193642

২১৩ টি দেশের ১০ লাখ মানুষ ব্যবহার করছে বাংলাদেশের রিটস ব্রাউজার

দেশের শীর্ষ স্থানীয় তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান রেইজ আইটি সলিউশনস্। প্রতিষ্ঠানটি জন্ম থেকেই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড হয়ে উঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে এবং অতি অল্প সময়ে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সংস্থা বেসিসের এওয়ার্ড এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত এশিয়ার অস্কারখ্যাত অ্যাপিকটা মেরিট এওয়ার্ড পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়, তাদেরই উদ্ভাবিত প্রজেক্ট রিটস ব্রাউজার। এসব অর্জনের পিছনে যার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা এবং সৃজনশীলতা পরতে পরতে জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং এমডি কে এ এম রাশেদুল মাজিদ। এই সফল তথ্য-প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সিনিয়র রিপোর্টার এম এ আহাদ শাহীন

প্রশ্ন : প্রথমেই জানতে চাই, আপনার অনেক উদ্যোগ দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে রিটস ব্রাউজার এত অল্প সময়ে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠার পেছনে কারণ কী?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : প্রথমে বলতে চাই, কিভাবে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে মানুষের সব ধরনের সেবা দেওয়া যায়, সেই বিষয়টি আমার মাথায় সবসময় কাজ করতো। যেন অনেকগুলো অ্যাপসের প্রয়োজন না হয় এবং মোবাইল ফোনের চার্জ ও ডাটা খরচ কমানো যায়, সেই থেকে পথ খোঁজা শুরু করি। ফলশ্রুতিতে, আমি রিটজ ব্রাউজারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করি।

যার একটা মোবাইল আছে, তারই ইনফরমেশনের প্রয়োজন। যার ইনফরমেশন প্রয়োজন, তার ব্রাউজারেরও প্রয়োজন। যেটা তাকে সব ধরনের সুবিধা দিতে সক্ষম। আমরা এই ব্রাউজারটিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, সবধরনের সুুযোগ-সুবিধাসম্বলিত করার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাই। নেট ব্রাউজিং থেকে শুরু করে কেনাকাটাসহ জীবনের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রথমে থাকবে রিটস ব্রাউজার। তাই রিটস ব্রাউজার এত অল্প সময়ে পৃথিবীর ২১৩ দেশের ১০ লাখেরও বেশী মানুষ রিটস ব্রাউজারটি ব্যবহার করছে। যার প্রমাণ মাত্র ৭ মাসে গুগল প্লে স্টোর রেটিং ৪.৫ এবং ১ মিলিয়ন ডাওনলোড।

প্রশ্ন : কিভাবে রিটস ব্রাউজারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করেন?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : পৃথিবীর সব শ্রেণীর মানুষ একটি ব্রাউজারের মাধ্যমে সকল প্রয়োজনীয়তার সমাধান পেতে পারে বা “একের ভিতরে সব” সেই বিষয়টি লক্ষ্য রেখে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আমরা এই ব্রাউজারটি গুগল প্লে স্টোরে সাবমিট করি। খুব অল্প সময়ে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশী সাড়া পাই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের এখনও কোনো অফিসিয়াল উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হয়নি। তারপরেও আমাদের ওয়ান মিলিয়ন ডাউনলোড হয়ে গেছে। আমরা শুরু করার তিন/চার মাস পরে লক্ষ্য করলাম, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগামী দেশ ভারতের প্রচুর ব্যবহারকারী রিটস ব্রাউজারটি ব্যবহার করছে। এরপর থেকে আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লক্ষ্য করে কন্টেন্ট সরবরাহ করায় প্রতিদিনই ভারতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু ভারতই নয়, আমরা এখন পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রেসহ সকল দেশের মানুষের সাধারণ পছন্দ-অপছন্দকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক কন্টেন্ট সরবরাহ করছি।

