214735

বাংলাদেশের চিন্তার কারণ ‌‘ডার্টি পিল’

গত শনিবারের ঘটনা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮০০ পিস ইয়াবাসহ ফরিদ আহমেদ নামে এক যাত্রীকে আটক করে এপিবিএন। তাকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বহিরাঙ্গন থেকে আটক করা হয়। বেসরকারি এয়ারলাইন্সযোগে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসেন ফরিদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বহিরাঙ্গন থেকে আটক করা হয়। পরে তার পাকস্থলী এক্সরে করে ৮০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পেটে করে ইয়াবা বহন করে দীর্ঘ সময় থাকা অত্যন্ত বিপদজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, হাজারো ইয়াবা থাকা প্যাকেটগুলোর কোনো একটা লিক (ছিদ্র) করে বহনকারী মারা যাওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু এর পরেও পাকস্থলীতে করেই ইয়াবা আনছে।

সড়ক, রেল ও জলপথে ইয়াবা আনতে রিস্ক থাকায় এখন উড়িয়ে আনা হচ্ছে ডার্টি পিলখ্যাত মাদক ইয়াবা। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) দেওয়া তথ্য মতে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত বিগত ৫ মাসে ২৬টি চালান ধরা পড়েছে। এই ২৬টি চালানে ছিল ৬৪ হাজার ইয়াবা। এই হিসাব শুধু এপিবিএনের। প্রকৃত হিসাব এর চেয়ে একশ গুণ বেশি। কেন উড়ে আসছে ইয়াবা? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে যেয়ে পাওয়া গেল আশঙ্কাজনক তথ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকাশপথে ইয়াবা আনার জন্য বিভিন্ন কৌশলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ‘বিপদজনক’ কৌশল হলো পেট এবং গোপনাঙ্গ ব্যবহার করে ইয়াবা বহন। কারও বিরুদ্ধে কোনো গোয়েন্দা তথ্য বা কারও চলাফেরায় সন্দেহজনক কিছু মনে না হলে এই পদ্ধতিতে আনা ইয়াবা বা বহনকারীকে আটক করা সম্ভব নয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়াবার মতো মাদক চিহ্নিত করার মতো কোনো স্ক্যানারও নেই। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের ব্যাগেজ তল্লাশির জন্য বিমানবন্দরগুলোতে স্থাপিত এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন এবং এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস) ধাতব ও বিস্ফোরকদ্রব্য শনাক্ত করতে সক্ষম হলেও মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবার মতো মাদক শনাক্ত করতে সক্ষম নয়। এসব মেশিনের মাধ্যমে মদের বোতল, বিয়ারসহ সহজে দৃশ্যমান বড় আকৃতির প্যাকেটজাত মাদক শনাক্ত করা সম্ভব। বিমানবন্দরে মাদক শনাক্তের এই দুর্বলতার ফাঁকে আকাশপথে ব্যবহার করে ইয়াবা বহনকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, একজন বাহক তার স্টমাকে (পেট) করে দুই থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা বহন করতে পারে।

আর এই ইয়াবা বহন করার জন্য ঢাকা থেকে বাহকরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় আকাশপথে যায় এবং পেটে ইয়াবা নিয়ে আকাশ পথেই আবার ঢাকায় ফিরে আসে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘বিমানবন্দরে পেটে বা গোপনাঙ্গে ইয়াবা বহনকারী চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। সে লক্ষ্যে এপিবিএনসহ আমরা সবাই নজরদারি জোরদার করেছি। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে আশা করছি, এই চোরাচালান অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, সড়ক পথ রেলপথে যতই কঠোর ব্যবস্থা থাকুক লাভ হবে না। উড়ে উড়েই আসতে থাকবে ইয়াবার চালান। বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.