টেলিভিশন আসক্তি নিয়ন্ত্রনের কৌশল
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতিদিন দুই ঘণ্টা টিভির সামনে ব্যয় করা মানে জীবন থেকে প্রতি বছর একটা মাস হারিয়ে যাওয়া। ভেবে দেখেছেন ব্যাপারটা? আর এমন কে না আছে যে প্রতিদিন টিভির সামনে দুই-চার ঘণ্টা ব্যয় করে না! যারা করে না, তাদের সংখ্যা সীমিত। এ হিসেবে শুরুটা খুব সাধারণ মনে হলেও বছর শেষে জমা কিন্তু অনেক বেশি। সুতরাং টিভি আসক্তি দূর করা আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয়, যেখানে এরচেয়ে আরও অনেক অনেক জরুরি সময় ও কাজ রয়েছে। কিন্তু সেটা কীভাবে? সিরিয়াল না দেখলে যে আমার চলে না? ক্রিকেট খেলা না দেখে লাইফ চলে? টক শো তো প্রতিদিনই আমাকে দেখতে হয়! অন্তত দুটো টকশো না দেখলে দেশ সম্পর্কে জানব কীভাবে? নানা প্রয়োজন-অপ্রয়োজন মিলেই প্রতিদিন আমাদের জীবন থেকে ব্যয় হচ্ছে অতি মূল্যবান সময়। অথচ একটু সাবধান হলেই, একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই অনেক সময় বাঁচে আর প্রয়োজনীয় কিছুই হারায় না জীবন থেকে।
সময়ের চাকায় চড়ে
আপনি নিজের জীবনটাকে রিউইন্ড করে দেখুন তো একটু। সময় মেনে, নিয়ম করে টিভি দেখেন কী? নাকি টিভির সামনে রিমোট নিয়ে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে ফেলেন- এই চ্যানেল সেই চ্যানেল নাড়াচাড়া করেই? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু তা হয়। সুতরাং আপনার বেলাতেও যদি তাই হয়, তবে এই অভ্যাসটা একটু পরিবর্তন করুন। টিভি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার দু-তিন মিনিট আগে অ্যালার্ম সেট করে রাখুন। অ্যালার্ম বাজলে টিভি দেখতে যান। তবে তার আগে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার দু-তিন মিনিট পরের অ্যালার্ম সেট করে অন্য রুমে রাখুন। এতে অনুষ্ঠান শেষের আগেই চলে আসতে পারবেন।
রাতের খাবারে টিভি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যারা রাতের খাবারের সময় টিভি চালিয়ে রাখেন, তাদের নানা সমস্যা হয়। যেমন- টিভিতে ধ্যান-জ্ঞান থাকায় খাবারে মনোযোগ থাকে না। ফলে খাবার ভালোভাবে খাওয়া হয় না; এতে হজমে সমস্যা হয়। খাবার টেবিলে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যায়; কিন্তু টিভি খোলা থাকলে কেউ কাউকে সেভাবে আপন ভেবে মনের কথা ভাগাভাগি করতে পারে না। ফলে মনোমালিন্য আর একঘেয়ে একটা ভাব চলে আসতে পারে। তাই রাতের খাবারের সময় টিভি অফ রাখবেন।
সামাজিক কাজে হাজিরা
সামাজিক কাজের প্রভাব এমনই, এগুলো করলে নিজের মনের মধ্যে এক ধরনের তৃপ্তি আসে। সুতরাং জরুরি টিভি দেখার সময়েও যদি সামাজিক কাজের ডাক আসে, আপনি টিভি ফেলে সে কাজে যোগ দিন আনন্দচিত্তে।
পাঠের জাদু
প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। টিভি দেখার আগে অন্তত ৩০ পৃষ্ঠা বই পড়ার নিয়ম নিজের মাঝে চালু করুন। দেখবেন এতে টিভিতে সময় অনেক কম দিচ্ছেন। এটা আপনার জন্য খুবই ইতিবাচক একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ধীরে ধীরে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।
সকাল-রাতে হাঁটা
অনেকেই ঘুম থেকে জেগেই টিভির সামনে বসে যান; কিংবা রাতের খাবার শেষ করে টিভির সামনে ঝিম মেরে বসে থাকেন। অথচ সকালে হাঁটা এবং রাতের খাবারের পর হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি। এতে করে দুটো লাভ। এক, আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকছে; দুই, আপনার আসক্তি কমছে টিভির প্রতি। সুতরাং এই হাঁটার অভ্যাসটা চালু করুন। দেখবেন সময় বাঁচছে; আবার সুস্থও থাকছেন।
আরও যা যা করার আছে
টিভিতে আসক্তি কমানোর জন্য আপনি আরও অনেক ভালো কাজ করতে পারেন। যেমন বিকেলের সময়টা কাজে লাগানোর জন্য প্রতিদিন বিকেলে রুটিন করে কোনো একটা প্রজেক্ট করতে পারেন। বন্ধুবান্ধব কিংবা আপনজনদের নিয়ে বাইরে বেড়াতে যেতে পারেন। পথশিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। এমনও হতে পারে, আগে যে সময়টিতে টিভি দেখতেন এখন থেকে সে সময়ে অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এভাবে এক মাসেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন নিজের মধ্যে।
আসক্তিকে বিদায়
আপনি যদি মনে করেন টিভির প্রতি আপনার আসক্তি আছে, তাহলেই কেবল পারবেন এটা দূর করতে। সুতরাং আগে নিজের মাঝে অনুধাবন করতে চেষ্টা করুন- এটা ক্ষতিকর। তারপর নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবেন সহজেই। গুছিয়ে নেওয়ার পর এই অভ্যাস দূর করা তেমন কোনো জটিল নয়। সুতরাং আগে বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে টিভি। এটা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আপনার চেতনা, বিবেক জেগে উঠবে। এটাই হোক সর্বপ্রথম আমাদের মূল্যবান সময় বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা। জীবন হোক আরও সুন্দর এবং মূল্যবান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন- সব সময়।
ইন্টারনেট থেকে