223101

পানি আপনার, শরবত কেন খাবেন না?

ডেস্ক রিপোট : পানি ওয়াসার। এ পানি ওয়াসা সাপ্লাই দেয় নগরবাসীকে। দীর্ঘদিন থেকে এ পানি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। আর সেই অভিযোগ ওয়াসার কাছে করে লাভও হয় না। ওয়াসা গুরুত্ব দেয় না কোনো কিছুর। বরং অভিযোগের জবাবে ওয়াসার কামেল এমডি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ওয়াসার পানি খুবই সুপেয়। এ পানি ফুটানো ছাড়াই পান করা যায়। তিনি নিজেও পান করেন। তিনি খুব ভালো কথা বলেছেন।

আর এই ভালো কথার খুশিতেই জুরাইন ও রামপুরার অল্প কয়েকজন মানুষ গেলেন প্রতিবাদ জানাতে। তবে প্রতিবাদের ধরনটা ছিল অভিনব। একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে দুই যুবক, এক নারী ও এক শিশু। তারা চিনি, লেবু আর ওয়াসার পানি নিয়ে গেলেন সঙ্গে। গরমকাল বলে কথা। ওয়াসার পানিতে শরবত বানাবেন। এর নাম হবে শরবত-ই-ওয়াসা। সেই শরবত প্রথমে পান করাবেন ওয়াসার এমডিকে। তিনি পান করে তৃপ্ত হয়ে বাজারজাত করতে পারেন তার অন্য কর্মকর্তাদের জন্য। প্রস্তাবটা উত্তম। কিন্তু বাদ সাধলেন ওয়াসার এমডি নিজেই। তিনি নিজের সুপেয় পানির শরবত পান করবেন না। এমনকি তার কর্মকর্তারাও না। তাই সবাই মিলে ডাকলেন পুলিশ। টিভিতে পুলিশের ভাবসাব দেখে মনে হলো তারা এ আন্দোলনে মজা পাচ্ছে। এর মাঝে মিডিয়ায় খবর আসে কারওয়ান বাজারে শরবত-ই-ওয়াসার যাত্রা হচ্ছে। না গেলে নিউজ মিস।

কারওয়ান বাজার এমনিতে মিডিয়াপাড়া। সব মিডিয়া হাজির ওয়াসা ভবনে। হুলুস্থূল ব্যাপার। সামনে রমজান মাস। শরবত-ই-ওয়াসার যাত্রার খবর মিডিয়া মিস করতে চায় না। কিন্তু ওয়াসার বেরসিক এমডি মিডিয়া দেখে আরও পিছু হটলেন। প্রতিবাদকারীরা এমডিকে না পেয়ে মিডিয়া নিয়ে গেলেন এক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে। সুযোগ মিলল শরবত-ই-ওয়াসার শুভ উদ্বোধনের। কিন্তু না, তিনিও রাজি নন শরবত পান করে উদ্বোধন করতে। আগতরা বললেন, এ পানি আপনার। আমরা হালাল লেবু, চিনি নিয়ে এসেছি। লেবু কাটার ছোট চাকুও আছে। গরমের দিনে আরাম করে শরবত খান। কর্মকর্তা মন খারাপ করলেন। কারণ তিনি মিনারেল ওয়াটার ছাড়া শরবত পান করেন না। বাগ্বিতন্ডা হলো কিছুক্ষণ। ওয়াসার নতুন ব্র্যান্ডের শরবত আর বাজারে এলো না। কিন্তু বাজারে পুরো খবর ছড়িয়ে পড়ল। নগরবাসী সাড়া দিল, তারাও এ শরবত বানাতে চায় ওয়াসার এমডি ও কর্মকর্তাদের জন্য। টাকা খরচ করে ওয়াসার কর্তাদের শরবত খাইয়ে যদি সুপেয় পানি মেলে খারাপ কী?

