195037

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ছেলেকে খুন করেছেন বাবা: পুলিশ

প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে পরকীয়া প্রেম নির্বিঘ্ন করতে নিজ সন্তানকে খুন করে ফেঁসে গেলেন জাহিদ ওরফে জাহাঙ্গীর নামে এক চা দোকানদার। মাদকাসক্ত সন্তানকে মাকদের প্রলোভন দেখিয়ে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করেন তিনি। একটি ভিডিও ফুটেজজের সূত্র ধরে পুলিশ উদ্ধার করে এই হত্যা রহস্য।

১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড্ডা থানা এলাকার পূর্ব পদরিয়ার একটি ধানক্ষেত থেকে গালে ও ঘাড়ে জখমসহ কিশোর আউসার ওরফে আইসারের (১৩) রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পিতা জাহাঙ্গীর। এতে আসামি করা হয় প্রতিবেশী হেলাল উদ্দিন ওরফে হেলুসহ কয়েকজনকে। জাহাঙ্গীর বাড্ডার সাতারকূল এলাকার বাসিন্দা। সেখানে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। আইসার মাদকাসক্ত, মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাত। রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলসে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, হত্যা মামলার তদন্তে গিয়ে পুলিশ স্থানীয়দের কাছে জানতে পারে, হেলুর স্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্ব চলছিল। হিলু মাঝে-মধ্যে জাহাঙ্গীর ও তার ছেলেকে হত্যার হুমকিও দিত।

হিলুকে ঘিরে তদন্ত চালাতে গিয়ে পুলিশ একটি ভিডিও ফুটেজ পায়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই রাতে আইসারের সঙ্গে এক ব্যক্তি যাচ্ছে এবং তার কিছু দূরে পিছে পিছে লুঙ্গি পরা আরো একজনও যাচ্ছে। ভিডিওর ব্যক্তির পরনের লুঙ্গি ও জামা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ২০ এপ্রিল তাকে থানায় ডেকে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মজিদের সহযোগিতায় সন্তানকে হত্যার ঘটনা অকপটে স্বীকার করে জাহাঙ্গীর। পরে মজিদকেও গ্রেফতার করা হয়। মজিদ নিহত আইসারের বাবা জাহাঙ্গীরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। সন্তানকে খুনের জন্য জাহাঙ্গীর তাকে ভাড়া করেছিল।

তিনি বলেন, আইসার ইয়াবা সেবন করত, এই সুযোগটা কাজে লাগাতে মজিদকে পরামর্শ দেয় জাহাঙ্গীর। সে অনুযায়ী একটি ওষুধের দোকান থেকে ইয়াবার মতো দেখতে কিছু ট্যাবলেট কেনে মজিদ। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মজিদ এই ট্যাবলেটকে ইয়াবা বলে কৌশলে আইসারকে তার সঙ্গে যেতে বলে। আইসার ইয়াবা সেবনের আশায় মজিদের পেছনে পেছনে বালুর মাঠ ধানক্ষেতে যায়। তাদের পেছনে একটু দূরত্বে ছিল জাহাঙ্গীর। আইসারকে সেখানে নেয়ার পর গলা টিপে এবং ধানক্ষেতের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে আসে মজিদ এবং অনতিদূরে দাঁড়ানো জাহাঙ্গীরকে বলে, ‘কাজ শেষ’। ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগেও একবার আইসারকে হত্যার পরিকল্পনা করে জাহাঙ্গীর ব্যর্থ হয়েছিল বলে মজিদ পুলিশকে জানিয়েছে।

ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, হিলুকে আসামি করে মামলা করলে নির্বিঘ্নে তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে এবং বেশ শায়েস্তা হবে। এই পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল জাহাঙ্গীর।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানার এসআই শামসুল হক সরকার বাদী হয়ে ভিন্ন একটি এজহারে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশ পরিদর্শক কাজী আবুল কালাম।

মানবকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.