198413

নববর্ষের প্রথম দিনে স্বত্বমুক্ত হাজার সৃষ্টি

এইসময় :  এরকুল পোয়রোর ‘দ্য মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস’ অবলম্বনে সিনেমা বানাতে চান? অথবা, মঞ্চে অভিনয় করতে চান খলিল জিব্রানের ‘দ্য প্রফেট’?

এমনকি ভার্জিনিয়া উল্ফের ‘মিসেস ডালোওয়ে’ বা জর্জ বার্নার্ড শ-এর ‘সেন্ট জোন’ নাটক দিব্যি ছাপিয়ে ফেলে বিক্রি করতে পারবেন বই হিসেবে। কাউকে স্বত্ব বাবদ দিতে হবে না একটি পয়সাও।

আজ ১ জানুয়ারি, ২০১৯ থেকে স্বত্বমুক্ত হচ্ছে এই উপন্যাস বা নাটকগুলি। স্বত্বমুক্তি ঘটছে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হাজার হাজার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটকের। সে বছর মুক্তি পাওয়া সিনেমা, প্রকাশ্যে আসা গান বা আঁকা বা ভাস্কর্যও স্বত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে নতুন বছরের পয়লা দিনে।

দীর্ঘ ২০ বছর বন্ধ ছিল আমেরিকায় স্বত্বমুক্তির কাজ। ২০১৯ থেকে ফের মুক্ত হতে শুরু হচ্ছে শিল্প-সাহিত্য। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি পাবলিক ডোমেনে আসবে ১৯২৪ সালে প্রকাশিত সাহিত্য, গান, সিনেমা। যে তালিকায় থাকবে আগাথা ক্রিস্টির ‘পোয়রো ইনভেস্টিগেটস’ বা পাবলো নেরুদার ‘টোয়েন্টি লাভ পোয়েমস অ্যান্ড এ সং অফ ডেসপেয়ার’-এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকীর্তি। তালিকায় নাম আছে সুকুমার রায়েরও। তিনি মারা যান ১৯২৩ সালে। সে বছরই প্রকাশিত হয়েছিল ‘আবোল তাবোল’। ভারতে ‘আবোল তাবোল’ স্বত্বমুক্ত হয়েছে আগেই। কিন্তু আমেরিকায় স্বত্বমুক্ত হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার।

জনগণের সামনে মুক্ত হচ্ছে বলে এই বিশেষ দিনটিকে বলা হচ্ছে পাবলিক ডোমেন ডে।

শেষ বার কোনও সৃষ্টির স্বত্বমুক্তি ঘটেছিল ১৯৯৮ সালে। তার কারণ, ডিজনি সংস্থার মামলা। তাদের ‘মিকি মাউস’ ২০০৪ সালেই কপিরাইট থেকে মুক্ত হয়ে যেত। তা আটকাতে মামলা করেছিল ডিজনি। এই মামলার জেরে সব কিছুরই স্বত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া পিছিয়ে যায় কুড়ি বছর। নতুন নিয়মে ‘মিকি মাউস’ চরিত্রটি এ বার স্বত্ব থেকে মুক্ত হবে ২০২৪ সালে।

১৯২২ সালে প্রকাশিত গল্প, কবিতা, নাটকের স্বত্ব ১৯৯৮ সালে শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় মুক্ত হয়ে যায় জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ বা টি এস এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’। এ বার স্বত্বমুক্তির প্রতীক্ষায় রবার্ট ফ্রস্ট, চার্লি চ্যাপলিন, পাবলো পিকাসো, উইনস্টন চার্চিলের মতো বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সৃষ্টি।

স্বত্বমুক্তির পর নিঃসন্দেহে তা ইন্টারনেটে খুঁজে বের করার প্রবণতাও বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, গুটেনবার্গের মতো ওয়েবসাইট যারা স্বত্বমুক্ত সাহিত্য নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ করে রেখেছে, তাদের কাজ আবার শুরু হয়ে যাবে আগামী মঙ্গলবার থেকেই। ইউটিউবে ‘আপলোড’ করা যাবে স্বত্বমুক্ত সিনেমাগুলিও।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘একটা নির্দিষ্ট সময় পর যে কোনও সাহিত্য বা শিল্প তার স্বত্ব থেকে মুক্ত হওয়াই ভালো। এক সময় রবীন্দ্র রচনাবলির জন্য শুধু বিশ্বভারতীর সংস্করণের অপেক্ষা করতে হত। স্বত্বমুক্ত হওয়ার পর যা সহজলভ্য হয়েছে। তা নিয়ে কেউ রিমেক বা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেও কোনও অন্যায় নেই।’ সাহিত্যিক অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তও মনে করেন, ‘স্বত্ব তুলে দেওয়া এক হিসেবে স্বাস্থ্যকর লক্ষণ। শিল্পের ক্ষেত্রেও অজন্তার কাজ যাঁরা করেছিলেন তাঁদের অনামিকতা আজও আদর্শ প্রতিম। অবশ্য রবীন্দ্রনাথের রচনার স্বত্ব যখন চলে যায়, তার ফল ভালো হয়নি। এই মুহূর্তে যখন সাহিত্য পাঠই বিরল ঘটনা হয়ে উঠছে, তখন পাঠক ও স্রষ্টার মধ্যে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হতে দেওয়াই উচিত।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.