196333

শিল্পীদের রোজগার কম মানসিক চাপ বেশি

ন্টারটেইনমেন্ট রিক্রুটমেন্ট প্রতিষ্ঠান দ্য মান্ডি নেটওয়ার্ক তাদের ৩ হাজার ৬৭ জন সদস্যের ওপর অনলাইনে এ বিষয়ে একটি বিশদ জরিপ চালায়  তারকা শিল্পীদের আয়-রোজগার আর বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে, বিনোদন খাতে যুক্ত সব শিল্পীই হেসে-খেলে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গুটিকয়েক তারকা শিল্পী ছাড়া বেশির ভাগ শিল্পীকেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয় এবং তা জীবনযাপনের খরচ তুলতে গিয়েই। সম্প্রতি এ রকম একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে এন্টারটেইনমেন্ট রিক্রুটমেন্ট প্রতিষ্ঠান দ্য মান্ডি নেটওয়ার্ক।

 

প্রতিষ্ঠানটির চালানো জরিপ বলছে, বার্ষিক আয়ের হিসাবে গত বছর শতকরা দুই-তৃতীয়াংশ (৬৩ শতাংশ) শিল্পী তাদের নিজ পেশায় গড়ে রোজগার করেছেন ৫ হাজার পাউন্ডের নিচে। অবশ্য অবস্থা আশানুরূপ না হলেও তুলনামূলক বিচারে তা ২০১৪ সালে পরিচালিত একই বিষয়ের ওপর চালানো জরিপের চেয়ে একটু ভালোর দিকে। উল্লিখিত সময়ে অভিনেতা, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের এ হার ছিল ৭৭ শতাংশ।

 

নতুন এ প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার শিল্পী বিনা পারিশ্রমিকে এ পেশায় শ্রম দিচ্ছেন। এছাড়া ৬০ শতাংশ শিল্পী বিনোদন খাতের বাইরে অন্য আরো একটি পেশায় জড়িত। প্রতি পাঁচজনের একজন গত ছয় মাসে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে পারিশ্রমিক পাননি। যেখানে মাত্র ১৩ শতাংশ শিল্পী বছরে ২০ হাজার পাউন্ডের বেশি রোজগার করেন।

 

তরুণ অভিনেত্রী অ্যানামেকা আন্দ্রাদে নিজের অভিজ্ঞা জানাতে গিয়ে বিবিসিকে বলেছেন, তিনি দক্ষিণ লন্ডনের ব্রিট স্কুল থেকে ২০০৬ সালে স্নাতক করেছেন। এরপর চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তার প্রত্যাশা ছিল, এ পেশায় তিনি ভালো রোজগার করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশা ব্যর্থ হয়। উপায়ান্তর না পেয়ে স্বপ্নের এ পেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে একটি কল সেন্টারে যোগ দিতে হয়েছিল।

 

এ গবেষণায় আরো ইঙ্গিত করা হয়েছে, বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত পেশাজীবীদের অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ নারী ও ৪৮ শতাংশ পুরুষ উদ্বেগজনিত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন। ৫৯ শতাংশ নারী ও ৬১ শতাংশ পুরুষ প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকেন। এদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ নারী ও ৩৬ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তারা বিষণ্নতায়ও ভোগেন।

মান্ডি একই সঙ্গে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন কর্মীদের নিয়েও পর্যবেক্ষণ করেছে। এখানে দেখা গেছে, এর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কেউ কেউ শিল্পীদের তুলনায় বেশি পারিশ্রমিক পান। যদিও ৫৪ শতাংশ কর্মী প্রতি বছর (চলতি বছরসহ) ১০ হাজার পাউন্ডের নিচে আয় করেন। প্রতি মাসে ১৩ শতাংশ কর্মী কোনো অর্থই পান না এবং ১২ শতাংশ কর্মী গত ছয় মাসে অর্থ রোজগারের জন্য কোনো চাকরির সংস্থান করতে পারেননি। অবশ্য ক্রিয়েটিভ ট্রেড ইউনিয়ন ইকুইটির একজন প্রতিনিধি এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন এভাবে, ‘বিনোদন ও ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ পেতে অবশ্যই মেধা থাকতে হবে।’

 

এ প্রতিবেদন অর্থ রোজগার ও সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারে তথ্য তুলে ধরেছে। প্রতি বছর ৮২ শতাংশ নারী ১০ হাজার পাউন্ডের নিচে অর্থ রোজগার করেন। যেখানে পুরুষের হার ৬৯ শতাংশ। বাড়তি রোজগারের জন্য ৬৩ শতাংশ নারীকে বিনোদন খাতের বাইরে অন্য কোথাও কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রেও পুরুষরা নারীদের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। বিনোদন পেশার বাইরে অন্য কোনো মাধ্যম থেকে অর্থ রোজগারের ক্ষেত্রে পুরুষের এ হার নারীদের চেয়ে ৬ শতাংশ কম। উল্লেখ্য, মান্ডি নেটওয়ার্ক চলতি বছরের ১২-৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের ৩ হাজার ৬৭ জন সদস্যের ওপর অনলাইনে এ জরিপ চালায়।

 

সূত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত

Comments are closed.