প্রশ্ন : ব্যবহারকারীরা কেন রিটস ব্রাউজার ব্যবহার করছে বা কেন করবে?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : বিভিন্ন কন্টেন্টের পাশাপাশি রিটস ব্রাউজারে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে তা হচ্ছে. ব্যবহারকারীরা ভিডিওগুলো উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে ডাউনলোডের সুবিধাও পাবে। ডাউনলোডের জন্য বিকল্প কোনো অ্যাপসের প্রয়োজন হবে না। একই সাথে এই ব্রাউজারে পাওয়া যাবে লাইভ টেলিভিশন। ২৫ টার ওপরে লোকাল এবং আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও। আমরা যখন দেশের বাহিরে যাই, তখন আমরা নিজ দেশকে মিস করি। আমি চায়নায় গেলাম তখন লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের খবর, রেডিও ও টেলিভিশন দেখার জন্য কোনো মাধ্যম পাওয়া যাচ্ছে না এবং পাওয়া গেলেও অনেক ডাটা, চার্জ ও সময় নষ্ট হচ্ছে। যখন আপনার মোবাইলে রিটস ব্রাউজার থাকবে তখন আপনি আপনার লোকালিটি নিয়ে ট্রাভেল করতে পারবেন। মানে দেশের সকল অনলাইন পোর্টাল, রেডিও এবং টেলিভিশন চলে আসবে আপনার হাতের মুঠোয়। এই কারণেই অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে রিটস ব্রাউজার।

প্রশ্ন :  কিভাবে, কখন এবং কেন  রিটস ব্রাজারের চিন্তা মাথায় আসলো?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : শুরুর দিকে যখন আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতাম তখন কাস্টমাইস সলিউশন দিতাম। আমাদের অস্ট্রোলিয়া, ইউএসএ, কানাডা কালায়েন্টছিলো। ওরা আমাদের কাজ দিতো, আমরা ডেভেলাপ করে ডেলিভারি দিতাম। ওরা ছিলো মূলত সফটওয়ার কোম্পানী। আমরা যে কাজটা করেছি দিনশেষে তার কোনো স্বীকৃতি থাকতো না। কারণ আমাদেরকে মাধ্যম হয়ে কাজগুলো করে দিতে হতো। পাঁচ ছয় বছর পর লক্ষ্য করলাম, আমাদের পোর্টফোলিও দেখানোর মত কোনো-কিছুই তৈরী হয়নি। ওটা নিয়ে আমরা একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম।

পরে ভাবলাম আমাদের এমন কিছু করা উচিত, যেটা দিয়ে আমরা আমাদের নিজস্বতার জায়গা এবং দেশের তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বিপ্লব তৈরি করতে পারবো সাথে সাথে  স্বকীয়তাও বজায়ে  রাখতে পারবো। তারপর আমরা একটা আরএনডি টিম গঠন করি এবং সার্ভিস রিলেটেট কিছু ইনোভেটিভ প্রজেক্টে হাতে নেই।

এর মধ্যে ২০১৩ সালে এ্যাড নেটওয়ার্ক, যা আমরা বাংলাদেশে প্রথম চালু করি।  তা হলো, অকসন বেইজড প্রগ্রামেটিক এ্যাডভারটাইজিং সিস্টেম। অর্থাৎ কোনো বিজ্ঞাপন দাতা কোনো পাবলিসারে বিজ্ঞাপন দিতে হলে তাকে আগে অকসন করে তারপর বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এটা চালুর পরেই আমরা বিশ্বের ৩৬টি দেশের সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে সক্ষম হই। যা আমাদের দেশের বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখে।

ওইখান থেকে আমাদের উপলব্ধি হলো আমরা যদি সার্ভিস ওরিয়েন্টেড কাজ করি তাহলে আমাদের স্বকীয়তার জায়গাটাও থাকে, একই সঙ্গে রেভিনিউ আসে। অন্যদিকে আউটসোর্সিং বেইজড কাজ করা খুব জটিল ছিলো। কারণ আউটসোর্সিং মডেলে বিজনেসটা ছিলো এরকম, আমরা যাদের কাজ করতাম তারা ফল-ডাউন করলে আমরাও ফল-ডাউন করতাম। অর্থাৎতাদের কাজ থাকলে আমরা কাজ করতাম, তাদের কাজ না থাকলে আমরাও বসে থাকতাম। অনেকটা আমাদের গার্মেন্টস শীল্পের মত। এরপর আমরা  সার্ভিস ওরিয়েন্টেড মডেলের মাধ্যমে একটি ডিডিকেটেড রেভিনিউ সিস্টেম তৈরী করতে সক্ষম হই। ফলে স্বকীয়তার জায়গাতেও আমাদের একটা অবস্থান তৈরী হয়।

আমাদের সবসময় ইচ্ছা থাকে প্রতিবছরই ইনোভেটিভ কিছু করার। কাস্টমাইস সলিউশনস্, সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের পাশাপাশি প্রতিবছরই কিন্তু আমরা কিছু ইনোভেটিব প্রজেক্ট হাতে নিই। যেটা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড একটা এক্সটারনাল বিজনেসে তৈরি করে। ব্যবহাকারীদের এখন আমরা চারটি সেবা দিচ্ছি। এর মধ্যে দুইটি সার্ভিস শুধু মাত্র বাংলাদেশে বাকি দুইটি  বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করছে।

