203440

এক্সক্লুসিভগবেষকদের দাবী: যে ৬ টি খাবার না খেলে কলিজা থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় না!

ডেস্ক রিপোর্ট।। যকৃত বা লিভার বা প্রচলিত বাংলায় ‘কলিজা’ হচ্ছে আমাদের শরীরের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুস্থ থাকতে চাইলে, শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মতো এর যত্নও সমানভাবে নিতে হবে। শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটি। তাই আমাদের লিভার বা কলিজাকে সুস্থ রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খেলে কলিজা ভালো থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তা লিভারের ওপর চাপ তৈরি করে। শরীর থেকে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর চর্বি ঠিকমতো প্রক্রিয়াজাত হয় না। কিছু খাবার আছে, যা কলিজা থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। শেষের দিকে বোনাস হিসাবে থাকছে যকৃতের সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সংযোগ নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন! যে ৬ টি খাবার না খেলে কলিজা থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় না!

১. আঙুর : ছোট এ রসালো ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন—যা স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি। সুস্বাদু এ ফলের আছে নানা খাদ্য ও ভেষজ গুণ।আঙুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। প্রতিদিন এক গ্লাস করে আঙুরের জুস খেতে পারেন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করবে।

২. বিট : বাজারে এখন দেদার বিক্রি হচ্ছে বিট৷ শুধু রূপে যেমন অনন্য, গুণেও তেমনি৷ বিট সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আলেয়া মাওলা বললেন, ‘এই সবজিটি দিনকে দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ খেতে যেমন স্বাদের, পুষ্টিগুণেও ভরপুর৷ বিটে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েডস ও বিটা-ক্যারোটিন নামের উপাদান আছে বলে তা কলিজার জন্য ভালো। কলিজা সুস্থ রাখতে এ খাবারটি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখতে পারেন।

৩. পালং : আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক-সব্জি থাকা এক কথায় বাঞ্ছনীয়। কারণ এটি ছাড়া সুষম খাবারের শর্তই পূরণ হয়না। আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখা। সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি বিশেষ করে পালংশাক ও লেটুসপাতা কলিজা ভালো রাখতে দারুণ উপকারী। এতে থাকা ক্লোরোফিল রক্ত থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বিষ দূর করে।

৪. অ্যাভোকাডো : এটি একটি উচ্চ ফ্যাট এবং প্রচুর ভিটামিনসমৃদ্ধ ফল। এই গাছ আমেরিকা ও মেক্সিকোতে বেশি জন্মায়। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মেক্সিকোতে এই ফলের উদ্ভাবন হয়। এই ফল পারসে আমেরিকা হিসেবেও পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এ, সি, ই ও কে। আছে প্রচুর পটাশিয়াম। এতে আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালো কোলেস্টেরল, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। অর্থাৎ শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।

৫. আখরোট : আখরোটকে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি ও চর্বি সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয় এবং তাই একে এড়িয়ে যান অনেকেই। যদিও আখরোট প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং বিপাক থেকে শুরু করে হৃদস্বাস্থ্যের জন্য ও উপকারী। আখরোটে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকার কারণে আখরোট দেহের উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং অপকারী কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। যকৃতের পরিষ্কারের প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে আখরোট।

৬. গাজর : গাজরে আছে গ্লুটাথায়ন নামের উপাদান যা যকৃৎকে সুস্থ রাখে। গ্লুটাথায়ন প্রোটিন যকৃৎ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে পারে। এতে ফ্লাভোনয়েডস ও বিটা-ক্যারোটিনও আছে। গাজরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন লাইকোপিন ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। বিটা ক্যারোটিন চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। শীতের সময় অন্যান্য সবজির সঙ্গে গাজর পাওয়া যায় প্রচুর। গাজরের পুষ্টিমান ও উপকার পুরোপুরি পেতে কাঁচা বা আধা সেদ্ধ অবস্থায় খান।

নতুন এক গবেষণা বলছে, আপনার যকৃতই আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যাদের পেটে চর্বির পরিমাণ বেশি তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তিন গুন বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, আমাদের যকৃত ও মস্তিষ্কের স্মৃতিকেন্দ্র হিপোক্যাম্পাস উভয়েই PPARalpha. নামে একটি প্রোটিন ব্যবহার করে। যকৃত পেটের জমে যাওয়া চর্বিকে দূর করতে এই প্রোটিনের সাহায্য নেয়, আর মস্তিষ্ক স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে এই প্রোটিন ব্যবহার করে। যাদের পেটে অনেক বেশি চর্বি জমে, তাদের ক্ষেত্রে যকৃতকে এই চর্বিগুলো দূর করতে অনেক বেশি পরিমাণে কর্মক্ষম থাকতে হয়। আর এজন্য দেখা যায় PPARalpha.র প্রায় সবটাই যকৃত ব্যবহার করে ফেলে।

যকৃত তার নিজের জন্য নির্ধারিত PPARalpha.ব্যবহার করে শেষ করে ফেললে দেহের অন্যান্য অংশের জন্য প্রয়োজনীয় PPARalpha.প্রোটিন ব্যবহার করতে শুরু করে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের জন্য নির্ধারিত PPARalpha। ফলে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশটি এর জন্য প্রয়োজনীয় PPARalpha প্রোটিন থেকে বঞ্চিত হয়। যেটি থেকে তৈরি হয় স্মৃতিশক্তিহ্রাস ও কোন কিছুর শেখার ক্ষমতা কমে যাবার মতো সমস্যাগুলো। গবেষণাটি পরিচালনা করেন শিকাগোর Rush University Medical Center-এর গবেষকরা আর গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় Cell Reports জার্নালে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.