195317

খুন করে নামাজ আদায়, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা!

আগুনে পোড়া একটি মানব দেহ। দেখে চেনার উপায় নেই । জানা গেল মৃতদেহটি চট্টগ্রাম যুবলীগ নেতা আবুল হাশেম প্রকাশ বাচার।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রথমে ক্লুলেস ছিল আইনশৃংখলা বাহিনী। তবে সফলতার সে গল্প নির্মান করতে পেরেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

ঘটনার বিবরনে জানাযায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত নারী জানায়, ‘ঘটনার পর মসজিদের পুকুরে অযু করে মহিলাদের নামাজের জায়গায় জুম্মা এবং আছরের নামাজ আদায় করে কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে !

বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুকে হত্যার সহস্য উন্মোচনের বিষয়টি লিখেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ ভূইয়া, তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।

‘অপরাধী মনে করে ছিল সে নিজে মোবাইল ব্যাবহার না করলে এবং লুণ্ঠিত মোবাইল পুকুরে ফেলে দিলে পুলিশ তাকে সনাক্ত করতে পারবে না অথবা গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে না।’

‘কিন্তু সেই অপরাধীকে ও যথাযথ ভাবে সনাক্ত ও গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করিয়ে আদালতে আসামিকে বুঝিয়ে দিয়ে আমার তদন্তকারী চৌকষ টীমকে নিয়ে থানায় রওয়ানা করলাম।’

‘এ যেন টানা তিন দিন/তিন রাত প্ররিশ্রম করার পর একটি ক্লুলেস ও ব্যতিক্রমধর্মী অপরাধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের পর স্বস্তি পাওয়া’।

‘আমার এলাকায় গত ৩/৫/২০১৮ তারিখ দিবাগত রাতে নিজ শয়ন কক্ষে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাবেক যুবলীগ নেতা আবুল হাশেম প্রকাশ বাচার(৫০) চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে।’

‘ঘটনাটির নৃশংসতার পরিব্যাপ্তি দেখে মনের মধ্যে এর আদোপ্রান্ত খোজার সংকল্প করি। তাই সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যাই। ভিকটিমের বাসাটি একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং ছিল। বিদ্যুতের তার এখনও ছড়ানো ছিটানো, প্রধান গেইট বন্ধ থাকলেও করিডোরের জানালা একেবারে খোলা, যার মধ্য দিয়ে অনায়াসে লোক ঢুকতে পারে।’

‘শুধুমাত্র ইটের গাঁথুনির প্লাস্টারহীন উক্ত বিল্ডিং এর পিছনের দিকের সব কিছুই খোলা। তাই প্রধান গেইট খোলা থাকুক আর না ই থাকুক যে কেউ উক্ত খোলা অংশ গুলো দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারে। তাই ঘটনার রহস্য চারিদিকে সন্দেহের জাল বিস্তার করতে থাকে।’

‘আগুন নিভে যাওয়ার পরও গরমের তীব্রতা ও গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে সাধারণ মানুষ যেখানে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করার সাহস করে নাই, সেখানে আমি ও পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত Abul Kalam Azad উক্ত ঘরের ভিতর তিন ঘন্টা অবস্থান করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের প্রয়োজনীয় তদন্ত কৌশল নির্ধারণ করি।’

‘ঘটনাস্থলে অগ্নিসংযোগের ফলে প্রচণ্ড তাপের দখল তখনো কাটে নাই, যার ফলে ঘামে আমাদের শরীর ভিজে যায়। ঘাম আমাদের শরীর বেয়ে মাটিতে পড়ছে তারপর ও একাগ্রচিত্তে কাজ করছিলাম শুধুমাত্র ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য।’

‘থানা এলাকায় ভি আই পি ডিউটি ব্যতিরেকে দুই দিনে ঘটনাস্থলে ৪ বার গমন করি এবং ক্লু বের করার জন্য বলতে গেলে সেখানেই অবস্থান করি।’

‘ইতিমধ্যে মাননীয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তর জনাব মসিউদ্দোলা রেজা এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাংগুনিয়া সার্কেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আমাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।’

‘পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত তার ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় মোবাইল কল লিষ্ট সংগ্রহ পুরবক চারটি নম্বরকে Target করে Investigation Track নির্ধারণ করেন।’

‘ঘটনার রহস্য উদঘাটনে চট্টগ্রাম জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বিপিএম,পিপএম মহোদের অধম্য ইচ্ছা ও নিরবিচ্ছিন্ন তদারকি আমাকে বার বার তাড়িৎ করছে এ কাজে আরও মনোযোগী হতে।’

‘ইতিমধ্যে থানায় এসে তদন্ত কাজে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হলেন পুলিশ বিভাগের আরেক মেধাবী অফিসার, রাংগুনিয়া সার্কেল এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি না আসলে হয়তোবা অপরধী অধরাই থেকে যেত।’

‘টার্গেট কৃত Investigation Line থেকে বিভিন্ন সোর্সকে বিরতিহীন জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে Main Subject এক মহিলা(জিফু বেগম) কে Identify করি। তড়িৎ অফিসার পাঠিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। এবার শুরু হয় আসল Interrogations এর পালা।’

‘সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্যারের সরাসরি তত্ত্বাবধান এ আমি সহ এক দল প্রশিক্ষিত পুলিশ অফিসারের প্রায় ৫ ঘন্টা ব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন উপর্যুপরি জিজ্ঞাসাবাদে “Main Accused” অথ্যাৎ প্রধান আসামী জিফু বেগম (৪০) সকল কিছু স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।’

‘বিস্তারিত বর্ণনায় সে কিভাবে জুসের মাধ্যমে ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত করে আবুল হাশেম প্রকাশ বাচাকে খাইয়ে অচেতন করে ও পরে ঘরের কাপড় চোপর তার খাটে জমিয়ে পাশের রুম থেকে গ্যাস সিলিন্ডার এনে অগ্নিসংযোগ করে প্রকাশ বাচাকে হত্যা করে ।’

‘সে ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় বাচার ঘর থেকে চারটি মোবাইল ফোন সেট চুরি করে নিয়ে যায়। সে আরও স্বীকার করে যে চুরি করা চারটি মোবাইল সেট পরদিন স্থানীয় পোমরা “খা মসজিদের” পুকুরে ফেলে দিয়ে উক্ত পুকুরে অযু করে মসজিদে মহিলাদের নামাজের জায়গায় জুম্মার নামাজ এবং আছরের নামাজ আদায় করে তার কৃত কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’

‘জিফু বেগমের বক্তব্য অনুসারে রাতের বেলাই উক্ত পুকুর থেকে মোবাইল সেট সমুহ উদ্ধার করা হয়।সেই সাথে শেষ হয় একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের অজ্ঞাত আসামী সনাক্ত, তাকে গ্রেফতার,মালামাল উদ্ধার।’

‘থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ যে, প্রায় হাজার খানেক মোবাইল নম্বর পর্যালোচনা করে মাত্র চারটি নম্বরকে Target করে কাজটিকে ছোট পরিসরে নিয়ে আসেন।’

‘তাই তাকেসহ থানার সকল অফিসার ও Force এ কাজে চাহিদা মোতাবেক সময় ও শ্রম দিয়ে সহায়তা করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

পরিশেষে “অপরাধী তোমাকে বলতে চাই,

অপরাধ করলে আর রক্ষা নাই,

যে কোন ভাবে পুলিশ খুজে ধরবে তাই”।

উৎসঃ পূর্বপশ্চিম

পাঠকের মতামত

Comments are closed.