189230

ওড়িশাকে হারিয়ে রসোগোল্লা জয় পশ্চিমবাংলার

রসগোল্লা কার? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পর বাংলার সম্পদ বলেই ঘোষিত হল বাঙালির প্রিয় রসগোল্লা ৷ ওড়িশাকে হারিয়ে, রসগোল্লার জিআই রেজিস্ট্রেশন পেল পশ্চিমবঙ্গ। জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন জানাল, রসগোল্লা বাংলার নিজস্ব উৎপাদন।

ছানার বলের পেটে রসের পুকুর ৷ রসে টুসটুসে ছানার স্পঞ্জি অবতার ৷ জিভে দিলেই স্বর্গীয় অনুভূতি ৷ বিজয়া হোক বা বিয়ে, শোকের বাড়ি হোক বা পেট ভরানো বাঙালির এক এবং অদ্বিতীয় পছন্দ রসগোল্লা ৷ মিষ্টি প্রিয় বাঙালির এহেন প্রিয় মিষ্টির স্বত্ত্ব চেয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল প্রতিবেশী ওড়িশা ৷ দুবছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াইয়ের পর জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন দফতরও শিলমোহর দিল পশ্চিমবঙ্গের দাবীতে, ‘রসগোল্লার জন্ম বাংলায়, রসগোল্লা বাংলারই ৷’

প্রাচীন পুঁথি ও ইতিহাসের তথ্য দিয়ে ওড়িশাকে মাত করল বাংলা। ২০১৫ সালে রসগোল্লার জন্য ভৌগলিক সূচকের দাবি করে ওড়িশা। যা পেটেন্টের সমতুল্য। ওড়িশার যুক্তি ছিল, একশো বছর ধরে জগন্নাথ মন্দিরে রসগোল্লা ভোগের রীতি আছে। দুধ কেটে যে ছানা তৈরি হয় তা অন্য হিন্দু মন্দিরে ব্রাত্য হলেও জগন্নাথ মন্দিরে দীর্ঘদিনের পরম্পরা।
ইতিহাস বলছে, এই বাংলায় ১৮৬৪ সালে নবীনচন্দ্র দাস প্রথম রসগোল্লা তৈরি করতে শুরু করেন। ১৮৬৮ সালে বর্তমান রসগোল্লায় আত্মপ্রকাশ। এর স্বীকৃতি দিয়েছেন ইতিহাসবিদরাও। রসগোল্লার ছানা সম্বন্ধে কিছুই জানে না ওড়িশা। এই ছানা নবীন দাসের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফল। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসতেন তাঁরা ছানায় কি মেশাচ্ছেন যাতে রসগোল্লা ভেঙে না যায়। তাঁদের রসগোল্লায় সুজি বা ময়দার ভেজাল নেই।রসগোল্লা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ছিল, অবিভক্ত বাংলা-বিহার-ওড়িশায় রসগোল্লার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আলাদা করে রসগোল্লা নিয়ে ওড়িশার দাবি কখনই বাস্তবসম্মত নয়। কেউ কেউ তো দাবি করেছেন, রসগোল্লা নাকি প্রথম তৈরি হয়েছিল এই বাংলারই নদিয়ায়।

সেই দাবী মতোই অবশেষে স্বীকৃতি পেল রাজ্যের দাবী ৷ অবশেষে রসের লড়াইয়ে শেষহাসি হাসল বাংলাই। বাঙালির প্রিয় তীর্থস্থানের ভোগে রসগোল্লা থাকার সঙ্গে ওড়িশায় রসগোল্লার জন্ম এমন ভাবার কোনও কারণ নেই ৷ এদিন জানিয়ে দিল জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ডিপার্টমেন্ট ৷ সীতাভোগ এবং মিহিদানার পর সরকারিভাবে স্বীকৃত রসগোল্লা বাংলারই ৷ বাঙালির পাতে স্বমহিমায় রসগোল্লাকে পেয়ে মিষ্টিমুখ রাজ্যবাসীর। বাংলা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরে খুশি মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরাও।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.