215493

২৬ মিডিয়া ভবনের ১৮টিই অতি অগ্নিঝুঁকিতে

অনলাইন সংস্করণঃ- ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনার অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। ছাড়পত্র নিতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে। তবে এর দেখভালের দায়িত্ব মূলত রাজউকের। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকায় গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ভবন, যেখানে নেই ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা। সর্বশেষ বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নি দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, এফআর টাওয়ার কিংবা গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে ছিল না অগ্নি দুর্ঘটনা নির্বাপণ ব্যবস্থা। এফআর টাওয়ার ছিল অপরিকল্পিত। শুধু এফআর টাওয়ার নয়, ঢাকা মহানগরীর অন্তত সাড়ে ১১ হাজার বহুতল ভবন এমন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে।

এই সাড়ে ১১ হাজার ভবনের মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমের অফিসও। ২০১৭ সালে ঢাকার ২৬টি মিডিয়া হাউজ পরিদর্শন শেষে ফায়ারের সার্ভিস প্রতিবেদন দাখিল করে। এর মধ্যে ১৮টি মিডিয়া হাউজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত ফায়ার সার্ভিসের কোনো ছাড়পত্র বা অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনার (ফায়ার সেফটি প্ল্যান) অনুমোদন নেই। শুধুমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন ও যমুনা টেলিভিশন ভবনই সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস। পরিদর্শনে মাটির নিচের জলাধারের ধারণ ক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, স্মোক/হিট ডিটেক্টর, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে, কারওয়ানবাজারস্থ ১০২ বিএসইসি ভবনের বেঙ্গল মিডিয়া কর্পোরেশন লি. (আরটিভি), তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ১৫৯/ডি প্রতিদিনের সংবাদ, ১৫৩/৯ লাভ রোডের সেমি পাকা দৈনিক পথযাত্রা কার্যালয়, ১৩৬ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলস্থ দৈনিক সমকালের তৃতীয় তলা, দৈনিক যায় যায় দিন, আমাদের সময় পত্রিকার ৪র্থ তলা, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর (৪র্থ তলা), চ্যানেল-৯ (৬ষ্ঠ তলা), ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সকালের খবর, গুলশান নিকেতনের ৬০ নং সড়কে অবস্থিত এশিয়ান টিভি, ৫৩ কারওয়ানবাজারের হাসান প্লাজার এটিএন নিউজ লি. , দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক প্রথম আলো, এটিএন বাংলা, এনটিভি, মহাখালীস্থ বৈশাখী টিভি, একুশে টিভি।

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেক্সিমকো মিডিয়া (ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি), একই এলাকার চ্যানেল ওয়ান (সম্প্রচার বন্ধ), ভাটারার বসুন্ধরা এলাকার নিউজ ২৪, কালের কণ্ঠ, শহীদ জিয়াউর রহমান রোড বনানীর স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট লি. এর মাছরাঙ্গা টেলিভিশন এবং রামপুরা হাতিরঝিল সংলগ্ন মাই টিভি ভবন।

তবে ২৬ মিডিয়া হাউজের মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে ফায়ার সেফটি নিয়ে সন্তুষ্টি পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তা হলো, রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও কুড়িল বারিধারায় যমুনা টেলিভিশন। তবে এই তালিকার বাইরে অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল, পত্রিকা ও টেলিভিশনের কার্যালয়ও রয়েছে অগ্নি ঝুঁকিতে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারিতে ২৬টি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে জরিপ করে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানকে সন্তোষজনক পেয়েছি। ফের একই বছরের ১২ নভেম্বর ২০টি মিডিয়া হাউজে আমরা যে জরিপ করেছিলাম সেখানে ২০টি হাউজকেই খুবই ঝুঁকিতে পেয়েছি।

তিনি বলেন, সতর্ক করার জন্য লিখিতভাবে অন্তত তিন দফা মন্ত্রণালয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত খুব বিশেষ অগ্রগতির তথ্য আমরা পাইনি। কেউ স্ব-প্রণোদিতভাবে আমাদের হালনাগাদ অগ্রগতিও জানায়নি।

ঢাকা শহরে একটার পর একটা দুর্ঘটনাই জানান দিচ্ছে যে আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। মিডিয়া হাউজ বলেই হয়তো বিষয়টি আরও বেশি দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। আমরা মিডিয়া হাউজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব সহসা যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য নেই। মানুষ তো মানুষই। আমার জীবন যেমন সাধারণ মানুষের জীবনও তাই। কাজেই আমি যে ভবনে চাকরি করি সেই ভবনে যদি নিরাপত্তা না থাকে, অন্য হাউজের যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে গণমাধ্যম বলে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। মিডিয়া হাউজ এক্ষেত্রে বাইরে নয়। কোথাও ঝুঁকি আছে, কোথাও কম ঝুঁকি, কোথাও বা ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা কম। যেখানেই ঝুঁকি আছে সেখানেই আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার বলে মনে করি।‘

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও বুয়েট-জাপান ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার প্রিভেনশন অ্যান্ড আরবান সেফটি (বুয়েট-জিডপাস) ডিরেক্টর ড. রাকিব আহসান জাগো নিউজকে বলেন, তারিখ মনে নেই। এতটুকু বলছি, এনটিভি ভবনে যেভাবে আগুন লেগেছিল সেভাবেই কিন্তু এফআর টাওয়ারে আগুন লেগেছে। কিন্তু আমরা কী দেখেছি। কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। যেটার প্রমাণ ফায়ার সার্ভিসের ওই জরিপে।

‘আমরা শুধু হইচই করি তখনই যখন ভবন ধসে পড়ে কিংবা আগুন লেগে যায়। কিন্তু টনক নড়ে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সিভিল সোসাইটির উচিত প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করা। সময় এসেছে বদলানোর।’

 

সূত্র জাগোনিউজ২৪ঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.