বড় অদ্ভুত সময়ে অবস্থান করছি। বাংলাদেশে ওয়াসার এমডির কোনো বিকল্প নেই। তিনি ছিলেন আমেরিকায়। আত্মীয়পরিজন, পাড়াপড়শি সবাই এখনো থাকেন আমেরিকায়। ২০০৯ সালে দেশে এসে দায়িত্ব নেন ওয়াসার। চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগ আর কোনো দিন শেষ হবে না। এর মাঝে সরকার ১০ বছর শেষ করেছে। নতুন মেয়াদে ১১ বছর শুরু হয়েছে।

এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী যান মন্ত্রী আসেন। ওয়াসার এমডি থেকে যান। তিনি বদল হন না। কারণ তার কোনো বিকল্প নাকি দেশে তৈরি হয়নি। আগামীতেও হবে না। এ কারণে আমেরিকা থেকে এনে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিস্মিত, হতাশ হচ্ছি। হচ্ছেটা কী দেশে? এই মানুষটি এত দক্ষ হলে তার মমি তৈরি করে জাদুঘরে রেখে দিন। প্রয়োজনে মাদাম তুসোতেও পাঠাতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নগরবাসীকে আর কষ্ট দেওয়ার কী দরকার? স্যালুট প্রতিবাদকারী মিজানুর রহমানকে। নগরবাসীকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন কী করে একটি অন্যায় ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে হয়। আমরা এখন তৈল যুগে বাস করছি। এ যুগে কেউ প্রতিবাদ জানায় না। অরবিন্দ কেজরিওয়াল হয় না। অথচ একজন মানুষের প্রতিবাদই অনেক কিছু করতে পারে। কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েই নূর আজ ডাকসু ভিপি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদের নামে অকারণে বাড়াবাড়ি মানুষ পছন্দ করে না। কিন্তু সত্যিকারে প্রতিবাদকারীর প্রতি আগে-পরে মানুষের সমর্থন মন থেকে বেরিয়ে আসে।

ইমরান এইচ সরকারকে মানুষ সমর্থন দিয়েছিল। পরে ইমরান নিজের ভুলে আজ কক্ষচ্যুত। এজন্য অন্য কেউ নন, ইমরান নিজেই দায়ী। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হয়। এর মাঝে খবর পেলাম, প্রতিবাদকারী মিজানুর রহমানকে হুমকি দিচ্ছেন ওয়াসার কর্মচারীরা। ফোনে এবং তার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ হুমকি বুমেরাং হয়ে যাবে। মিজানের কোনো ক্ষতি হলে ঢাকাবাসী মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে শিখেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে তিনি জাতির জনক হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদী ছিলেন বলেই এ দেশ পেয়েছি। তিনি আপস করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন। বাংলাদেশ আর হতো না। তিনিও জাতির জনক হতেন না। ইতিহাস ভুলে গেলে হবে না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তার আন্দোলনের সাথী আন্না হাজারে বললেন, চেয়ারে বসে তুমি দিল্লির চিরচেনা মানুষকে ভুলে যেও না। তোমার সঙ্গে আন্দোলনকারী মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হ’য়ো না। জবাবে কেজরিওয়ালও বললেন, আন্দোলনে থাকা চিরচেনা মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। তাদের নিয়েই চলবেন। আন্না হাজারেকে সরকারে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন।

আন্না সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে বলেন, ক্ষমতার স্পর্শে মানুষের হৃদয় থেকে সরতে চাই না। তাই পদ নেব না। চেয়ার ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই। মানুষের ভালোবাসা চিরস্থায়ী। মানুষের হৃদয় মন্দির থেকে একবার সরে গেলে আর কিছু থাকে না। রাষ্ট্রক্ষমতায় সবসময় সফল মানুষ পাওয়া যায় তা নয়। কিন্তু অদক্ষ আর অযোগ্যদের সমাহার বেড়ে গেলে সমস্যা তৈরি হয়। বলছি না, রাষ্ট্রক্ষমতায় সবসময় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্য অথবা মোগল সম্রাট আকবরের মতো নবরতেœর সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু অধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সর্বনাশও হয়ে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে নিজস্ব দক্ষতায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়। সেই চিন্তা থেকেই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্য প্রথম নবরত্ন সভা তৈরি করেন। এতে ঠাঁই হয় কবি কালিদাসের; যার বচন এখনো মুখে মুখে। অন্যদিকে মোগল সম্রাট আকবরের রাজসভায় ছিলেন নয়জন জ্ঞানী-মনীষী। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আবুল ফজল, প্রতিরক্ষায় আবদুল রহিম খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবল, শিক্ষামন্ত্রী ফইজি, সেনাপতি মানসিংহ, অর্থমন্ত্রী টোডরমল, সংস্কৃতিমন্ত্রী তানসেন, গৃহায়ণমন্ত্রী মোল্লা দো-পিয়াজা, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ফকির আজিওদ্দিন। এই ব্যক্তিত্বরা সবাই স্বমহিমায় নিজেরাই ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাদের নিয়ে এখনো গবেষণা হয় শুধু ভারতবর্ষে নয়, বিশ্বজুড়ে।

