207040

কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ভিক্ষুক মুক্ত হবে: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী

অনলাইন সংস্করণঃ- বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ তুরস্কের পরিবার ও সমাজ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় যান। আঙ্কারায় অবস্থিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পাঠকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: নতুন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসার পরে আপনার অধীনে এই মন্ত্রণালয়ের কি কি প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা আছে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশুদের, সন্তানদের জন্য আমরা শিক্ষা বৃত্তি, ক্যানসের, কিডনি, লিভার, সিরোসিস, প্যারালাইসিসসহ আরও অনেক জটিল রোগীদের জন্য আমরা এককালীন দিচ্ছি।

আমরা ধাপে ধাপে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করবো। প্রতিটি বয়স্ক মানুষ যেন এই সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সে ব্যাবস্থা নিশ্চিত করবো। আগামী বাজেটে ভাতার পরিমাণ আরও বাড়াবো। প্রতিবন্ধীদের, বিধবাদের জন্যও আগামী বাজেটে আমরা ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করবো। ইনশাল্লাহ, এভাবেই সমাজের, পিছিয়ে পড়া, পশ্চাৎপদ, অবহেলিত, উপেক্ষিত মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রশ্ন: বর্তমানে কত লোক আপনাদের সুবিধা ভোগ করছে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: আমরা ১০ লাখ লোককে প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছি। আমাদের হিসেবে মতে, সারা দেশে আনুমানিক ১৫ লাখ ৬৪ হাজার (প্রায় ১৬ লাখ) প্রতিবন্ধী আছে। আমরা আগামী অল্প দিনের মধ্যেই তাদের সবাইকে এই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসবো। ৪০ লাখ লোককে আমরা বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি। প্রায় ৮ লক্ষ মহিলা বিধবা ভাতা পাচ্ছে।

কর্ম সংস্থান তৈরিতে গ্রামের দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে আমরা ঋণ বিতরণ করছি। তারা সেই বিনা সুধের টাকায় নিজেরাই কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করছে, ব্যবসা বাণিজ্য করছে। ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, প্যারালাইসিসসহ আরও অনেক জটিল রোগীদের জন্য আমরা এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়ে থাকি। এছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আরও অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: আপনার মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের জন্য আর কি কি করছে? উত্তর: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি প্রতিবন্ধীদের অবহেলিত রাখতে চান না। আগে আমরা দেখতাম আমাদের দেশে কারও ঘরে যদি প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নিতো, লজ্জায় তার সন্তান যে প্রতিবন্ধী সেটা কাউকে বলত না। আর ওই প্রতিবন্ধী সন্তানকে ঘর থেকেও বের হতে দিত না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার জন্য, প্রতিবন্ধীরা যাতে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে, তাদেরকে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রকারের সহযোগিতা দিয়ে প্রতিবন্ধীদের যেন সমাজের মূল ধারায় আনা যায় সেজন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিবন্ধীরা নিজেদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করত। কিন্তু এখন প্রতিবন্ধীদের মধ্যে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ম্যাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করছি। সরকারি চাকরিতে ১ শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ আছে।

প্রশ্ন: নতুন সরকারের অধীনে আগামী দিনের পরিকল্পনাগুলো একটু বিস্তারিত বলবেন কী? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: ধাপে ধাপে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করবো। প্রতিটি বয়স্ক মানুষ যেন এই সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো। আগামী বাজেটে ভাতার পরিমাণ আরও বাড়াবো। প্রতিবন্ধীদের, বিধবাদের জন্যও আগামী বাজেটে আমরা ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করবো। ইনশাআল্লাহ, এভাবেই সমাজের, পিছিয়ে পড়া, পশ্চাৎপদ, অবহেলিত, উপেক্ষিত মানুষের কল্যাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রশ্ন: এতিমদের জন্য আপনারা কী করছেন? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: আমরা প্রতিটি জেলায় শিশুদের জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি সেখানে বালক-বালিকারা থাকে। আর বৃদ্ধদের জন্যও সেখানে আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রশ্ন: সারা দেশে লক্ষ লক্ষ শিশু সমাজের মূলধারা থেকে ঝরে পড়ছে এই ঝরে পড়া শিশুদের জন্য আপনার মন্ত্রণালয় কী করছে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: আমরা তাদের জন্য প্রতি জেলায় শিশু পরিবার গড়ে তুলেছি। পথশিশুদের এনে এই শিশু পরিবারে রাখছি, ভরন পোষন দিচ্ছি, খাবার ব্যবস্থা করছি। এবং তাদের পড়াশোনর ব্যবস্থা করছি। এগুলো সব সরকারি শিশু পরিবার। শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করছি।

প্রশ্ন: এরকম শিশু পরিবার সারা বাংলাদেশে কতগুলো আছে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: সারা দেশে মোট ৮৬ টি আছে। প্রতি জেলায় জেলায় আছে।

প্রশ্ন: ঢাকার রাস্তায়, যত্রতত্র, ফুটওভার ব্রিজে, আন্ডারপাসে অনেক লোকজনকে রাতে ঘুমোতে দেখা যায় এই ভিটেমাটিহীন লোকদের জন্য আপনার মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বিনামূল্যে ঘর করে অবস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও ভিক্ষুক মুক্তির জন্য আমরা সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে ভিক্ষুকদেরকে টাকা দিয়েছি। বেশ কয়েকটি জেলা আমরা ভিক্ষুক মুক্ত ঘোষণা করেছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ৬৪টি জেলা আমরা ভিক্ষুক মুক্ত করতে পারবো বলে আমি আশা করি।

প্রশ্ন: সমাজকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তুরস্ক ও বাংলাদেশের এর মধ্যে কোনো ধরনের চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা অথবা পরিকল্পনা আছে কি না? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান: এ রকমের একটা পরিকল্পনা আছে। আসছিলাম এই যে একটা সভা এদের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় করলেন। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমার দেশের, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে কল্যাণমুখী কর্মসূচি আছে তা আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তুরস্কের ব্যাপারেও আমি শুনেছি, তারা বয়স্ক লোকদের জন্য কি কি করতে চাচ্ছে আমি খোঁজখবর নিয়েছি।

আমি মনে করি বাংলাদেশ, আমরা এখন আর পিছিয়ে নেই। সমাজের, পিছিয়ে পড়া, পশ্চাৎপদ, অবহেলিত, উপেক্ষিত, বঞ্চিত মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই নতুন সরকার আগামী দিনে যাতে গ্রামের এই দুস্থ অসহায় পঙ্গু মানুষদের কল্যাণের জন্য সবকিছুই করা হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেভাবে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, এক সময়ের অচেনা বাংলাদেশকে এখন সারা বিশ্ব রোল মডেল হিসেবে দেখছে। আপনাদেরকে আমি এ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এই জন কল্যাণমুখী কর্মসূচির জন্যও রোল মডেলে পরিণত হবে।

সূত্র বাংলা লাইন ২৪ঃ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.