199094

কাজে একটু দেরি হলেই ফ্রিজের মধ্যে তার মাথা ঢুকিয়ে দিতেন

প্রথম আলো : সৌদি আরব থেকে গত শনিবার দেশে ফিরেছে এক কিশোর (১৬)। ওই দিন সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। তার বাম ও ডান হাতের কবজিতে কাটার ক্ষতচিহ্ন, দুই পায়ে অ্যাসিডে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায়ও ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে জানায় সে।

ওই কিশোরী অভিযোগ করে, সৌদি আরবে যার বাড়িতে সে কাজ করত, ওই বাড়ির গৃহকর্তাসহ পরিবারের সব সদস্যই তাকে মারধর করতেন। কাজে একটু দেরি হলেই ফ্রিজের মধ্যে তার মাথা ঢুকিয়ে দিতেন। দেয়ালের সঙ্গে মাথা ধাক্কা দিতেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নানাভাবে নির্যাতনের কথা জানাল সে।

Eprothom Aloগত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই কিশোরী রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায়। ওই দিন রাত ১০টার দিকে সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে।

২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সৌদি আরবে গিয়েছিল ওই কিশোরী ও তার ছোট বোন। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদম ব্যবসায়ী আক্তার মিয়া সৌদি আরবে হাসপাতালে কাজ করার প্রলোভন দেখায় তাদের বাবাকে। আক্তার মিয়া ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় তাদের সৌদি আরবে পাঠান। হাসপাতালে কাজের পরিবর্তে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়া হয় দুই বোনকে। ওই কিশোরী নির্যাতন সহ্য করে থেকে গেলেও ছোট বোন সৌদি আরবে যাওয়ার ২০-২৫ দিন পরেই বাংলাদেশে ফেরত চলে আসে। আর গত শনিবার ওই কিশোরী দেশে আসে।

ওই কিশোরী বলে, জেদ্দায় একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করত সে। ওই পরিবারের সবার কাজই তাকে করতে হতো।

পাশাপাশি বাগানেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। সে আরও বলে, ‘একদিন কফিল (গৃহকর্তা) আমাকে চা বানাতে বলেছিল। একই সঙ্গে কফিলের স্ত্রী পেঁয়াজ ছুলতে বলেছিল। চা বানাতে গিয়ে পেঁয়াজ ছুলতে দেরি হয়। কেন দেরি হলো, এ জন্য কফিলের স্ত্রী আমাকে ডেকে রান্না ঘরে নিয়ে যায়। এরপর আমার বাম হাতের কবজি বরাবর ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ডান হাতেও আঘাত করে।’

ওই কিশোরী আরও বলে, ‘দুই দিন ফ্রিজের মধ্যে কয়েক মিনিট আমার মাথা ঢুকাইয়া রাখছে। জুতা দিয়া পিটাইছে। ওয়ালের মইধ্যে আমার মাথা মারছে। একটি এদিক-সেদিক হলেই মারত। দুই পায়ের হাঁটুর নিচে অ্যাসিডে ঝলসে দিছে অনেক বার। আমি বাবাকে অনেকবার বলেছিলাম, যদি জীবিত দেখতে চাও নিয়ে যাও। আমি পালাতে পারতাম। কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়। পাসপোর্ট ছিল গৃহকর্তার কাছে।’

দেশে কীভাবে এসেছে জানতে চাইলে ওই কিশোরী বলে, ‘একদিন কফিলের স্ত্রীকে বলি, আমাকে দেশে না পাঠালে আত্মহত্যা করব। ১৬ দিন ধরে নিজের মাথা নিজেই দেয়ালে আঘাত করেছি। মালিকের স্ত্রীকে কিছু ইংরেজি ও আরবিতে বলেছি, আমাকে বাংলাদেশে পাঠান।’

ওই কিশোরী জানায়, দেশে পাঠানোর সময় তার গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী মুঠোফোন, মেমোরি কার্ড এবং তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার রিয়েল রেখে দেন।

জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মির্জা মোহাম্মদ সাইফ বলেন, ওই কিশোরীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে নির্যাতিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তার পুরো শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তাকে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই কিশোরীর বাবা বলেন, ‘ছোট মেয়ে মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি। পরে দালালকে টাকা দিয়ে মেয়েকে দেশে আনার ব্যবস্থা করেছিলাম। আরেক মেয়েও একই ধরনের অত্যাচারের কথা বলেছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আদম ব্যবসায়ী আক্তার মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.