় যে সাইত্রনের মতে, তিনি যখন একটা রেলরোড কোম্পানির জন্য কাজ করতে টুনজা শহরে যান, সেখানে তাকে ‘হিটলারের সাথে অনেকটা মিল আছে’ এমন চেহারার একজন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ‘আবাসিক কলোনি’ নামক জায়গাতে এই রহস্যময় লোকটির সাথে সাইত্রনের দেখা হয় এবং ওই আবাসিক কলোনি এলাকাটি সাধারণত প্রাক্তন জার্মান নাৎসিদের আবাসস্থল ছিল। সেই জার্মান লোকটিকে অন্য প্রাক্তন এসএস সৈন্যরা অতীতের নাৎসিযুগের মত করেই সম্মান করত।

যদিও এই ফাইল এর লেখক সিআই এজেন্ট একে ফরমাল ভাবে না লিখে বরং সে সময়ের হিটলারকে নিয়ে বাজারে প্রচলিত অন্যান্য কাল্পনিক গুজবেরই একটি হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। তবে ১৯৫৫ সালে যখন সাইম্লডি নামক গুপ্ত নাম সম্বলিত আর একজন ব্যক্তি যখন সাইত্রনের মত একই কথা বলেন, তখন কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই সাইম্লডি লোকটা সাইত্রনের পরিচিত ছিল এব সে সাইত্রনকে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে।

আরেকজন সাক্ষী

সাইম্লডির মতে সে যখন ভেনেজুয়েলাতে ডাচ রাজকীয় নৌবাহিনীর অধীনে কাজ করত তখন হিটলারের মত চেহারার একটি লোককে দেখে সেখানে।

সাইত্রনের মত সাইম্লডিও তথাকথিত হিটলারের সাথে তোলা একটি ছবি প্রমাণ হিসেবে দেখায় এবং ছবিটির পিছনে ঐ লোকটির নাম এডলফ স্কাটলেমেয়ার নামে লেখা ছিল। সাইম্লডি আরো জানায় যে ছবির ঐ হিটলারের মত লোকটা ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনা পালিয়ে গিয়েছে।

হিটলারের আসলে কি হয়েছিল

অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের মতে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল সকালে হিটলার বান্ধবী ইভাসহ নিজের বাংকারে আত্মহত্যা করেন এবং সেদিন বিকালে তাদের লাশকে বাইরে বাগানে নিয়ে এসে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে হিটলার আত্মহত্যা করেননি, বরং পালিয়ে গিয়েছিলেন।

বার্লিনে অস্ত্র সমর্পণের অনুষ্ঠানে মার্শাল জিয়রজি ঝুকো যখন বলেন যে ‘হিটলার হয়তোবা শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারেন’, তখন অনুসন্ধানীরা আরো বেশি হিটলারের বেঁচে থাকার কাহিনী বিশ্বাস করে এবং হিটলারকে খুজতে থাকে। এই খোঁজাখুঁজিতে সবচেয়ে বেশে লেগে ছিলেন জেরারড উইলিয়ামস এবং সিমন ডাস্টন নামের দুইজন ব্রিটিশ লেখক।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

২০১১ সালে তারা ‘গ্রে উলফ: দি এস্কেপ অফ এডলফ’ নামের বইয়ে লেখেন যে হিটলার এবং ইভা দুজনেই তাদের ‘বডি ডাবল’কে ব্যবহার করে বিষ খাওয়ার নাটক প্রচার করে এবং গোপনে প্লেনে করে ডেনমার্ক চলে যায়। সেখান থেকে তারা জার্মানি চলে আসে এবং পরবর্তীতে স্পেনের শাসক জেনারেল ফ্রাঙ্কো তাদের ক্যানারি আইসল্যান্ডে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ক্যানারি দ্বীপ থেকে ইভা ও হিটলার দম্পতি আবার নৌকায় করে জার্মানি চলে যান এবং সাধারণভাবে বসবাস করতে থাকেন। জেরারড উইলিয়ামস এবং সিমন ডাস্টনের মতে এই দম্পতির দু’টি বাচ্চা হয় এবং হিটলার পরিণত বয়সেই মারা যান।

তবে আর্জেন্টিনার আরেকজন লেখক এবেল বাস্তির মতে হিটলার এবং ইভা বোটে নয় বরং সাবমেরিনে করে ক্যানারি আইল্যান্ডে যান এবং হিটলার ১৯৭১ সালে মারা যান দক্ষিণ আমেরিকাতে। তাকে একটি গোপন বাংকারে কবর দেওয়া হয় এবং সেই জায়গার ওপর এখন একটি হোটেল আছে।

পরবর্তীতে সাবেক সিআইএ অফিসার বব বের এবং টিম কেনেডি হিস্টোরি চ্যানেলে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের মতে হিটলার আত্মহত্যা নয় বরং পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই দুজন সাবেক অফিসার হিটলারের বাংকারের গোপন পাঁচ নাম্বার পালানোর পথটি আবিষ্কার করেন যা এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। এই নতুনভাবে আবিষ্কৃত পালানোর রাস্তাটি হিটলারের পালিয়ে যাওয়া এবং গোপনে বেঁচে থাকার ধারণাকে আরো জোরদার করে। তাদের ধারণা হিটলার আত্মগোপন করে আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করা চিন্তা করতেন।

এতবছর পরে হিটলারের মৃত্যু কিংবা এই সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সঠিক ধারণা করা সত্যিই অসম্ভব, তাই অনুমান করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই।

 

সূত্র ডেইলি মেইলঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.