দাপুটে সম্রাট আকবর তার এই সভাসদের পরামর্শ নিতেন। ভরাট কণ্ঠে মানসিংহকে যখন হুকুম দিতেন কেঁপে উঠত দিল্লির রাজপ্রাসাদ। মন খারাপ হলে ডাকতেন তানসেনকে। আইন-কানুন, রাষ্ট্র চালানোর বিভিন্ন বিষয়ে আবুল ফজলের লেখা দুটি বই এখনো খ্যাত। আকবরের আত্মজীবনীও তিনি লেখেন। মেধা-মননের গুরুত্ব ছিল অন্যরকম। আকবরের বিশ্বস্ত আবুল ফজলকে খুন করান শাহজাদা সেলিম। খুনের কারণ ছিল নাচনেওয়ালির সঙ্গে শাহজাদা সেলিমের গভীর প্রেমে বাধা দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। আর শাহজাদা সেলিম মনে করতেন বাবার মনকে বিষাদগ্রস্ত করছেন আবুল ফজল। অন্দরমহলের রাজনীতি ছিল আলাদা। সেই সময়ে দিল্লির আধুনিকায়ন নিয়ে কাজ করেন মোল্লা দো-পিয়াজা। বীরবলের কূটনীতি, মানসিংহের সাহস, ফইজির শিক্ষানীতি ভারতবর্ষকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল।

ইতিহাসের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্দরমহলে এখনো লুকিয়ে রয়েছে অনেক কিছু। সময় অনেক কিছুকে আড়াল করে রাখে। আবার সঠিক সময়ে সবকিছু বেরিয়ে আসে। বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০০২ সালের আগস্টে আমার উপজেলা নাঙ্গলকোট থেকে ফোন পেতাম, ভাই মাইক ভেঙে দিয়েছে। ৭ মার্চ অথবা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করতে পারছে না। সে ইতিহাস এখন বদল হয়ে গেছে। এবার ভোটের আগে দেখলাম, দৃশ্যপট বদল। রাজনীতির পরিবর্তনও হয়ে ওঠে সময়ের সঙ্গে। যদিও স্পষ্ট কথা বলা মানুষকে রাজনীতি পছন্দ করে না। চাটুকার শ্রেণির কদর এখানে বেশি। কিন্তু সবারই মনে রাখা দরকার, চিরদিন সমান যায় না। কবি নজরুল বহু বছর আগে এই কথা বলে গেছেন। বাংলার ইতিহাস বড় বিচিত্র।

মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি এই বাংলা দখল করেন। ইতিহাসে উল্লাস নিয়ে আমরা তা পড়ি। অথচ এই মানুষটা এলেন তুরস্ক থেকে। আর ব্রিটিশরা বাংলার শেষ নবাবকে পরাজিত করেন মাত্র তিন হাজারের মতো সৈন্য নিয়ে। আর নবাব সিরাজদ্দৌলার সৈন্য সংখ্যা তখন ৪০ হাজারের বেশি। এর মাঝে ১০ হাজারের বেশি ছিল অশ্বারোহী। ক্লাইভ জানতেন বাঙালি সৈন্যরা এক থাকবে না। ভিতরে ভিতরে তার সঙ্গে কথা হয়েছে অনেক সেনাপতির। এ কারণে অল্প সৈন্য নিয়ে বাংলা দখলের লড়াইয়ে মাঠে নামে ইংরেজ বণিক। আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আমরা নিজেরাই জিইয়ে রাখি। আর চাটুকার, অযোগ্যদের কদর করি। দক্ষদের সঙ্গে গল্প করে ধরে রাখি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষের ভিতরকার দীপ্যমান সত্য পুরুষটি স্থূলতা ভেদ করিয়া যখন দেখা দেয় তখন অকারণে কেহ-বা তাহাকে প্রাণপণে পূজা করে, আবার অকারণে কেহ-বা তাহাকে প্রাণপণে অপমান করিয়া থাকে।’

