পুরনো কারাগারে ডিজিটাল মঞ্চ, সুইমিংপুল ও সিনেপ্লেক্স
একসময় যে কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশ ঘেঁষে চলতেও মেপে মেপে পা ফেলতে হতো, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে নগরবাসীর ঘোরাঘুরি ও বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণকেন্দ্র বানাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। যেখানে থাকবে ডিজিটাল মঞ্চ, সুইমিংপুল থেকে সিনেপ্লেক্স পর্যন্ত। এমনকি থাকবে অ্যাকুসটিক সাউন্ড সিস্টেম ও ফুড কোর্টও।
এই বিশাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কারাগারের প্রায় ৩৬ দশমিক ২১ একর জমিকে নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কারা অধিদফতর। মোট ৫৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রস্তাবিত ব্যয়ের প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি সময় থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নাজিমউদ্দিন রোড থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এ কারাগার অব্যবহৃত থেকে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরিকল্পিত ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্টদের। তারই নির্দেশনা অনুযায়ী কারা অধিদফতর পুরনো এ কেন্দ্রীয় কারাগারকে নগরবাসীর বিনোদন কেন্দ্র বানানোর উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে সেখানে জাতীয় চার নেতার স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বাঙালি জাতির ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার স্মৃতি এবং ঢাকার মধ্যযুগের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি এতে থাকবে বিনোদন, কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য নানা আয়োজন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে থাকবে গ্যালারি, চিত্রকর্ম, আর্কাইভ ফিল্মস, রিফ্লেকশন পুল, মন্যুমেন্ট সংগ্রহ ও প্রাচীন ধাতব মুদ্রার প্রদর্শন।
নজরকাড়া ইনটেরিয়র নকশার পাশাপাশি নির্মিত হবে বাণিজ্যিক ভবন কাম মাল্টিপারপাস হল, ডিজিটাল মঞ্চ, চকমার্কেট, সুইমিংপুল, বিশাল সিনেপ্লেক্স ও অ্যাকুসটিক সাউন্ড সিস্টেম। যেমন থাকবে ফুড কোর্ট, তেমনি থাকবে আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থা, প্রধান জেলগেটে বিশাল ক্যানোপি, অভ্যন্তরীণ ওয়াকওয়ে ও বাইসাইকেল লেন। পুরো ফাউন্ডেশন ঘিরে থাকবে অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রকল্পের আওতায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার নবরূপে সাজানো হবে। ঢাকাবাসীর বিনোদনের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। পুরনো জেল গেটের পুরো সীমানাপ্রাচীর পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, নাটক মঞ্চায়ন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কারা অধিদফতরসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নাজিমউদ্দিন রোডের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় সবুজঘেরা একটি দৃষ্টিনন্দন জায়গা হবে। যেটা ইট-কাঠের নগরীতে হয়ে উঠবে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য একটি মনোরম সুন্দর আদর্শ জায়গা।