195047

এমন পুলিশই চাই

পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে যখন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল, তখন ব্যতিক্রমী এক নজির স্থাপন করেছেন ট্রাফিক পুলিশের রমনা জোনের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম সুমন। নিজের জীবন দিয়ে হলেও অনিয়ম না করার ঘোষণা দিয়ে জরিমানার মামলা গ্রহণে একজন উপসচিবকে বাধ্য করেছেন তিনি।

জানা যায়, অবৈধভাবে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে রেখে সন্তানদের মাঠে খেলা ও খাওয়ার সুযোগ দিচ্ছিলেন কয়েকজন অভিভাবক। এতে যে যানজট তৈরি ও অন্যদের কষ্ট হচ্ছিল, সেদিকে তাদের খেয়ালই ছিল না। এমনকি কষ্টের কারণে ট্রাফিক পুলিশকে গালাগালি করছিলেন সাধারণ মানুষ।

এ অবস্থায় সাধারণ পোশাকে নিজের বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিতে যাওয়া পরিদর্শক সুমন ওয়ারলেসে দায়িত্বরত সহকর্মীদের ডেকে এনে কয়েকটি গাড়িকে ৯০০ টাকা করে জরিমানা করেন; কিন্তু বাদ সাধেন প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয়দানকারী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পিএস ওমর চাঁন বণিক।

তিনি সুমনকে হুমকি দিয়ে জরিমানার মামলা এড়াতে চাইলেও সাহসী সুমন নিজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যে কোনো হুমকি উপেক্ষা, এমনকি পরকালে জবাবদিহির কথা বলে নিজে লাশ হতে রাজি হতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত উপসচিবের ব্যক্তিগত গাড়িটিকে জরিমানা করেন। তার মতো সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা কেবল ট্রাফিক পুলিশেরই নয়, গোটা পুলিশ বিভাগ, সর্বোপরি দেশের সম্পদ।

দায়িত্ব পালনে নিবেদিতপ্রাণ এই পুলিশ কর্মকর্তার সৎ মানসিকতার কারণে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে এমন সাহসীদের যেন পরবর্তী সময়ে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিতে চাই।

দেশে প্রয়োজনীয় আইনের অভাব নেই; কিন্তু আইন মান্য ও মানতে বাধ্য করার পরিস্থিতি নেই বললেই চলে। ট্রাফিক পরিদর্শক ও উপসচিবের এ ঘটনা থেকে আইন ভঙ্গকারী ও প্রয়োগকারীরা শিক্ষা নিলে অনিয়ম যেমন কমে আসবে, তেমনি মানুষের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি হবে। উল্লিখিত ঘটনা থেকে দুটি শিক্ষা নেয়া যায়- প্রথমত, সুমনের বক্তব্য থেকে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা।

দ্বিতীয়ত, উপসচিবের কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিতে হবে, পদ-পদবির ব্যবহারও অনেক সময় মানুষকে লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারে না। সংশ্লিষ্ট ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে সুমন বলেছেন, এটি কোনো বাহবা পাওয়ার জন্য নয়, বরং নিজের সহকর্মীদের সচেতন করার জন্য। আশাবাদী হওয়ার মতো ঘটনাটি থেকে দায়িত্বশীল পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সচেতন হবেন এবং দায়িত্বশীল মহল উভয় পক্ষের জন্য পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা নিলে তা সমাজের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

যুগান্তর

পাঠকের মতামত

Comments are closed.