197917

‘ব্লাউজ’ নিয়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপ নিয়ে এখন যা বলছেন অভিনেত্রী অঞ্জনা (ভিডিও)

বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে নারীদের ব্লাউজ পরা প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অভিনেত্রী অঞ্জনা সুলতানা এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে অঞ্জনা যা বলেছিলেন, তারই একটি অংশ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে।

ওই ভিডিও ক্লিপে অঞ্জনাকে বলতে শোনা যায়, “গার্মেন্টেসের কাপড় যে যেভাবেই হোক – আজকাল গ্রামেগঞ্জে কেউ কিন্তু ব্লাউজ ছাড়া থাকে না। এটা কার উদ্যোগ? কার সফলতা এটা? এটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা।”

ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা

অঞ্জনার এই বক্তব্যের ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্যের পাশাপাশি ট্রলও চলছে ফেসবুকে। অনেকে একে ‘বিনোদন’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, “তাহলে তো এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ”। “….কেন আমরাই বারবার বঞ্চিত হই” বলে মন্তব্য করেছেন মুনিরা ইসলাম। হাসির ইমোজি দিয়ে ফারহানা আহমেদ ছোঁয়া লিখেছেন “মোবাইল আর ব্লাউজ কোনডাই পাইলাম না”। আবার অনেকে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে অঞ্জনার এই মন্তব্যের সমালোচনা করছেন।

আরিয়ান মাহমুদ সোহেল যেমন মন্তব্য করেছেন “কথা বলার মত কি আর কোনো কথা ছিল না!”  তসলিম জামান নয়ন বিস্ময়সূচক বাক্যে লিখেছেন ” উন্নয়ন সর্বত্র !!!”
নিজের মন্তব্য ও ভিডিও ট্রল নিয়ে কী বলছেন অঞ্জনা?

https://www.youtube.com/watch?v=W7bOP0JBCjs

বিষয়টি নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে অঞ্জনা বলেছেন যে সেদিন টেলিভিশনের আলোচনায় তিনি ঠিকভাবে তার বাক্য পূর্ণ করতে পারেননি।  “আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে যখন আমি যখন গ্রামেগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিংয়ে যেতাম, তখন দেখতাম অনেক মহিলা ব্লাউজ পড়তো না, শাড়ির আঁচল টেনে রাখতো। টাকার অভাবে তাদের অনেকে ব্লাউজও কিনতে পারতো না। আমি বলতে চেয়েছি সেই সময়ের তুলনায় এই সময়ের চিত্র পাল্টে গেছে। তখনকার সেই আর্থিক সমস্যাটা এখন কিন্তু আর নেই”।

ওইসব অঞ্চলে এখন যে আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে, সেটাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন বলে জানান অঞ্জনা। “গ্রামের নারীরা এখন শাড়ি পরছেন, ব্লাউজ পরছেন, ম্যাক্সিও পরছেন। দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এসেছে সেটা এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত দশ বছরেই হয়েছে। এটাই বলতে চেয়েছি।

কিন্তু সেদিন অনুষ্ঠানে তার বাক্যটা পূর্ণ হয়নি বলে এভাবে সেটা ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা। “আমার খারাপ লেগেছে এটা ভেবে যে পুরো অনুষ্ঠান থেকে ওই ক্লিপটা ভাইরাল হলো। অথচ অন্য যে ভালো কথাগুলো হলো সেটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না”। তবে তাঁর ‘অসম্পূর্ণ সংক্ষিপ্ত এই বাক্যে’ কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে বা অপমানিত বোধ করলে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন অঞ্জনা।

এখানে উল্লেখ্য, টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানে অঞ্জনার সঙ্গে অতিথি হিসেবে ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং একজন চিকিৎসক। পোশাক শিল্পের একটা প্রসঙ্গ ওঠার পর অঞ্জনা গ্রামের নারীদের ব্লাউজ পরার বিষয় নিয়ে ওই কথাটি বলেছিলেন বলে তিনি জানান। ফেসবুকে এতসব আলোচনা-সমালোচনা পর যে প্রশ্নটি অনেকেই করছেন তাহলো বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে কি আসলেই এমন চিত্র ছিল?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলছেন “কোন সমাজের নারী-পুরুষ কী পরবেন সেটা তার অভ্যাস, তার সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। আমাদের নানী-দাদীদের যে বাস্তবতায় যেভাবে চলতে দেখেছি, সময়ের সাথে সাথে তা পাল্টে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।”

তিনি বলেন, গত ৩০-৩৫ বছর আগে বাংলাদেশের গ্রামের যে চিত্র ছিল, তাতে অনেক পরিবারই আর্থিক কষ্টে থাকতো – দরিদ্র ছিল অনেক মানুষ। তাদের ঘরে হয়তো এক-দুটো শাড়ি থাকতো। সেটা দিয়েই তারা বছর চালিয়ে দিতেন। অনেকে হয়তো ধার করে শাড়ি পরেছেন। এখন সেই সময়টা নেই।

সাদেকা হালিম বলেন, “এখন আর্থিক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে গ্রামের নারীদের পোশাক পরিধানেও কিছু পরিবর্তন আমরা দেখছি। অনেকে এখন ঘরের বাইরে পরার জন্য শাড়ি-ব্লাউজ আলাদা করে রাখতে পারেন”। এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, একেক গোষ্ঠী একেক ভাবে পোশাক পরিধান করেন, আবার আদিবাসী নারীদের কাপড় পরার ধরনও আলাদা।

জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে পোশাক পরিধানের একটা সংস্কৃতি সবসময় চলে আসছে উল্লেখ করে মিস হালিম বলেন, “কোন নারী কীভাবে পোশাক পরলো তা নিয়েতো আমরা তাকে সমালোচনা করবো না”।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.