218508

শরীরের যে সমস্যা দূর হয়ে যায় নিয়মিত তোকমা খেলে

অনলাইন সংস্করণঃ- আয়ুর্বেদ, উনানী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চায়নিজ মেডিসিনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদানটির নাম হলো তোকমার বীজ বা তোকমা (Basil Seeds). তোকমা হলো Ocimum Sanctum ঘরানার উদ্ভিজ উপাদান। যা বিভিন্ন ধরণের পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখতে একেবারেই সাদামাটা এই উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, আঁশ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি। সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দূর করার জন্যে তোকমা খুব ভালো কার্যকরী একটি উপাদান। অনেকেই নিয়মিত তোকমার শরবত পান করে থাকেন। তবে যারা এখনও তোকমা গ্রহণ করা শুরু করেননি, তারাও দ্রুত কিনে ফেলুন তোকমা। কারণ, এই একটি মাত্র উপাদানের অগণ্য গুণাগুণ কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না আপনার।

পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে : তোকমার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হলে সেটা ফুলে, বড় হয়ে তার শরীরের বাইরের আবরণে জেলী জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। এটাই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও, তোকমাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, খাদ্যকে দ্রুত পরিপাক হতে সাহায্য করে থাকে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ডায়রিয়া অথবা আমাশয়ের মতো পেটের সমস্যাতে তোকমার বীজ খুবই উপকারী। এছাড়াও তোকমা বীজের তেল গ্যাস্টিক আলসার সমস্যার জন্যে উপকারী একটি উপাদান।

ওজন কমাতে সাহায্য করে : প্রোটিন, আঁশ, বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তোকমার বীজে। তোকমা গ্রহণের ফলে ক্ষুধাভাব কমে যায় অনেকটা। যার ফলাফল স্বরূপ ওজন চলে আসে নিয়ন্ত্রণের মাঝে। যেহেতু তোকমাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যা পেট ভরা ভাব তৈরি করে থাকে। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রতি ইচ্ছা তৈরি হয় না। সকালে অথবা বিকালের নাস্তায় তোকমা খাওয়ার ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পায়। যার ফলে পেট ভরা থাকে এবং শরীরে শক্তি সঞ্চিত হয়। এছাড়াও, নাস্তা হিসেবে তোকমা খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।

ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা দূর করতে : পার্সিয়ান হার্বাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা প্রায় একশ বছর ধরে একদম সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো গুরুত্বর সমস্যার ক্ষেত্রেও তোকমা ব্যবহার করে আসছেন।তোকমা বীজে রয়েছে অ্যান্টি-স্পাজমোডিক (Antispasmodic) প্রভাব। যা উক্ত সমস্যার দূর করতে কার্যকরী। তোকমাতে থাকে অ্যান্টি-ফাইরেটিক (Antipyretic) জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে।

তোকমাতে রয়েছে কেমোপ্রিভেন্টিভ উপাদান সমূহ : তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় লাইনলিক অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম কেমোপ্রভেন্টিভ (Chemo preventive) হিসেবে কাজ করা।টিউমারযুক্ত ইঁদুরদের উপরে একটি গবেষণায় করা হয়। যেটা থেকে দেখা যায়, তোকমা গ্রহনাকারী ইঁদুর তুলনা মুলকভাবে বেশী দিন বেঁচে থাকে এবং তাদের টিউমারের বৃদ্ধির গতি কমে যায় অনেকখানি।

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে : তোকমা বীজে থাকা প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ যেকোন ধরণের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। শরীর কোন আংশ ফুলে যাওয়া অথবা ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটা কাজ করে থাকে। আয়ুর্বেদ থেকে জানা যায় যে, আর্থ্রাইটিসের সমস্যার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেলে সেটা কমিয়ে আনতেও তোকমা দারুণ কার্যকরী।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এবং দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে : তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক (Antihyperlipidemic) কার্যক্রম কোলেস্টেরল এর সমস্যা কমিয়ে থাকে। তোকমা বীজের তেল লক্ষণীয়ভাবে হাই লিপিড প্রোফাইল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। এছাড়াও আয়ুর্বেদে দুশ্চিন্তা কমাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তোকমা।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমূহ। একইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। একইসাথে, ফ্রি-রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও বেশ উপকারী তোকমা।

মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে : প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতরের প্রদাহ, ইনফেকশন, আলসারসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় তোকমা দারুণ কাজ করে থাকে। তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতর একদম ফ্রশ থাকে। বিশেষ করে মুখের ভেতর কোন ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয় রোগ (ক্যাভিটিজ) এবং মুখের দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে না।

তোকমা গ্রহণে কিছু নিয়ম ও সতর্কতা : তোকমা বীজ কীভাবে গ্রহণ করা উচিৎ এবং কাদের গ্রহণ করা উচিৎ সেটা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। সকলের এটা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। কারণ, ভুল উপায়ে তোকমা গ্রহণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তোকমা খাওয়ার পূর্বে তোকমা বীজ পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজগুলো একদম বড় হয়ে ফুলে উঠলে এরপর সেটা খাওয়া যাবে। শিশুদের তোকমা বীজ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু এটা বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায় ভেজানোর পর। গর্ভবতী নারীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তোকমা গ্রহণ করা উচিৎ। প্রতিদিন তোকমা বীজ খেতে চাইলে এক চা চামচ গ্রহণ করাই যথেষ্ট।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.