এ কারণে বাঙালি চরিত্র আসলে বিচিত্র। এখানে নিজস্ব স্বার্থপরতা নিয়েই সবাই চলতে পছন্দ করে। ক্ষণে ক্ষণে মন বদল করে। অন্যায় আর অসংগতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। আমাদের ইনস্টিটিউটগুলো এ কারণেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অদক্ষ চালকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নীরব বিক্ষোভ। সেদিন এক কূটনীতিকের অনুষ্ঠানে দেখলাম, সিইসি একা একা ঘুরছেন। আমার একসময়ের সহকর্মী সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নজরে আনলেন বিষয়টি। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর তার নিজের মর্যাদা ধরে রাখতে হয়। ভারতে একটা ভোট হচ্ছে, কোথাও ব্যানার-পোস্টার চোখে পড়েনি। নেতাদের লড়াই মিডিয়ায়। পরস্পরকে দোষারোপ করছেন, নিজে কী করতে চান তুলে ধরছেন। নির্বাচন কমিশন কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। কঠোরভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। কারও কোনো অভিযোগ নেই।
আমাদের সবকিছুতে সমস্যা আমরাই তৈরি করছি।

নীতি-নৈতিকতার জায়গাগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২১ তারিখ অফিস বন্ধ। কলকাতা গেলাম এক অনুষ্ঠানে। সঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। সে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অভিনেতা আলমগীর ও সারাহ বেগম কবরীও ছিলেন। আলমগীর ভাই ও আমরা একই ফ্লাইটে যাওয়া-আসা। ২২ তারিখ ইউএস-বাংলার বিকালের ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার পথে দেখলাম কীভাবে মানুষকে হয়রানি করছে কাস্টমসের লোকজন। বিমানবন্দরে বিদেশে আসা-যাওয়ার পথে আমাদের সাধারণ মানুষ অকারণে হয়রানির শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি এই কা-টি করে কাস্টমস। আগে হয়রানি ইমিগ্রেশনেও হতো। এখন ইমিগ্রেশনের পরিবেশ উন্নত হয়েছে। পুলিশের বর্তমান আইজি এসবিতে থাকার সময় এ কাজটি শুরু করেছিলেন। বর্তমান অতিরিক্ত আইজি শহীদও তা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু কাস্টমসের বাড়াবাড়ি আর শেষ হলো না। বরং দিন দিন বাড়ছে তাদের ঔদ্ধত্য। ভাবসাবে মনে হয় মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের হয়রানির জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কাস্টমস কর্মকর্তাদের মোটিভেশন ক্লাস জরুরি। প্রয়োজনে এনবিআর সাইক্রিয়েটিকের পরামর্শ নিতে পারে। বিমানবন্দরে কারা লাগেজ পার্টি, চোরাকারবারি গোয়েন্দাদের অজানা নয়। সবারই নামের তালিকা আছে। কিন্তু মূল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে কাস্টমস এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়। ২২ তারিখ বিকাল ৫টায় নিজের চোখে আবার সবকিছু দেখলাম। সৌদি আরবের একটি ফ্লাইট থেকে যাত্রীরা মালামাল নিয়ে বের হয়ে আসছেন। তাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড় করিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা হেস্তনেস্ত করছেন। আর হাসাহাসি করছেন। জিজ্ঞাসাবাদ, হুমকি, গালাগাল কোনো কিছুই বাদ নেই। ওদের অপরাধটা কী? রোদে পুড়ে বাংলাদেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোই কি ওদের অপরাধ?

অন্যায়ের একটা শেষ আছে। চারদিকে অন্যায় বেশি হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। বিমানবন্দর ঘিরে রাহুচক্র রয়েছে। সেই রাহুচক্রের বিপক্ষে অ্যাকশন দেখি না। মাঝে মাঝে সোনা চোরাচালানের দু-একটি টিম ধরা পড়ে। রাঘব-বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাদের কেউ স্পর্শ করে না। একজন শ্রমিক কষ্টে মধ্যপ্রাচ্যে অথবা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যান। যাওয়ার সময় তাকে জায়গাজমি বিক্রি করতে হয়। হালের বলদও বাদ থাকে না। যে অর্থ ব্যয় করে যান তা উঠে আসে না। সেই মানুষটি দেশে আসার সময় আত্মীয়-পরিজনের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করেন। দয়া করে এই শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করুন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী একজন সজ্জন, সফল মানুষ। তিনি অর্থনীতি বোঝেন। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গভীর। আমরা একই এলাকার। দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতিও করেছি। তার কাছে বিনীত অনুরোধ- দয়া করে বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আগত শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করুন। কাস্টমসের একই কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন সেখানে রাখবেন না। মানুষের মনের ভাষা পড়ুন। অন্যথায় রোদে পুড়ে রেমিট্যান্স পাঠানো মানুষগুলোর অভিশাপ নেমে আসবে।

লেখক : নঈম নিজাম, সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.