189353

‘মা এই ভাতা ভুলে যাও, ক্ষমা করে দাও’ (ভিডিও)

ডেস্ক রিপোর্ট : একটা বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। কখনও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কখনও ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়, কখনও সমাজসেবা অফিস বা স্থানীয় কমিশনার কার্যালয়। সন্তানদের হাত ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা-স্কুটার, বাসে চড়ে জ্যাম ঠেলে তিনি মাসের পর মাস ঘুরে বেড়িয়েছেন ওইসব দপ্তরে। তার প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিভাতা। কিন্তু আজও সে ভাতা মেলেনি গুণি ভাস্কর এবং মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর।

.

বর্তমানে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে।

হাসপাতালে ভর্তির দুদিন আগেও খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি ভাতাটা হল কিনা।

জানা যায়, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পান ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী। এরপর ভাতাটি পাওয়ার চেষ্টা করে গেছেন তিনি। ছেলে কারু তিতাস বা মেয়ে ফুলেশ্বরীকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে এ অফিস সে অফিস ঘুরে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসতেন। কোনও আশার আলো দেখতে পেতেন না।

মেয়ে ফুলেশ্বরী বলেন, কখনও বলেছে মায়ের নামের এটেসটেশন লাগবে, কখনও নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট আবার কখনও কোনও কারণ ছাড়াই কর্মকর্তারা ফিরিয়ে দিছেন তাদের। একটা সময় এসে কেউ আর কোনও সদুত্তর দিতে পারছিলেন না কেনো তার মায়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটি হচ্ছে না।

আক্ষেপ আর ক্ষোভ নিয়ে ছেলে কারু তিতাস বলেন, মায়ের কোনও গাড়ি নাই। অটো টেম্পুতে এ অফিস সে অফিস ঘুরেছেন। একসম আমি বলেছি ফরগেট ইট, ফরগিভ ইট (ভুলে যাও, ক্ষমে করে দাও), মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কোনও ভিক্ষা না।

কারু তিতাস বলেন, এখন মা জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষণে। তারপরও তার ভাতাটি মিললো না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ যদি হয় প্রিয়ভাষিণীর মতো একজন দেশ বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধার অবস্থা, তাহলে সারা দেশের অবস্থা কি বোঝা যায়। বর্তমান সরকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সবচেয়ে বেশি করেছে তাই দাবিটাই বেশি।

কেন কোথায় কিভাবে প্রিয়ভাষিণীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানের ভাতাটি আটকে আছে? তা খোঁজতে গিযে বেরিয়ে আসে আর এক জটিলতা—

শনি ও বোববার কথা হয় ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর ভাতাটি এখন যে সমাজ সেবা কর্মকর্তার হাতে সেই মহিউদ্দিন আহমেদের সাথে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বরাদ্দ হতে দেরি হয়েছিলো। কিন্তু প্রিয়ভাষিণীর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার দুদিন পর জেলা প্রশাসন তার বরাদ্দটি ছেড়ে দিয়েছে। এরপর তিনি (মহিউদ্দিন আহমদ) টানা ১০/১২ দিন চেষ্টা করে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ধরে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।

এখন এই বরাদ্দ প্রিয়ভাষিণীকে তুলতে হবে সরকার নির্ধারিত সোনালী ব্যাংকের তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট বা উত্তরা শাখা থেকে। কিন্তু ওসব এলাকায় প্রিয়ভাষিণীর কোনও ব্যাংক একাউন্ট নেই। আছে সোনালী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায়। যা উত্তরা শাখায় ট্রান্সফার করতে পারলে ভাতাটি পেতে পারেন তিনি।

কিন্তু আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকা একটা মানুষের ব্যাংকিক প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়।

মহিউদ্দিন আহমদ জানান, তারা রোববার ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর হাতে তার ভাতার বইটি দিয়ে আসতে চাচ্ছেন। সেই সাথে ব্যাংকিং কাজ কিভাবে শেষ করা যায় তা নিয়েও নিজেরা সহযোগিতা করবেন।

যোগাযোগ করলে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, তিনি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে ভাতাটি দ্রুত পাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সূত্র- পরিবর্তন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.