216408

চুলের বেণি করা নিয়ে চমক লাড়ানো কিছু টিপস

চুলের তিনটি ভাগ এক হলে জন্ম হয় বেণির। চুল বাঁধায় বেণির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখনো এই বাঁধনে আসে না ক্লান্তি, উঠে যায়নি ভালো লাগা। বরং নতুন নতুন উপায়ে বাঁধা বেণির বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করে চলেছে চমক।

বেণির ইতিহাস খুঁজতে গেলে যেতে হবে ৫ হাজার বছর আগে। আফ্রিকার সংস্কৃতিতে ৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বেণির জনপ্রিয়তার কথা জানা যায়। আফ্রিকার নামিবিয়া অঞ্চলের হিমবা জনগণের মাধ্যমে বেণির প্রচলন শুরু হয়। বেণি কিন্তু আফ্রিকার একেকটি জাতিসত্তার পরিচয়ও তুলে ধরে। আফ্রিকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের বয়স, বিয়ে, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থান জানা সম্ভব এই বেণির মাধ্যমেই। ছোট বয়সেই একে অপরের মাথায় বেণি করে হাত পাকিয়ে ফেলে আফ্রিকার বাচ্চারা। পারিবারিক বন্ধনও নাকি বৃদ্ধি পায় এই বেণি বাঁধতে বাঁধতেই। পরবর্তী সময়ে ১৯ শতকের দিকে পৃথিবীজুড়ে বেণি জনপ্রিয়তা পায়।

শতকে শতকে বেণি

৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কর্নরোস বেণি, ৩১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে অ্যাফ্রোবক্স বেণির চলের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টাব্দ প্রথম শতকে গ্রিসে হালো বেণি, পঞ্চম শতকে যুক্তরাষ্ট্রে পোকাহানটাস বেণি, ১০৬৬ থেকে ১৪৮৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপে ক্রাউন বেণি জনপ্রিয়তা পায়।

১৬৪৪ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সিঁড়ি বেণিতে চুল বাঁধত চীনারা। ১৯৭০ সালে নতুন করে জনপ্রিয়তা পায় আধুনিক কর্নরোস বেণি। ১৯৭০ সালে এই বেণির মধ্যে আবার জুড়ে দেওয়া হতো বিডস। ১৯৯০ সালে একইভাবে বিডস বসিয়ে দেওয়া হতো বাক্স বেণির মধ্যে। আমাদের দেশে গতানুগতিক বেণি, খেজুর বেণি আর ফ্রেঞ্চ বেণির চলনই বেশি দেখা যেত। গত ১০-১৫ বছরে বেণিকে নানাভাবে বাঁধার পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন। পরিপাটি ও আরাম—দুটো অনুভবই পাওয়া যায় বেণির মাধ্যমে।

বেণিতে ভিন্নতা
আগ্রহটা বেশি কিশোরী বা তরুণীদের মধ্যে। এই এক বেণিকেই নানা স্টাইলে বাঁধছে। একটু অগোছালো বা হালকা করে বাঁধা বেণিগুলো এই বয়সের সঙ্গে মানানসই বেশি। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গেও মানিয়ে যায়। অন্যদিকে নিপাট ভদ্রভাবে বাঁধা পুরোনো আমলের বেণিগুলো চলে যাবে দেশীয় পোশাকের সঙ্গে। বেণি কখনোই পুরোনো হওয়ার নয়—এমনটাই মনে করেন তানজিমা শারমীন। ইউরোপে বেণি করা হতো চুলকে পরিষ্কার রাখার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের হপি সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীরাই শুধু চুলে বেণি করতে পারেন।

বেণির নামেও আছে ভিন্নতা। ফ্রেঞ্চ বেণি, ফিশটেইল বেণি, ডাচ বেণি, চার দড়ির বেণি, মোড়ানো বেণি, ওলটানো বেণি ইত্যাদি। একই বেণি উপস্থাপন করা হয় নানা আঙ্গিকে। মজাটা এখানেই। কানের দুই পাশে বাঁধা গতানুগতিক বেণিগুলোকে যখন এক কান থেকে আরেক কানের পেছনে রিবন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, নাম হয়ে যায় কান বেণি। এই গতানুগতিক বেণিটাকেই যখন গোল করে মোড়াতে থাকবেন, গোলাপের মতো হয়ে যাবে। এই বেণি দিয়েই চার কোনা ঘর করে ফেলতে পারবেন পুরো চুলজুড়ে। স্টাইলের শেষ নেই। আছে শুধু শুরু। লম্বা মুখে যখন বেণি করবেন, এক পাশে সিঁথি করে করুন। এতে লম্বাটে ভাবটা কমে যাবে। আবার গোল চেহারার জন্য চুল কিছুটা ছেড়ে ছেড়ে বেণি করা যেতে পারে। মুখের ফোলা ভাব কম লাগবে।

বেণির তিনটি ভাগকে তুলনা করা হয় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকতার সঙ্গে। এই তিন যখন এক হয়ে যায়, তখন চমৎকার কিছু হবে, এমনটাই তো স্বাভাবিক। তখন তা হয়ে ওঠে অনন্যসাধারণ।
সূত্র: বার্ডি ডটকম, জ্যানিস পারলার ডটকম, প্রথমআলো

পাঠকের মতামত

Comments are closed.