192079

বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল তাহমিনা

ডেস্ক রিপোর্ট :  বাবার হাত ধরে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া হলো না তাহমিনার। বাম হাতে চোখ মুছে আর ডান হাতে কলম ধরে আজ বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই বাংলা পরীক্ষায় অংশ নিত হয়েছে তাহমিনাকে।

স্কুল জীবনের প্রতিটি পরীক্ষাতেই বাবার হাত ধরে যেত তাহমিনা। কিন্তু বিধির অমোঘ বিধানে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যেতে হলো তাহমিনার।

এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর মুন্সী গ্রামে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহমিনার বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ছিলেন একই ইউনিয়নের মধ্যেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। এক বছর আগে তিনি দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতেই ছিলেন তিনি।তার বড়মেয়ে তাহমিনার আজ এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা।

তাহমিনা পরীক্ষা দিতে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। মেয়েকে দোয়া করে বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তোফাজ্জেল হোসেন। বাবা হারানোর ব্যথা নিয়ে শোকাতুর তাহমিনা চোখ মুছতে মুছতে উপজেলা সদরের কাজী জেবুন্নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা অংশ নিল।

খবর পেয়ে ছুটে এলেন ইউএনও পূরবী গোলাদার। তাহমিনাকে সান্তনা জানাতে গিয়ে ভাষাহীন হয়ে তিনিও সজল চোখে জড়িয়ে ধরলেন তাহমিনাকে। তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেন যাতে নির্বিঘ্নে তাহমিনা পরীক্ষা অংশ নিতে পারে।

বাবুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাহমিনার বাবার অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তাঁর খোজখবর রাখছিলাম। আজ মেয়ের পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে তিনি মারা যান। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তাহমিনা। তাকে পরীক্ষা দিতে উৎসাহ দেই।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) পূরবী গোলদার জানান, পরীক্ষার দিনে তাহমিনার বাবার মৃত্যু মর্মান্তিক ঘটনা। খবর পেয়েই ওই কেন্দ্রে গিয়ে তাহমিনাকে সান্ত¦না জানাই।পরীক্ষা দিতে তার যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেটি দেখতে সকলকে বলেছি।

বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে তোফাজ্জেল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.