প্রশ্ন :  কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে, সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : আপনি যদি চায়নার প্রযুক্তিখাতের দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন একটি মাত্র অ্যাপস, যার নাম উইচ্যাট। এই অ্যাপসটি এতটাই জনপ্রিয় যে, বর্তমানে ফেসবুক ও টুইটার থেকেও এগিয়ে আছে এবং এটি সরকারের পৃষ্টপোষকতায় চলে। ওই একটা অ্যাপস দিয়েই তাদের যোগাযোগ থেকে শুরু করে যাবতীয় পেমেন্ট সম্পন্ন হয়।

সরকার আমাদেরকে এরকম পৃষ্টপোষকতা দিলে, আমরাও বাংলাদেশে এরকম প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারবো। যার মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বে অনলাইন কমিউনিকেশন ও পেমেন্ট সেবা দিতে পারবো।

ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সহজেই তথ্য এবং সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আর সরকারের এসব কার্যক্রম আরো সহজে, আরো দ্রুততার সঙ্গে এবং আরো নিরাপদে দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে রিটস ব্রাউজারের মাধ্যমে। আর এভাবেই ‘ভিশন-২০২১’ এর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে দেশ, কারণ ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসেই তারা প্রয়জনীয় সকল তথ্য সহজেই পেয়ে যাবে।

এছারা অনলাইন মার্কেটিং এর নামে গুগল এবং ফেসবুক বিপুল পরিমান অর্থ এইদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। রিটস ব্রাউজারের প্রসার ঘটানো গেলে এটা শুধুমাত্র বৈদেশিক মূদ্রা পাচার রোধই করবে না বরং যেহেতু এই অ্যাপসের ব্যবহারকারী সারা দুনিয়া বিস্তৃত, তাই এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।

টেলিকম কোম্পানিগুলো যেমন ফেসবুক, ইউটিউবের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট প্রদান করে থাকে, তেমনি আমরা মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম আমাদেরও যেন এরকম একটা সুবিধা দেওয়া হয়।  যেহেতু এটা দেশীয় উদ্যোগ। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, টেলিটক যেহেতু দেশীয় কোম্পানী, তাই দেশীয় উদ্যোক্তারা এখান থেকে একটা বিশেষ সুবিধা পাবে।

প্রশ্ন : দেশের তথ্য-প্রযুক্তিখাতে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কোনটি বলে আপনি মনে করেন?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : আমরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যা দেখছি তা হলো বিভিন্ন উৎসবে আমাদের ইউজার ফলডাউন করে। কারণ তারা ঢাকা থেকে চলে যায়। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ঢাকার বাহিরে ইন্টারনেটের অপ্রতুলতা। আমি মনে করি, দেশের তথ্য-প্রযুক্তির নীতিনির্ধারকরা প্রযুক্তিখাতকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় সম্পদ অনেক কম। তাই তাদের প্রচেষ্টা থাকা স্বত্বেও দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে না। তারপরও আমি বলবো, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ইন্টানেটের ধীরগতি। যদিও দেশের প্রধান প্রধান শহরে ইন্টারনেট মোটামুটি শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু প্রত্যান্ত অঞ্চলে এখনো ইন্টারনেট সহজলভ্যতা হয়নি। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বিপ্লব সৃষ্টি হবে এবং দেশ বাস্তবেই ডিজিটাল হবে।

প্রশ্ন : দেশের মানুষ বিশেষকরে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের প্রতি আপনার চাওয়া কী ?

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : দেশীয় ব্রাউজার হিসেবে রিটস ব্রাউজার ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। যেন মানুষ জানে আমরাও পারি। আমাদেরও ব্রাউজার আছে যেটা হচ্ছে বিশ্বমানের। বিশ্বের ২১৩ টি দেশে ব্যবহার হচ্ছে এই ব্রাউজার। দেশের সকল মানুষ এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে এর সর্বোচ্চ সেবা নিলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

প্রশ্ন : মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আপনার উজ্জল ভবিষ্যৎ ও সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।

কে এ এম রাশেদুল মাজিদ : আপনাকেও ধন্যবাদ এবং আপনার মাধ্যমে সকল পাঠককে ধন্যবাদ।

রিটস ব্রাউজারটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন :

 

আর দেরী না করে কিওআর কোডটি স্ক্যান করুন, আর উপভোগ করুন স্বদেশী  রিটস ব্রাউজার, এ এক নতুন অভিজ্ঞতা!!!!

পাঠকের মতামত

Comments are closed.